জাহাঙ্গীরনগরে কি হচ্ছে বুঝতে পারছেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:০৬
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল জাবিতে বিক্ষোভ হয়

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশ বলছে তারা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ঈদ সেলামি হিসেবে টাকা পেয়েছেন। উপাচার্য বলছেন, চৌদ্দশ কোটি টাকার প্রকল্পে কোথাও কোনো দুর্নীতি হয়নি। আর বিশাল এই প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে দাবি করে উপাচার্যের পদত্যাগ চাইছেন শিক্ষকদের একাংশ। গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে উপাচার্যের পরিবারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও এনেছেন তারা।

প্রায় দুই মাস ধরে চলমান দুর্নীতি বিতর্কের মধ্যে রাষ্ট্রপতি চাইলে পদ ছাড়বেন বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। এমতাবস্থায় দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কি হচ্ছে- কি হতে যাচ্ছে তা বুঝে উঠতে পারছেন না সাধারণ শিক্ষার্থী আর শিক্ষকরা।

দেশের ইতিহাসে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ফারজানা ইসলাম। প্রথম মেয়াদ শেষ করে দ্বিতীয় মেয়াদে বহাল আছেন তিনি।

গত বছর একনেকে পাস হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল এক প্রকল্প। এরপরই বিতর্কের শুরু। অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে উপাচার্য কোটি টাকা ঈদ সেলামি দিয়েছেন। এখবর জানাজানি হলে উপাচার্যের কাছে ছাত্রলীগের অপসারিত শীর্ষ দুই নেতা ৪ থেকে ৬ পার্সেন্ট হিসেবে চাঁদা দাবি করেন।

উপাচার্য ফারাজানা ইসলাম এ বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে যান খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এরপরই ছাত্রলীগের ইতিহাসে নজিরবিহীনভাবে পদ ছাড়তে হয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে।

এরপর নাটকীয় মোড় ঘুরে দুটি অডিও কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর। রাব্বানীর সঙ্গে ফোনালাপে জাবির ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম দাবি করেন, তারা উপাচার্যের পাঠানো ঈদ সেলামি পেয়েছেন। সেই অডিওতে কে কত টাকার ভাগ পেয়েছেন সেটিও বিস্তারিত তুলে ধরেন সাদ্দাম। আরেকটি ফোনালাপ সাদ্দামের সঙ্গে প্রক্টরের কথোপকথন। এই রেকর্ডে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে তাদের কথা বলতে শোনা যায়।

জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাদ্দামের দাবি উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ঈদ সালামি বাবদ ১ কোটি টাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে শাখা সভাপতি জুয়েল রানা নিয়েছেন ৫০ লাখ টাকা, সাধারণ সম্পাদক এসএম আবু সুফিয়ান চঞ্চল নিয়েছেন ২৫ লাখ, আর তিনি (সাদ্দাম) নিয়েছেন ২৫ লাখ টাকা।

সাদ্দামের দাবি, কে কয় টাকা নেব এটিও ভিসি ম্যাডাম ঠিক করে দিয়েছেন। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জাবি ভিসি। অন্যদিকে যে ফোনালাপে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে তা পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হাসান।

এদিকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য দেয়া ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেনকে প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে হল ও ক্যাম্পাস ছাড়ার জন্যও হুমকি দেয়া হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতার কথা জানাতে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে বর্তমানে জাবি ক্যাম্পাসজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি। কখন কি ঘটে তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এমন পরিস্থিতি কেবল ফারজানা ইসলামের আমলেই নয়, আগেও যারা উপাচার্য ছিলেন তাদের সময়ও নানা বাধা বিপত্তির মুখে পড়তে হয়েছে।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। দলের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তদন্তে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে উপাচার্যের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। ’

অন্যদিকে উপাচার্যের বিষয়ে একটি গোপন অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) তদন্ত করবে বলে জানা গেছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে ‘ফেঁসে’ যেতে পারেন ফারজানা ইসলাম।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষকদের দলীয় লেজুড়বৃত্তি ও রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ হওয়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।

মূলত তিনটি কারণে জাহাঙ্গীরনগরসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেণ্য ইংরেজি বিভাগের বরেণ্য শিক্ষক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রথমত সর্বজন শ্রদ্ধেয় নন, সরকারের হাত পা ধরে অনেকে উপাচার্য হন। যে কারণে তাদের কাজ হয় সরকারকে খুশি রাখা।’

‘দ্বিতীয়ত- পড়ালেখার চেয়ে শিক্ষকরা রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি করে থাকেন। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিও বড় কারণ।’

‘তৃতীয়ত-ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবকসহ যেসব স্টেকহোল্ডার থাকেন তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে না পারা। যেসব কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/বিইউ/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :