ভুল চিকিৎসার অভিযোগ

চোখের চিকিৎসা নিতে গিয়ে দৃষ্টিশক্তি হারালেন মুসা

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:০১

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

চোখে ঝাপসা দেখার চিকিৎসা করাতে গিয়ে পর পর তিন অস্ত্রোপচারে এক চোখের পুরো দৃষ্টি হারালেন ঢাকা জেলা পরিষদের অফিস সহায়ক মুসা আহমদ। তার অভিযোগ, চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে।

এ ঘটনায় তিনি উত্তরা পশ্চিম থানায় দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ না করে তাকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। মুসা আহমেদ ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার কামারগ্রামের মরহুম জহুর শেখের ছেলে।

মুসা আহমদ হঠাৎ করে তার ডান চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করলে উত্তরা সাত নম্বর সেক্টরের ৩২ নম্বর রবীন্দ্রসরণির ঢাকা আই কেয়ার হাসপাতালে যান গত ফেব্রুয়ারি মাসে। সেখানে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হারুন অর রশীদ তার চোখ পরীক্ষা করে এক মাসের ওষুধ দেন।

ওষুধ খাওয়ার পর মুসা আহমেদের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে যায়। সাত দিন পর ওই হাসপাতালে ডা. হারুন অর রশীদের কাছে গেলে তিনি তাকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরীর কাছে পাঠান।

মুসা আহমদ বলেন, ‘ডা. কৌশিক চৌধুরী জানান আমার চোখের রেটিনা ছিঁড়ে গেছে। দ্রুত চোখের অপারেশন করতে হবে। আমাকে ৬১ হাজার টাকা জমা দিতে বলেন, আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ আরও ছয় হাজার টাকা জমা দেই। এরপর আমার ডান চোখে অপারেশন হয়। পরদিন ব্যান্ডেজ খোলার পর চোখের সমস্যা আরও বেড়ে যায়।’

এরপর মুসা আহমেদ আবার ডা. হারুন অর রশীদের কাছে যান। ডা. হারুন তার চোখে লেন্স লাগাতে হবে বলে তাকে ৩৬ হাজার টাকা জমা দিতে বলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ আরও ছয় হাজার টাকা দেন তিনি। কিন্তু লেন্স লাগানোর পরও মুসার চোখের কোনো উন্নতি হয়নি।

তাকে আবার পাঠানো হয় ডা. কৌশিক চৌধুরীর কাছে। মুসা বলেন, ‘তিনি  (কৌশিক) আমার চোখ থেকে ফিলিকন অয়েল বের করতে হবে বলে আরও ২৬ হাজার টাকা জমা দিতে বলেন। তখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ আরো ছয় হাজার জমা দেই। এই অস্ত্রোপচার শেষে চোখের ব্যান্ডেজ খোলার পর আমি ডান চোখে আর কিছুই দেখি না।’

তিন অস্ত্রোপচারে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে দিশেহারা মুসা আহমদ ধানমন্ডির দ্বীন মোহাম্মদ আই রিসার্স সেন্টারে ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হকের কাছে যান। তিনি তাকে পাঠান ডা. পঙ্কজ কুমার রায়ের কাছে।

মুসা বলেন, ‘তারা আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান আমার ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আর কোনো দিন ভালো হবে না। তারপরও আমি চাইলে চারটি ইনজেকশন দিতে পারি বলে পরামর্শ দেন তারা, যার একটির দাম ৬০ হাজার টাকা। তবে তাতে কোনো কাজ হবে এমন নিশ্চয়তা নেই।’

মুসা আহমদের চোখে অস্ত্রোপচার এবং তার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরীর সঙ্গে। মোবাইল ফোনে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মুসার অপারেশন করেছিলাম প্রাইভেট হাসপাতালে। তার চোখে ফিলিকন অয়েল ছিল। সেটা বের করা হয়। ওনার চোখে আবার কোনো সমস্যা হলে তিনি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে আসুক। আমরা আবার দেখব।’

ডা. কৌশিক চৌধুরী জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনিস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন।

ভুক্তভোগী মুসা আহমেদের জিডি না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তপন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎকের মতামত ছাড়া কারও বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেওয়া যায় না। তাই ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য আমি তাকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’

ডা. হারুন রশীদের সঙ্গে একাধিবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঢাকা আই কেয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সরফরাজ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সেখানকার ডিজিএম এ কে এম মাহমুদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তাকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে তাকে মুঠোফোনে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। তিনি তারও কোনো জবাব দেননি।

(ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/এএ/মোআ)