ক্যাসিনো বন্ধে আগেই পুলিশকে চিঠি দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৩০ | প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:০১

রাজধানীতে ক্যাসিনোয় জুয়া খেলা বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই বছর আগেই পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। চিঠি দেওয়ার পরও অভিযান চালায়নি বাহিনীটি। উল্টো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নীরবতায় দেদারছে চলেছে ক্যাসিনো। এছাড়া ক্রীড়াসামগ্রী ও মূলধনী যন্ত্রের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ক্যাসিনোর জন্য বিদেশ থেকে আনা হয়েছে রুলেট, পোকার টেবিল ও স্লট মেশিন।

গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকায় যুবলীগ নেতাদের ‘৬০টি ক্যাসিনো চালানোর’ খবর আসে সংবাদমাধ্যমে। তারপরই এ বিষয়ে সক্রিয়তা বাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। অভিযানে নামে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব।

ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে র‌্যাবের অভিযান দিয়ে শুরু হয় অভিযান। ওই ক্লাবে বিদেশি মদ, টাকাসহ ক্যাসিনোর বিপুল সরঞ্জাম পাওয়া যায়। গ্রেপ্তার হন ক্লাবের সভাপতি যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।

ওইদিনই ফকিরাপুল এলাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র এবং বনানীর আহমেদ টাওয়ারে র‌্যাবের অভিযান চলে। প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা অভিযানে বিপুল জুয়া খেলার সরঞ্জাম, টাকা ও মদ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় দেড়শর মতো মানুষকে।

রাজধানীতে জুয়া ও ক্যাসিনো চলার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। থানা থেকে কিছু দূরেই ক্যাসিনো চলার ঘটনায় বাহিনীটিকে নিয়ে সমালোচনা হয়। অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের যোগসাজশেই এতদিন চলে আসছে এসব অবৈধ কারবার। অথচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব ক্যাসিনো বন্ধ করতে ২০১৭ সালেই চিঠি দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।

তবে পুলিশের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই নির্দেশের পরই জামান টাওয়ারের ছয়তলা ভবনের ক্যাসিনো বন্ধ করে দেয় পুলিশ। অভিযান চালানো হয় উত্তরার রিক্রিয়েশন ক্লাবে।

২০১৭ সালে পুলিশ সদর দপ্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠির কপিস্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের ৮ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-২ শাখার তৎকালীন উপসচিব তাহমিনা বেগম স্বাক্ষরিত (স্মারক নম্বর-৪৪.০০.০০০০.০৫৭.০৪.০০৩.১৭-৩০৮) পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর লেখা চিঠিতে রাজধানীতে ক্যাসিনো নামক জুয়ার আস্তানায় জুয়া খেলা বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়।

ওই চিঠিতে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, ফুয়াং ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব, সৈনিক ক্লাব, এজাক্স ক্লাব, কলাবাগান ক্লাব ও পল্টন থানাধীন পুরানা পল্টনে অবস্থিত জামাল টাওয়ারের ১৪ তলায় একটি ক্যাসিনোর বিষয় উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয় ওই চিঠিতে।

পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ মেট্রোর মাধ্যমে তা বিভিন্ন অপারেশনাল ইউনিটে পাঠানো হয়। এরপর ডিএমপি জামান টাওয়ারে অভিযান চালায়। অনেক সময় প্রভাবশালী শীর্ষ নেতাদের কারণে পুলিশ অ্যাকশনে যেতে পারেনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার কোনো তথ্য জানা নেই।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন অপারেশনাল ইউনিটে পাঠানো হলেও রহস্যজনক কারণে তা স্থবির হয়ে যায়। নেপথ্য কারণ হিসেবে জানা গেছে, সব ক্যাসিনো থেকে মোটা অঙ্কের মাসহারা পৌঁছে যেত রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ও দুর্নীতিবাজ কিছু পুলিশ সদস্যের কাছে। ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজির কারণে গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে থাকা যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, গোলাম কিবরিয়া শামীম ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম ফিরোজ এরই মধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টদের। চমকে ওঠার মতোও অনেক তথ্য দেওয়ায় বিব্রত হন তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও। তবে তাদের দেওয়া তথ্য নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর পুলিশে কর্মরত বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ওইসব ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িতরা এতটাই প্রভাবশালী যে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে গেলে চাকরি নিয়েই টানাটানি শুরু হয়ে যেত।’ তবে চলমান অভিযানে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :