কদর বাড়ছে চলনবিলের শুঁটকির

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৫১

শায়লা পারভীন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)

চলনবিলকে বলা হয়ে থাকে মৎস্য ভান্ডার। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় এই বিলের বিস্তৃতি। এরইমধ্যে চলনবিলের পানি নামতে শুরু করেছে। জেলেদের জালে প্রতিদিন শতশত টন মাছ ধরা পড়ছে। আর এই মাছকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে চলনবিলের তাড়াশসহ নয় উপজেলায় প্রায় তিন শতাধিক শুঁটকির চাতাল। আর দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা এসে এই শুঁটকি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। মিঠাপানির মাছের শুঁটকি হওয়ায় এর কদর বাড়ছে।

জেলেরা বলছেন, বিলে তাদের জালে ধরা পড়ছে দেশীয় প্রজাতির মিঠা পানির মাছ টেংরা, পুঁটি, খলসে, বাতাসি, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শোল, গুতম, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কৈসহ নানা প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। হাট-বাজারে বিক্রি হয় এসব কাঁচা মাছ। দেশীয় প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি অসংখ্য চাতাল চলনবিল অঞ্চলে।

জানা যায়, বৃষ্টিহীন আশ্বিন, কার্ত্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চালু থাকে শুঁটকি তৈরি। এসব চাতালে বিশেষ করে যে মাছগুলো শুঁটকি করা হয় সেগুলো হলো টেংরা, পুটি, খলসে, বাতাসি, চেলা, মলা, ঢেলা, টাকি, গুতম, চিংরী, টাকি ইত্যাদি মিঠা পানির সুস্বাদু মাছ। চলনবিলের চাতালে তৈরি শুঁটকি সৈয়দপুর, রংপুর, দিনাজপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এমনকি বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে।

চলনবিলের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, চলনবিলে আগে প্রচুর ছোট মাছ পাওয়া যেত। তবে অধুনা তার পরিমাণ কমে আসছে। এরপরও এ অঞ্চলেও কাঁচা মাছের চাহিদা পূরনের পর উদ্বৃত্ত মাছ স্বল্পমূল্যে কিনে শুঁটকি তৈরি করে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে অনেক শুঁটকি চাতালের মালিক লাভবান হচ্ছেন।

কিন্তু চলনবিল অঞ্চলে যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় সকল ধরনের মাছই দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়ে গেছে। ফলে শুঁটকির চাতালে মাছের অভাব রয়েছে। তারপরেও শুঁটকির মৌসুমে চলনবিলে এখনও প্রায় তিন শতাধিক অস্থায়ী চাতালে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। তারা স্থানীয় হাট-বাজার থেকে মাছ কিনে চাতালগুলোতে মাছ শুকানোর কাজ শুরু করছে। একাজে চলনবিলের দিনমজুর নারী-পুরুষ দিন হাজিরায় কাজ করছেন।

তাড়াশ এলাকার চাতাল মালিক আহম্মেদ আলী জানান, ‘শুঁটকি ব্যবসায় অনেক লাভ রয়েছে। তাছাড়া চলনবিলের মাছের শুঁটকির চাহিদাও ব্যাপক। তবে আগের মত পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যায় না। আবার যা পাওয়া যায় তার দাম অনেক বেশি।’

শুঁটকি তৈরিতে নিয়োজিত চাতাল শ্রমিক আরজিনা খাতুন জানান, প্রতি তিন কেজি মাছে এক কেজি শুঁটকি হয়ে থাকে। যার বাজারমূল্যে প্রকারভেদে ৪৫০ থেকে ৮৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

শুঁটকি ব্যবসায়ীরা বলছেন, শহরাঞ্চলে এর দাম একটু বেশি। চলনবিলে শুঁটকি তৈরি শুরু হলেও তা বাজারজাত করতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। তারা শুঁটকি তৈরি করে প্যাকেটজাত করে। তারপর শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন। আবার কেউ কেউ চাতালে তৈরি শুঁটকি মাছগুলো ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে চাতাল থেকেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকেন।

ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ডিএম