উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, অভাব প্লাটফর্মের

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:২০

জহির রায়হান

ইশরাত জাহান চৌধুরী। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ব্যাবসায়। নিজেই এখন উদ্যোক্তা। প্রতিষ্ঠা করেছেন তুলিকা নামের পাটপন্যভিত্তিক কোম্পানি। তিন বছরেই পেয়েছেন সাফল্য। তার প্রতিষ্ঠানের পন্য যাচ্ছে ইউরোপের বাজারে। এই নারী উদ্যোক্তা কথা বলেছেন ঢাকা টাইমসের সঙ্গে।

কেমন পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলেন?

‘তুলিকা’ শুরু করেছিলাম মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়ে। আর এখন মাসে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়। ব্যবসা করতে গিয়ে পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছি। নইলে টিকে থাকা মুশকিল হতো।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে এই খাতের প্রথম চ্যালেঞ্জটা কি মনে করছেন?

উদ্যোক্তা তৈরিতে ও প্রশিক্ষণের জন্য দেশে এখন অনেক প্লাটফর্ম। তবে ব্যবসা করতে গিয়ে উদ্যোক্তারা যেন ঝরে না যায় সেটিই মূল চ্যালেঞ্জ। উদ্যোক্তারা যেন কাজ পায় সেই বিষয়ে সরকারসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে সরকারি বিভিন্ন কাজের ৫০ শতাংশ যদি এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় তাহলে এই সেক্টরে যুগান্তকারী বিপ্লব হতে পারে।

চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পোছনে কি কারণ?

পড়াশুনা শেষ করে ব্যাংকে চাকরি করতাম। তবে কিন্তু নিজের একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকবে এমন চিন্তা তাড়িয়ে বেড়াতো। নিজে সাবলম্বী হওয়ার সঙ্গে অন্যকেও কাজের সুযোগ করে দেয়ার স্বপ্ন ঘুরতো মাথায়। এরপর হুট করে চাকরি ছেড়ে পাটের বহুমুখি পণ্যের ব্যবসা শুরু করি। ‘তুলিকা’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি।

পাটজাত পন্যের দিকে গেলেন কি মনে করে?

আমি ভাবছিলাম দেশের বাইরে কি কি পণ্য রপ্তানি করা যায়। খোঁজখবর নিয়ে দেখি পাট পণ্যের চাহিদা আছে। এরপর বেশকিছু প্রশিক্ষণ নিয়ে নেমে পড়ি ব্যবসায়। রপ্তানিকে টার্গেট করে ক্রেতাদের চাহিদামাফিক পাটের শপিং ব্যাগ, ওয়াই ব্যাগ, গ্রোসারি ব্যাগ, হ্যান্ডিক্রাফট , হোম ডেকর এই পণ্যগুলোই তৈরি করতে থাকি। ২০১৭ সালে ব্যবসা শুরু করি। ওই বছরেই একটি রপ্তানি আদেশ পাই। তখন উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। এখন আমার প্রতিষ্ঠানের তৈরি পাটপণ্য ইউরোপের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে।

এখন ব্যবসার কী অবস্থা?

রপ্তানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমাদের ঝুঁকি রয়েছে। কারণ সবসময় রপ্তানি আদেশ পাই না। কিন্তু কারখানা তো চালাতে হয়, কর্মীদের বেতন দিতে হয়। সবমিলিয়ে মাসের যে খরচ সেটি কিন্তু হচ্ছেই বিক্রি হোক না হোক। বড় ব্যবসায়ীদের মূলধন সমস্যা নেই। আমরা যারা নতুন, ঝুঁকিটা আমাদের বেশি। তাছাড়া অ্যাভেইলেবল ব্যবসাটা কোথায় করতে পারবো সেটিও আমরা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি। আর আমরা কীভাবে পণ্য বিক্রি করবো তার সুযোগ ও সঠিক গাইডলান পাচ্ছি না। ফলে ব্যবসায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছি।

এমন অবস্থায় কী চাওয়া?

বড় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ছোটরা যেন টিকে থাকতে পারে- এটা যদি এভাবে হয় সরকারি কাজের ৫০ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তাদের দেয়া হবে। তাহলে কিন্তু এক্ষেত্রে ঝুঁকিটা থাকলো না। সবার মধ্যে একটা সমতা থাকলো। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রেরণাও তৈরি হবে। কাজ না পেয়ে মুখথুবড়ে যেন পড়তে না হয় সেটিই কাম্য।

আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ পেতে কোন বিষয়ে জোর দেয়া বলে মনে করছেন?

কমবেশি সব দেশেই বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মেলা হয়। সেখানে গেলে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ থাকে। মেলা হচ্ছে ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র। কিন্তু নতুন উদ্যোক্তাদের এ সুযোগটা কম থাকে, কারণ এসব মেলাগুলোয় অংশগ্রহণের সুযোগ তাদের খুব একটা জোটে না। এজন্য এসব মেলায় বড় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পাঠানো খুব জরুরি।

তবে এসব মেলায় স্টল নিতে তো কয়েখ লাখ টাকা লাগে, সেক্ষেত্রে অন্তত বছরে এক দুই জনকে স্পন্সর করা, এটিও জরুরি। এতে করে মেলা থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পাবেন। আর বিদেশি ক্রেতাদের রপ্তানি আদেশও পেতে পারেন।

(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/জেআর/ডিএম)