যেভাবে খালেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব

সিরাজুম সালেকীন
| আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:৫৩ | প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:০০

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সঙ্গে একাধিক অস্ত্রবহন করে চলাফেরা করায় আলোচনায় ছিলেন সব সময়। একটি অস্ত্রের লাইসেন্স থাকলেও বাকি দুটির নিবন্ধন ছিল না। মদ, জুয়া, ক্যাসিনো থেকে অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন কোটি কোটি টাকা।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিগন্যালে তাকে ধরতে একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা চালাচ্ছিল। বিষয়টি বুঝতে পেরে আত্মগোপনে চলে যান খালেদ। বন্ধ করে দেন তার ব্যবহৃত সব মোবাইল ফোন। গত বুধবার র‌্যাবের হাতে আটক হন এই যুবলীগ নেতা।

র‌্যাব জানায়, খালেদের ক্যাসিনো ‘ইয়ংম্যানস’-এ অভিযান চালানোর সময় খালেদ গুলশান-২ এর ৫৯ নম্বর রোডের চার নম্বর বাসায় আছে। এমন খবরে র‌্যাব তার বাড়িতে অভিযান চালায়। র‌্যাবের একাধিক টিম গুলশানে খালেদের বাসভবন ঘিরে ফেলে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাড়িতে প্রবেশ করে র‌্যাব সদস্যরা। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। হাতে পড়িয়ে ফেলা হয় হ্যান্ডকাপ। র‌্যাবের কাছে নিজের ক্ষমতার দাম্ভিকতা প্রকাশের চেষ্টা করেও সফল হননি। এ সময় খালেদ একটি জিন্সের প্যান্ট ও টি-শার্ট পরিহিত ছিলেন।

র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানান, তাকে গ্রেপ্তারের পর পরই শুরু হয় তল্লাশী। উদ্ধার হয় একটি শর্টগান, শর্টগানের ৫৮ রাউন্ড গুলি, দুটি পিস্তল ও প্রায় ৬১ রাউন্ড পিস্তলের গুলি। ঘরে থাকা লকার থেকে নগদ ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ডলারের বান্ডিল (ছয় লাখ টাকার মতো), চারটি মোবাইল ফোন এবং পাসপোর্ট। একঘন্টার মধ্যে অভিযান শেষ করে তাকে র‌্যাব হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে র‌্যাব-৩ এর কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে জেরা করা হয় তাকে। ক্যাসিনো থেকে উপার্জনের টাকা কার কার কাছে যেত, সে নিয়েও প্রশ্ন করা হয়।

এর আগে ফকিরাপুলে ইয়ংমেনস ক্লাবে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ১৪২ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। ক্যাসিনো থেকে উদ্ধার করা হয় ক্যাসিনো খেলার দশটি এনালক বোর্ড ও ছয়টি ডিজিটাল বোর্ড। এ ছাড়া নগদ ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। সঙ্গে ৫০ বোতল বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করে র‌্যাব। পরে সেটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।

ইয়ংমেনস ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানে ১৪২ জনের সঙ্গে আটক হন দুই তরুণী। এরমধ্যে একজন নিজেকে রিসেপশনিস্ট ও আরেকজন জুয়ার বোর্ডের কার্ড সরবরাহকারী বলে পরিচয় দেন। তাদের দাবি, পেটের তাগিদে এখানে তারা চাকরি করতেন। ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে তাদের এখানে ডিউটি করতে হতো। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বারো ঘন্টা তাদের ডিউটি থাকতো। চাকরি প্রথম শর্ত ছিল ক্যাসিনো বোর্ডে বিদেশী ড্রেস পড়ে থাকতে হবে।

নাম প্রকাশ না শর্তে ওই দুই তরুণী ঢাকা টাইমসকে জানান, রিসেপশনিস্ট হিসেবে একজন ২১ হাজার টাকা বেতন পেতেন। আর কার্ড বিতরণকারী হিসেবে দশ হাজার টাকা পেতেন মাসে। তারা দুইজনই মালিকের আস্থাভাজন ছিলেন। খালেদ কোথায় যেতেন বা কখন ক্লাবে আসবেন সব জানত তারা। তাদের চাকরির বিষয় স্বামীরাও জানতেন। তবে পরিবারের অন্যরা জানেন না।

এ প্রতিবেদককে তারা দুজনই বলেন, ‘আর সংসারে ফেরা হবে না। কেউ আর মেনে নিবে না। সব শেষ।’

র‌্যাব দেখে ডাকাত বলে চিৎকার

এদিকে বুধবারের ওই অভিযানের সময় এই দুই তরুণী র‌্যাব দেখে ডাকাত, ডাকাত বলে চিৎকার করতে থাকে। এসময় ক্যাসিনোতে একটা হুলস্থুল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করে। যাতে র‌্যাব সদস্যরা কাউকে ধরতে না পারে বা গুলি না করতে পারে। এই সুযোগে ভিতরে থাকা সবাই পালাতে পারে। পরে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে অন্য একটি কেবিন রুমে নেওয়া হয়।

টর্চার সেল

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান চলাকালে টর্চার সেলের সন্ধান পায় র‌্যাব। কমলাপুর রেলস্টেশনের উল্টো দিকে ইস্টার্ন কমলাপুর টাওয়ারের ওই টর্চার সেলে নির্যাতনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়।

জানা যায়, কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে টর্চার সেলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালানো হতো। উচ্চমাত্রায় সুদসহ পাওনা টাকা আদায়ে সব ধরনের কাজে ব্যবহার করা হতো এই টর্চার সেল।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘খালেদের টর্চার সেলে অভিযান চলমান রয়েছে। এখানে যা দেখছি লোম শিউরে ওঠার মতো অবস্থা।’

অভিযানে থাকা র‌্যাবের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আমরা একজন ভুক্তভোগী পেয়েছি। যার কাছ থেকে নির্যাতনের বর্ণনা শুনে আমরা হতবাগ হয়েছি। তাকে ওই অফিসে ধরে এনে প্রথমে গলায় সাপ পেঁচিয়ে দেওয়া হয়। পরে বৈদ্যুত্যিক তার শরীরে পেচিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বেশ কয়েকবার শক দেওয়া হওয়ার পরে একটি সাদা স্টাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়।’

মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধে জ্যামার

ফকিরাপুলে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ‘ইয়ং মেনস ক্লাব’ ক্যাসিনোতে অভিযানে গিয়ে র‌্যাবও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কারণ সেখানে সকল মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ ছিল। কারণ সেখানে ‘জ্যামার’ বসানো ছিলো।

প্রথমে বিষয়টি নজরে না এলেও পরে বেশ কয়েকটি জ্যামারের সন্ধান পাওয়া যায়। সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হলেও মোবাইল নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক ছিল না। গ্রেপ্তার ক্লাবের এক কর্মচারি জানান, এখানে প্রবেশ করতে হলে তিনস্তরে নিরাপত্তায় পড়তে হতো। কেউ যাতে ক্যাসিনো খেলার কোন তথ্য বাইরে দিতে না পারে সে জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হতো। এজন্য বেশ কয়েকটি যন্ত্র (জ্যামার) বসানো হয়েছিল।

ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/এসএস/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

​​​​​​​যাত্রীদের নিরাপত্তায় কমলাপুর স্টেশনে র‍্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ

ছুটির দিনে রাজধানীর বিপণি কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড়

বিজিবিতে আযান ও ক্বেরাত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের বিচার

এক হাতে ইফতারের পানির বোতল, আরেক হাতে যান চলাচলের ইশারা ডিসির

এলিফ্যান্ট রোডে বাসা থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ঢাকাস্থ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

অসুস্থতার যন্ত্রণা সইতে না পেরে ছুরিকাঘাতে রিকশাচালকের আত্মহত্যা

রাজধানীর ধোলাইপাড়ে পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’

বুধবার থেকে এক ঘণ্টা বাড়ছে মেট্রোরেল চলাচলের সময়

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :