সংশোধিত এনআইডি পেতে কত দেরি, মাননীয় সিইসি?

সারওয়ার-উল-ইসলাম
 | প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:৫২

জাতীয় পরিচয়পত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে অনেক কাজই এই জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া করা সম্ভব নয়। ১৮ বছরের ওপরের প্রত্যেক নাগরিকের এটা থাকা বাধ্যতামূলক। হয়তো এটা অনেকেরই খামখেয়ালির কারণে করা হয় না। কিন্তু যখন কোনো বড় রকমের কাজ সামনে এসে যায় তখনই এটার খোঁজখবরের জন্য নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। তারপর আস্তে আস্তে নানা রকমের ফরমালিটি মেনে কাজ করার পর হাতে পাওয়া যায়। সময় চলে যায় অনেক আর পেরেশানিও কম যায় না। তাই সময় মতো সচেতন নাগরিকরাই এটার ব্যাপারে বা এটা পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।

এখন কথা হচ্ছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহকারীরা যেভাবে নাম-ঠিকানা-বয়স-পেশা লিখে নিয়ে যায়, অনেক সময় সেভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্ডটিতে পাওয়া যায় না। কারোটা হয়তো নিজের নামের বানান ভুল, কারোটা বা পিতা বা মাতার নামের বানান ভুল, আবার কারোটা বা ঠিকানায় ভুল থেকে যায়। সমস্যাটা হয় তখনই। সেই সংশোধন করতে গিয়েই হয়রানির শিকার হতে হয়। ভুলটা করলো নির্বাচন কমিশনের কম্পিউটার অপারেটর আর সেই ভুল ঠিক করার জন্য ব্যাংকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিতে হবে। সেই টাকার প্রাপ্তি স্বীকার যতক্ষণ না পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট সার্ভারে না ঢুকবে ততক্ষণ বা ততদিন পর্যন্ত আপনার কার্ডের ভুল সংশোধন করার কাজটি শুরু হবে না। কাজ শুরু হলে তা ঠিক করে আপনার মোবাইলে মেসেজ পাঠানো হবে যে, আপনার কার্ডটি প্রিন্ট করা হয়েছে। তারপর আপনি যেখানে আবেদন করেছিলেন সেই অফিসে গিয়ে খোঁজ করবেন কার্ডটি এলো কি না। এভাবেই স্বাভাবিক নিয়মে আপনার কার্ডটি আপনি হাতে পাবার নিয়ম। কিন্তু এই স্বাভাবিক নিয়মটি হয় না বলেই বিভিন্ন থানা নির্বাচন কমিশন অফিসে সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে অনেক তরুণ থেকে শুরু করে মাঝ বয়সি নারী-পুরুষ। স্বাভাবিক নিয়মে খুব কম মানুষই সংশোধন করা কার্ডটি হাতে পান। তাকে হয়তো আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে কাউকে টাকা দিয়ে বিশেষভাবে কার্ডটি সংগ্রহ করতে হয়, না হলে কোনো ওপর মহল থেকে ফোন করিয়ে কার্ডটি পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে হয়রানি অবধারিতভাবে মেনে নিতেই হয়। শুধু বানান সংশোধন না, আপনার ঠিকানা পরিবর্তনের বিষয়েও এই হয়রানি পোহাতেই হবে।

নির্বাচন কমিশনের প্রধান অফিস রাজধানীর আগারগাঁওয়ে। তবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় থানা নির্বাচন কমিশন অফিস রয়েছে। যাতে মানুষকে আগারগাঁওয়ে না গিয়ে নিজের এলাকায় সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়। সরকারের উদ্যোগ ভালো হলেও এখানে গিয়ে মানুষকে নাকানিচুবানি খেতে হয়। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ঘুরে ঘুরেও সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র না পেয়ে সরকারকে গালাগাল দিয়ে বাড়ি ফিরে যান কেউ কেউ। এসব অফিসের কর্মচারীদের ভাষ্য একটাইÑ সার্ভার ডাউন। কাজ হচ্ছে না। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রটি কি অবস্থায় আছে বলতে পারছি না। যদি পারেন তা হলে আগারগাঁওয়ে গিয়ে খোঁজ নেন।

এ কথার তো কোনো মানে হয় না। মানুষের উপকারের জন্য সরকার স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের ব্যবস্থা করেছে কেন? স্বাভাবিকভাবে এই প্রশ্নটা মানুষের মনে জাগে।

এই বিষয়টি নিয়ে নিজে গিয়েও একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। গত ২১ মে চারটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা পরিবর্তন ও নামের বানান সংশোধনের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি হাতে পেয়েছি দুই দফায়। সর্বশেষটি পেয়েছি গত ৯ সেপ্টেম্বর। বাকি দুটির কোনো হদিস নেই। কোথায় আছে কেউ বলতে পারছে না। সেই একই কথাÑ সার্ভার সমস্যা। আপনি তো সাংবাদিক মানুষ। আগারগাঁওয়ে গিয়ে বসে থেকে তুলে আনতে পারেন।

এখন কথা হচ্ছে কেন আমাকে আগারগাঁও যেতে হবে বা সাংবাদিক বলেই আমাকে খাতির করে দিয়ে দিবে। আর সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন হয়রানি পোহাতে হবে?

অভিযোগ আছে, এসব স্থানীয় অফিসে কিছু টাকা-পয়সা খরচা করলে তাড়াতাড়ি সংশোধিত কার্ড এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তার মানে কি পরোক্ষভাবে সেই ঘুষেরই জয়জয়কার।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, সার্ভার সমস্যা কতদিন থাকে? সার্ভারের সমস্যার কথা বলে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে কেন?

আবার কথা উঠতেই পারে রোহিঙ্গাদের ৪৭টি জাতীয় পরিচয়পত্র তা হলে কোন সার্ভার ব্যবহার করে দেওয়া হলো? কারা এই সার্ভার ব্যবহার করার অনুমতি পায়? এই যে পরিচয়পত্র পেয়ে গেল, এটা তো সার্ভার নিয়ন্ত্রকের দোষ। সার্ভার জালিয়াতি কারা করতে পারেন, যাদের রয়েছে উচ্চমানের কারিগরি দিক সম্পর্কে অভিজ্ঞতা। কতটা ক্ষমতাবান তারা?

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যেখানে দিনের পর দিন ঘুরে ঘুরে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে নিজের কার্ডটি পাচ্ছেন না, সেখানে বাংলাদেশ সরকারের গলার কাঁটা রোহিঙ্গারা অর্থের বিনিময়ে পেয়ে যাচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র। বিষয়টি ভাবলে অবাক হওয়া ছাড়া আর কিছুই বলার থাকে না।

প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সরকারের ওপর মহলের কাছে প্রশ্ন, তা হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? একটা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ নেই কেন? দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ঘুরে সংশোধিত কার্ডটি পেতে হবে। কাগজপত্র আর তথ্য সঠিক মতো দিলে সর্বোচ্চ এক মাস লাগার কথা। কেন এত সময়ক্ষেপণ করা হয়, আর কেনই বা কিছু হলেই সার্ভার সমস্যার দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যায় থানা নির্বাচন কর্মকর্তার অফিসের লোকজন। বিষয়টির ব্যাপারে নজর দেওয়া জরুরি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :