আ.লীগের শুদ্ধি অভিযানে নজর রাখছে বিএনপি

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:৩৩

বোরহান উদ্দিন, ঢাকটাইমস

দলের যত বড় নেতাই হোক না কেন, দুর্নীতি ও অপকর্ম করলে কেউ ছাড় পাবে না- এই ঘোষণা দিয়ে দল ও অঙ্গসংগঠনে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই উদ্যোগকে তেমন একটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না। এটাকে লোক দেখানো অভিহিত করে তাদের ভাষ্য, আগে শুদ্ধি অভিযান চলুক, তারপর মূল্যায়ন করবেন তারা।

আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযান তেমন একটা আমলে না নিলেও বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা সরকারি দলের এই কার্যক্রমের দিকে নজর রাখবেন। শুদ্ধি অভিযানের গতিপথ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে তারা তা দেখতে চান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা দুর্নীতি ও অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার যে কথা বলছেন তা শুধু কথা নয়, বাস্তবে এর প্রতিফলন হবে বলে প্রত্যাশা করে বিএনপির নেতারা বলেন, চুনোপুঁটি নয়, ধরতে হবে দলের দুর্নীতিপরায়ণ রাঘব-বোয়ালদের। একই সঙ্গে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ চান বিএনপির নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের কাছে আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এগুলোর তো কোনো দাম নেই। দেশে রাজনীতি আছে? কেউ ভয়ে কথা বলে না। একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলে না। সেখানে কে কী করল না করল এতে কিছু যায় আসে না।’

প্রায় এক যুগ ধরে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকায় দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অপকর্ম, দুর্নীতির অভিযোগ আছে খোদ দলের ভেতরেই।  চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, প্রভাব বিস্তারসহ নানা কারণে কোনো কোনো সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়েছেন কোন্দলে, খুনোখুনিতে। এতে হতাহতের ঘটনাও কম নয়।

সম্প্রতি এসব বিষয় নিয়ে একাধিকবার ঘরোয়া বৈঠকে  ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন  আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজিতে জড়িত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে চাঁদাবাজিসহ বেশ কিছু অভিযোগে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। যুবলীগের বেশ কিছু নেতার নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন।

এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ডিসেম্বরে হতে যাওয়া দলের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও এর আওতায় পড়বে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, ইয়াবা ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে দলের কেউ জড়িত থাকলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। অনেক নেতার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছে। দলীয় ব্যবস্থার বাইরেও কারও কারও বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের এই উদ্যোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটা তাদের (আওয়ামী লীগ) অভ্যন্তরীণ বিষয়। অপেক্ষা করব তারা যে কথা বলেছে সেটার কতটুকু বাস্তবে মিল পাওয়া যায় সেটা দেখার জন্য। এরপর এ নিয়ে মূল্যায়ন করা যাবে।’

আওয়ামী লীগের এমন উদ্যোগকে দূষিত সাগর থেকে বালতি দিয়ে ময়লা পরিষ্কারের সঙ্গে তুলনা করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় সরকারি দলের প্রায় সবাই দুর্নীতি ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন তিনি। ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকায় সবাই কমবেশি দুর্নীতি, অন্যায়-অপকর্মে জড়িত। যে কারণে এক সাগর নষ্ট পানি থেকে শোভন-রাব্বানীর মতো এক বালতি পানি তুললে পুরো পানি পরিষ্কার হবে এটা ভাবার সুযোগ নেই। তারপরও দেখি কী করে শেষ পর্যন্ত।’

তবে আলালের দাবি- বয়সে আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক কম হলেও দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান বিএনপির আমলেই শুরু হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন তখন তার সঙ্গে কূটনৈতিক সফরে যাওয়া খোরশেদ নামের এক যুবদল নেতা একটা ভিসিআর অবৈধভাবে বিদেশ থেকে নিয়ে আসছিলেন। এই খবর জেনে তাকে আজীবনের জন্য যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।’

শোভন-রাব্বানীর ঘটনায় ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবদিন ফারুক। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘এক-এগারোর পর থেকে যারা টানা ক্ষমতায়, দুর্নীতি তো তারাই করবে এবং করছে।  শোভন-রাব্বানীর ঘটনাই তো প্রমাণ করে দুর্নীতি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই ছোটখাটো দু-একটা ঘটনার পরই ধন্যবাদ দেয়া যায় না। বরং দেখতে চাই রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগে অ্যাকশন হোক তারপর মূল্যায় করা যাবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/মোআ)