গোমতির চর দখল করে বিক্রির মহোৎসব

মাসুদ আলম, কুমিল্লা
 | প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:০২

কুমিল্লার বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীর সেই অপরূপ সৌন্দর্য এখন আর নেই। অবৈধভাবে চর কেটে মাটি-বালু উত্তোলন, নদীরক্ষা বাঁধে দোকান-পাট নির্মাণ এবং ভেতরের চর দখল করে ঘর-বাড়ি নির্মাণে নষ্ট হচ্ছে গোমতীর সৌন্দর্য। হুমকির মুখে পড়েছে নদীরক্ষা বাঁধ এবং এর পরিবেশ।

প্রভাবশালী অবৈধ দখলদাররা চরের সরকারি সম্পত্তি দখল করে প্রতি শতক জায়গা এক লাখ টাকা দরে বিক্রি করছেন। মাটি-বালুর পর এবার চর বিক্রির উৎসবে পরিণত হয়েছে। দখলকৃত সম্পত্তি ভূমিহীন এবং দরিদ্র শ্রেণির বাসিন্দাদের কাছে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে বিক্রি করে যাচ্ছেন। এসব সম্পত্তি বিক্রি করে প্রভাবশালীরা লাভবান হলেও কিনে বসতি শুরু করা মানুষগুলো রয়েছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে। তাদের বসতির কারণে নদীর চর এখন গ্রামে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুমিল্লার আলেখারচর আমতলী ব্রিজ থেকে টিক্কারচর ব্রিজ পর্যন্ত নদীর দুই পাশে ছোট-বড় কাঁচা-পাকা ঘর, বাড়ি এবং বাঁধের উপর দোকানপাট নির্মাণে দখলের হিড়িক পড়েছে। গোমতী নদীর বাঁধে উঠলেই দেখা যায় ভেতরে চর দখল করে গড়ে উঠা ঘর-বাড়ির দৃশ্য।

কেউ টিন সিটের ঘর নির্মাণ করে বসতি শুরু করেছেন। কেউ আবার কাঁচা-পাকা এবং এবং পাকা ঘরও নির্মাণ করেছেন। আবার কেউ বাড়ি নির্মাণে বাঁধের সঙ্গে চর ভরাট করে দোকানপাট নির্মাণ করছেন ব্যবসার জন্য।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই কর্মকর্তা জানান, গোমতীর বাঁধের ভেতরে সরকারি সম্পত্তি দখল করে ঘরবাড়ি এবং দোকানপাট নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব দখলদারের উচ্ছেদ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি তালিকা করেছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গোমতী নদী রক্ষার বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে উচ্ছেদ অভিযানে যেতে ৩১৭টি অবৈধ দখলের নাম উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণের সময় সরকার যাদের কাছ থেকে সম্পত্তি কিনেছেন, তারা সরকারের কাছে সম্পত্তি বিক্রি করলেও দখলে ছিলেন। বর্তমানে ওই দখলদাররা সরকারের এই সম্পত্তি শতক হারে লাখ টাকায় বিক্রি করছেন। আর যারা এই সরকারি সম্পত্তি কিনে বসতি শুরু করেছেন তা স্ট্যাম্পের মাধ্যমে। স্ট্যাম্পে লিপিবদ্ধ থাকে এই সম্পত্তি অন্য কোনো ব্যক্তি দখলে আসতে পারবে না। তবে সরকার যখন চাইবে তখন সম্পত্তি ছেড়ে চলে যেতে হবে।

রফিকুল ইসলাম নামে এক বসতি জানান, এক বছর আগে শহরতলী চাঁনপুর এলাকার রাজা মিয়া নামে এক ব্যক্তি থেকে প্রতি শতকে এক লাখ টাকা দরে আড়াই শতক সম্পত্তি কিনেছেন। রফিকুল ইসলামসহ আরও ছয় পরিবারের কাছে রাজা মিয়া স্ট্যাম্পের মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করেছে একই দরে। তারা ছয় পরিবার একই জায়গায় থাকে। বর্তমানে ওই জায়গা একটি বিশাল বাড়িতে পরিণত হয়েছে।

তিনি জানান, টাকা নেওয়ার সময় তাদেরকে স্ট্যাম্প দিয়েছেন রাজা মিয়া। উল্লেখ আছে এই সম্পত্তি কেউ দাবি করতে আসবে না। তবে সরকার যখন চাইবে তখন এই কেনা সম্পত্তি রেখে চলে যেতে হবে।

পাঁচথুবী ইউনিয়নের এক বাসিন্দা থেকে মিজানুর রহমান দোকান করার জন্য স্ট্যাম্পের মাধ্যমে সম্পত্তি কিনেছেন। তিনি জানান, বাঁধের সঙ্গে হওয়ায় প্রতি শতক দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন। তবে তারা বাঁধের পাশে চর ভরাট করে দিয়ে দোকানের জন্য।

কুমিল্লা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ ঢাকা টাইমসকে বলেন, গোমতী নদীর বাঁধের ভেতরে দখল হওয়া সম্পত্তি উচ্ছেদের জন্য আমরা সরেজমিনে গিয়ে তালিকা করেছি। ৩১৭টি স্থাপনা এবং বসতি রয়েছে সেখানে অবৈধভাবে। এসব স্থাপনা এবং বসতির কারণে নদীর সৌন্দর্য দিন দিন ম্লান হচ্ছে। এখনই উচ্ছেদ না করলে কয়েক বছর পর হুকির মুখে পড়বে নদীরক্ষা বাঁধ। আমরা তালিকাটি জেলা প্রশাসকের বরাবর দিয়েছি। খুব শিগগির আমরা উচ্ছেদ অভিযানে নামব।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর ঢাকা টাইমসকে জানান, গোমতী নদীর বাঁধ ও চরের সরকারি সম্পত্তির ওপর দখলকৃতদের উচ্ছেদ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি তালিকা দিয়েছে আমাদের। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট এবং থানায় পুলিশ আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যখনই চায় উচ্ছেদে যেতে পারে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :