তিন লাখ মানুষের জন্য চার চিকিৎসক

জাভেদ হোসেন, গাইবান্ধা প্রতিবেদক
 | প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৪১

চিকিৎসক সংকটে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মানুষ। উপজেলাটিতে তিন লাখ মানুষের বসবাস হলেও এসব মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক আছেন মাত্র চারজন। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারী ও শিশু রোগীদের বেশি সমস্যায় পড়তে হয়।

উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মানুষ এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী সাঘাটা ও সদর উপজেলার আরও অন্তত পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষও এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে।

চরাঞ্চলবেষ্টিত উপজেলাটির অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। স্বল্প আয়ের এসব মানুষ অসুস্থ হলে নামিদামি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন না। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই তাদের চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক কম থাকায় যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পেতে বঞ্চিত হতে হচ্ছে তাদের।

জানা যায়, ২০১১ সালে ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখনও জনবল বহাল রয়েছে ৩১ শয্যার। এখন সেই জনবলও নেই। হাসপাতালটিতে নয়জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র চারজন। শূন্য রয়েছে আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ পাঁচজন জুনিয়ার কনসালটেন্টের পদও। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য আছে ডেন্টাল সার্জন ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) পদও।

এখানে ডেলিভারিসহ মাতৃস্বাস্থ্য নিশ্চিতে চারজন মিড ওয়াইফের মধ্যে তিনজন নিয়মিত কাজ করছেন। অপরজন গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে ডেপুটেশনে আছেন। এ ছাড়া আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন না থাকায় বাইরে থেকে বেশি পয়সা ব্যয় করে রোগীদের তা করতে হয়।

বর্তমানে হাসপাতালের ক্যাশিয়ার, পরিসংখ্যান, ফার্মাসিস্ট এবং স্টোর কিপারের পদ শূন্য রয়েছে। এখানে নার্সের ১৪টি পদের মধ্যে আছেন ১২ জন। অফিস সহকারী চারটি পদের বিপরীতে একজন, দুইজন নিরাপত্তা প্রহরীর বিপরীতে একজন, বাবুর্চির দুটি পদের মধ্যে একজন এবং পাঁচজন পরিচ্ছন্নকর্মীর মধ্যে মাত্র একজন কর্মরত আছে। ফলে হাসপাতালটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকছে না। স্টাফ অভাবে হাসপাতাল পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে।

চিকিৎসা নিতে আসা স্বপন নামে এক ব্যক্তি বলেন, চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে এলেও চিকিৎসক সংকট থাকায় তেমন সেবা পাওয়া যায় না। যে কয়জন ডাক্তার আছেন প্রতিদিন চিকিৎসা দিতে গিয়ে রোগীদের ভিড়ে হাঁপিয়ে ওঠেন।

তার পাশে থাকা রবিউল নামে আরেকজন বলেন, উপজেলার অধিকাংশ মানুষ গরিব ও অসহায়। তাদের বেশিরভাগই সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটে রোগীরা সেই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই এলাকাবাসীর সুবিধার্থে সুচিকিৎসার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া দরকার।

ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ বলেন, হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও এখনও জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। চরাঞ্চলবেষ্টিত অনগ্রসর এ উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অতিদ্রুত ৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে জানান, ১২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জনবলের সংকট রয়েছে। ফলে স্বাস্থ্যসেবা দিতে ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ডেপুটি স্পিকার মহোদয়ের সভাপতিত্বে উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :