রাব্বানীকে সরাতে প্রয়োজনে আদালতে যাবেন নুর

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:৪৮ | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ডাকসুর ভিপি ও জিএস (ফাইল ছবি)

চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া গোলাম রব্বানীকে ডাকসুর জিএস এর পদ থেকে সরাতে প্রয়োজনে আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলে জানিয়েছেন ভিপি নুরুল হক নুর৷

বুধবার জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা জানান। ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় আসা বেশ কিছু প্রশ্নেরও জবাব দেন তিনি৷

একজন পাঠকের প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, ‘গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে, নৈতিক স্খলনের জন্য তাকে সংগঠন থেকে পদচ্যুত করা হয়েছে৷ ছাত্রলীগ যেখানে এ ধরনের অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়নি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রশ্রয় দেয়ার প্রশ্নই উঠে না৷ এটা নৈতিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমর্থন করতে পারে না৷ আর যদি করেও থাকে এটি খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে৷ সে জায়গা থেকে আমরা তার পদত্যাগ চেয়েছি৷ ডাকসুর অন্যদের সঙ্গে কথা বলে (রব্বানীকে সরাতে) আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেব, উপাচার্যকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি৷’

রাব্বানীকে ডাকসু থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানোর পর ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা নুরকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন৷ এ প্রসঙ্গে নুর বলেন, ‘দাঁতভাঙা জবাব দেবেন বলে তিনি উগ্র আচরণ করেছেন, উগ্র মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন৷ আমি কেন চুপ থাকব? অন্যায়-অনিয়ম দেখলে সেখানে ডাকসু থেকে চুপ থাকার প্রশ্নই উঠে না।’

রাব্বানীকে ডাকসু থেকে সরে না গেলে আদালতে যাবেন কি না, এমন প্রশ্নে নুর বলেন, ‘পরিবেশ পরিস্থিতি...আশা করি, আমি শুনেছি যে তিনি পদত্যাগ করবেন৷  আর যদি পদত্যাগ না করেন তবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনে আদালত পর্যন্ত যাব৷ তবে আমার মনে হয় সেটা করতে হবে না৷ কারণ ডাকসুর এক্সিকিউিটভ মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে৷ উপাচার্যের একক ক্ষমতা দেয়া আছে, তিনি চাইলে এমন অভিযোগে বা যে কেউ দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে ব্যবস্থা নিতে পারবেন৷ উপাচার্য নৈতিক জায়গা থেকে পিছুপা হবেন না বলে আমি মনে করি।’

রব্বানী ডাকসু থেকে পদত্যাগ না করলে একজন চাঁদাবাজের সঙ্গে কাজ করা লজ্জার হবে কি না, একজন পাঠকের সেই প্রশ্নে নুর বলেন, ‘নৈতিকভাবে তার সঙ্গে কাজ করা আমার সম্ভব নয়, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি, ডাকসুর অন্যদের জানিয়েছি, এখন আমাদের একটা ব্যবস্থা তো নিতেই হবে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের জিএস হবে একজন চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ড থেকেও তিনি চাঁদাবাজি করবেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করবেন এটা কখনোই মেনে নেয়া যায় না।’

শোভন ও রব্বানীকে সরিয়ে দেওয়ার পর যাদের হাতে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব এসেছে তারা ডাকসুকে সহযোগিতা করবেন বলেও আশা করছেন নুর৷

মর্যাদাবান ব্যক্তি হওয়ার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শোভান সিনেট থেকে পদত্যাগ করছেন মত দিয়ে নুর বলেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ, আশা করি গোলাম রব্বানীও তাকে (শোভন) অনুসরণ করবেন।’

ডাকসুর ব্যর্থতা স্বীকার করলেন ‍নুর

শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যা সমাধানে ডাকসু এখনো ভূমিকা রাখতে পারেনি স্বীকার করে এজন্য কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে সংখ্যাগিরষ্ঠ ছাত্রলীগকে দায়ী করেন নুর৷ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় গণতন্ত্র চর্চার ঊর্বর ভূমি, সেখানে যে ভিন্নমতের মানুষের ওপর দমনপীড়ন, নির্যাতন চলে, যখন যে দল সরকারে থাকে তাদের ছাত্র সংগঠনের বাইরে অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে কাজকর্ম করতে পারে না৷’ 

‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোর করে মিছিল-মিটিং করানো হয়৷ সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভেবেছিল ডাকসু নির্বাচনের পরে নেতরা এ নিয়ে কাজ করবেন৷ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জোর করে মিছিল মিটিংয় করতে হবে না, হলে হলে শিক্ষার্থীদের যে গণরুমে থাকতে হয় এবং গেস্টরুমের নামে যে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়, এটা বন্ধ হবে৷ আসলে এই মৌলিক কাজগুলো আমরা এখন পর্যন্ত কিছুই করতে পারিনি৷’

নুরের ভাষ্য, ‘ডাকসুতে ২৫ জনের মধ্যে ২৩ জন ছাত্রলীগের প্যানেলের৷ তাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ কারণ তাদের কাছ থেকে ওই ধরনের সহযোগিতাটা আমরা পাচ্ছি না, কারণ আমরা সংখ্যায় কম, তারপরেও কিন্তু আমরা থেমে নেই৷ আমরা আমাদের জায়গা থেকে যতটুকু করা যায় সেই কাজগুলো করে যাচ্ছি৷’

ডাকসুর সভাপতি ও উপাচার্যের সঙ্গে মতবিরোধ থাকলেও তার সঙ্গে বসতে হবে জানিয়ে নুর বলেন, ‘কাজ করতে গিয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে সহযোগিতা পাই না, এজন্যই মতবিরোধ৷ জালিয়াতি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর যারা ডাকসুতে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেব৷ চিঠি দিয়ে ৩৪ জনের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছি, উপাচার্য বলেছেন ব্যবস্থা নেব।’

(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/জেবি)