হারিয়ে যাচ্ছে দ্বিতীয় আমাজন
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বন আমাজনে আগুন নিয়ে উদ্বিগ্ন সারা বিশ্ব। এ নিয়ে আলোচনা কিছু কম হয়নি। তবে ব্রাজিলের আর এক অংশের বিশাল বনভূমি যে নিঃশব্দে সাফ হয়ে যাচ্ছে, তার খবর খুব একটা সামনে আসছে না।
ব্রাজিলের সেরাডো বনভূমিতে সাভানা এবং তৃণভূমির অসাধারণ এক সহাবস্থান দেখা যায়। আমাজনের মতো এত প্রসিদ্ধ না হলেও ব্রাজিলের অন্য অংশের এই অরণ্যভূমি জীববৈচিত্র্যের এক অন্যতম নিদর্শন। ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিস্ট মার্সেডেজ বুস্তামান্তের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০ কোটি হেক্টরের এই বনভূমিতে বিশ্বের অন্তত ৫ শতাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণীর সহাবস্থান। সেখানে ৮৩৭ প্রজাতির পাখি, ১২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৫০ প্রজাতির উভচর, ১,২০০ প্রজাতির মাছ, ৯০ হাজার পতঙ্গ এবং ১৯৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর বাস।
সেরাডোয় এমন ১১ হাজার প্রজাতির গাছ পাওয়া যায়, যার অর্ধেক বিশ্বের আর কোথাও মেলে না। আয়তনের আমাজনের বৃষ্টি অরণ্যের অর্ধেক হলেও জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে এর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। অথচ প্রতি বছর গড়ে সাত লক্ষ হেক্টর করে সেরাডো বনভূমি হারিয়ে যাচ্ছে।
এর জন্য দায়ী মাংসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা। মাংসের চাহিদা মেটাতে বাড়ছে পশুপালন। আর সেই পশুচারণের জন্য জঙ্গল কেটে নির্বিচারে তৈরি হচ্ছে চারণভূমি। পশুচারণের পর সেই জমি কোথাও কোথাও ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষিকাজে। কাটা হচ্ছে বৃক্ষের আচ্ছাদন। সম্প্রতি আমেরিকা-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে ব্রাজিল থেকে মাংস এবং সোয়াবিনের আমদানি বাড়িয়েছে চীন। ফলে, ব্রাজিলে কৃষিকাজ এবং ডেয়ারি শিল্পের রমরমা বাড়ছে। আর তাতেই সাফ হচ্ছে আমাজন এবং সেরাডোর মতো বনভূমি।
২০১৮ সালের তথ্য বলছে, বিশ্বের মোট সোয়া উৎপাদনের ৫০ শতাংশ হয় ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং প্যারাগুয়েতে। আর ব্রাজিলের ক্ষেত্রে সেই সোয়া মূলত আসে সেরাডোর কৃষিজমি থেকে। জীববৈচিত্র্যের সমাহার থাকলেও আমাজনের থেকে সেরাডো বনভূমির নিরাপত্তা কম।
আমাজনের ৫০ শতাংশ বনভূমি সংরক্ষিত হলেও সেরাডোর ক্ষেত্রে পরিমাণ মাত্র ৮ শতাংশ। ফলে, আমাজনের থেকে এই বনভূমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা অনেক বেশি।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেয়ার বলসোনারো অবশ্য এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেরাডোর মতো বনভূমি বাঁচাতে না পারলে মানবসভ্যতা সত্যিই সঙ্কটের মুখে পড়বে।
ঢাকা টাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/একে