নূর চৌধুরীকে নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রায় কানাডার আদালতের

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:২৪ | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:১১

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীর অবস্থানের তথ্য পেতে বাংলাদেশের আবেদন মঞ্জুর করেছে কানাডার একটি আদালত।

গত মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোরে) বাংলাদেশের করা আবেদনের পক্ষে রায় দেয় দেশটির ফেডারেল আদালত। আর এর মাধ্যমে নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর চেষ্টায় এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়ে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা কীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন, সেই অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য দেশটির সরকারের কাছে চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কানাডার আইনে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে প্রত্যর্পণে বাধা থাকায় দেশটির সরকার ‘জনস্বার্থ রক্ষার’ যুক্তি দিয়ে তথ্য প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল। এ নিয়ে করা এক মামলায় মঙ্গলবার বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয় কানাডার ফেডারেল আদালত।

বিচারক জেমস ডব্লিউ ওরেইলি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, নূর চৌধুরীর অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে জনস্বার্থের ব্যাঘাত ঘটবে না। সুতরাং তার বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কানাডা সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এর ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বিচার শুরু করে আওয়ামী লীগ। বিচার শুরুর পর উচ্চ আদালত ১২ জনের ফাঁসির আদেশ দেয়। এর মধ্যে ২০১০ সালে দণ্ড কার্যকর হয় পাঁচজনের। বাকিদের মধ্যে আজিজ পাশা বিদেশে মারা যান। আর আবদুর রশিদ, মোসলেম উদ্দিন, শরীফুল হক ডালিম, রাশেদ চৌধুরী, নুর চৌধুরী এবং আবদুল মাজেদ পলাতক। এদের মধ্যে নুর চৌধুরী কানাডায় আর রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই কানাডা থেকে বহিষ্কার এড়াতে নূর চৌধুরী সে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’ আবেদন করেন। আবেদনে নূর চৌধুরী বলেছিলেন, তাকে কানাডা থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হলে ফাঁসি দেওয়া হবে। কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর প্রায় ১০ বছর ধরে ওই আবেদন ঝুলিয়ে রাখায় নূর চৌধুরীর বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশ সরকার গত বছরের জুন মাসে একটি মামলা করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা কীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন এবং বহিষ্কার ঠেকাতে তাঁর ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের’ (পিআরআরএ) আবেদন কী পর্যায়ে আছে সে বিষয়ে বাংলাদেশকে কানাডা কোনো তথ্য দিচ্ছে না অভিযোগ করে গত বছর জুন মাসে ‘জুডিশিয়াল রিভিউয়ের’ (বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনা) আবেদন করা হয়েছিল বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

আবেদনের প্রায় আট মাস পর গত মার্চে কানাডার ফেডারেল আদালতে শুনানি হয়। শুনানি শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে বিচারক সময় চায়। শুনানির প্রায় ছয় মাস পর নূর চৌধুরীর অবস্থানের তথ্য পেতে বাংলাদেশের আবেদন মঞ্জুর করে কানাডার ফেডারেল আদালত।

দেশটির আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে বলেছেন, কানাডা কর্তৃপক্ষ ও নূর চৌধুরী বাংলাদেশকে তথ্য না দেওয়ার বিষয়ে যেসব যুক্তি তুলে ধরেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। গোপনীয়তা আইনেও এসব যুক্তি খাটে না। বাংলাদেশ বলেছে, নূর চৌধুরী কীভাবে কানাডায় আছেন তা জানতে পারলে তাঁর ব্যাপারে আইনি উদ্যোগ নেওয়া সহজ হবে। কিন্তু কানাডা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের আবেদন যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেনি। তাই আদালত বাংলাদেশের আবেদন আবার বিবেচনা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিচ্ছেন।

ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/এমআর