গোপালগঞ্জে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে থেকে এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘জেগেছে রে জেগেছে ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘শিক্ষা সন্ত্রাস একসাথে চলে না’, ‘হামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’ , ‘ভাই এর উপর হামলা কেন প্রশাসন জবাব চাই’, ‘এক দুই তিন চার দালাল ভিসি গদি ছাড়’, ‘স্বৈরাচারের বিষদাঁত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ‘যে প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা করা হয়েছে খুবই যৌক্তিকভাবে আমরা সেই প্রশ্নটা আবার করতে চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী? আমরা দেখেছি সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ভিসিরা যে কারণে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন সে কাজ বাদ দিয়ে তারা দালালির পথ বেছে নিয়েছেন। আমরা তাদের বলতে চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কখনো দালালি করা ছিল না এবং ছাত্রসমাজ এক সেকেন্ডের জন্যও কোনো ভিসির দালালি মেনে নেবে না।’
‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন ভিসির দুর্নীতির কারণে শুরু হয়েছে, গোপালগঞ্জের আন্দোলনের সূত্রপাত কিন্তু ভিসির দুর্নীতির কারণেই, একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলনেও ভিসির দুর্নীতির বিষয়টি স্পষ্ট।’
আখতার বলেন, ‘সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দুর্নীতির ভূত রয়েছে সেই ভূতকে অতিসত্বর তাড়াতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের যে প্রশ্ন সে প্রশ্নের উত্তর দিয়েই বশেমুরপ্রবির ভিসিকে পদত্যাগ করতে হবে।’
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেকটি শিক্ষাঙ্গন শিক্ষার্থীদের পবিত্র আস্তানা যেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করবে। কিন্তু দেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের দেয়া প্রশাসন অন্যায় ,দুর্নীতির এবং সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে এগুলোকে আজ সন্ত্রাসীদেরকে লীলাখেলার একটি আস্তানায় পরিণত করেছে।’
এসময় তিনি বশেমুরপ্রবির ভিসিকে অতি দ্রুত পদত্যাগ করার আহ্বান জানান আর তা না হলে ছাত্র সমাজকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ডাকসুর ভিপি ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, ‘আজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অরাজকতা চলছে। আমরা জানি ১৯৯০ পরবর্তী সময়ে যে সরকারই ক্ষমতা এসেছিল তারাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র আন্দোলন দমাতে লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতি চালু করেছিল। কিন্তু তাতে যখন আন্দোলন দমাতে পারছে না, তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলদাস, অনুগতদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিতে শুরু করলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শিক্ষার্থীদের ‘বাছুর’ বলে সম্বোধন করেছে। এরকম একজন অপদার্থ ভিসিকে দিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। এধরনের দলদাস, অনুগতদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সারা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে এর ফল ভালো হবে না।’
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘আমরা ছাত্র সমাজ বশেমুরবিপ্রবির এই নির্লজ্জ উপাচার্যকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। ওই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর যে হামলা হয়েছে আমরা সে হামলার প্রতিবাদ জানাই। প্রয়োজনে আমরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো এবং তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবো। সমাবেশ থেকে আমরা তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।’
(ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/এমআই/জেবি)