উচ্ছেদের টেকসই ফল নেই

সমন্বিত মনিটরিং সেল গঠন করুন

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:০২ | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:৩২

আরিফুর রহমান দোলন

ঢাকা মহানগরীর ফুটপাত ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রায়ই অভিযান চালায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দখলমুক্তও করা হয়। কিন্তু তা বেশি দিন টেকে না। কদিন বাদে এমনকি ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে তা আবার বেদখল হয়ে যায়। এভাবেই চলে আসছে কী সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ রেলওয়ে কিংবা সড়ক বিভাগের জায়গা নিয়ে। কদিন পর পর এলাকার মানুষ উচ্ছেদের সার্কাস দেখে।

একইভাবে বিভিন্ন সময় আমরা বড় বড় বসতি উচ্ছেদের ঘটনা দেখেছি। হাজারো পরিবারের সঞ্চয়-সম্পদ ধ্বংস হয়েছে তাতে। পরে আবার সেসব বসতি জাঁকিয়েও বসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য বসতি উচ্ছেদে তেমন একটা উদ্যোগ দেখা যায় না। বসতির বাসিন্দারা নগরের অংশ হয়ে গেছে। তাদের পুনর্বাসনে জোর দেওয়া হচ্ছে। এটা একটা ভালো ভাবনা।

বছরের পর বছর এই যে উচ্ছেদ-আর বেদখলের ইঁদুর-বিড়াল খেলা হচ্ছে, এটি বন্ধে কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি কখনো। একই গথবাঁধা চিত্র: আনসার-পুলিশ আর বুলডোজার নিয়ে এসে স্থাপনা ভাঙা হচ্ছে, কিংবা ফুটপাতের দোকানিদের দাবড়ানি দিয়ে খেদানোর পর যার যার দপ্তরে ফিরে যায় আভিযানিক দল। এরপর তা দখুলমুক্ত থাকল কি না দেখা, কিংবা সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। কর্তৃপক্ষ যেন ধরেই নেয়, উচ্ছেদের পর তাদের কাজ শেষ, আর বেদখল হবে না। তা না হলে বছরের পর বছর এভাবে চলছে কীভাবে?

প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূসম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ আছে। কম-বেশি জনবলও রয়েছে তাদের। তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছেন না বলেই মনে হয়। কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের পরিচালনা করতে পারছেন কি না সংশয় হয় আমাদের। অবশ্য পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবের কথা শোনা যায়। আবার বেদখলের নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রশাসনের নানা মহলের লোকজনকে ‘ম্যানেজ’ করে দখলদারি বজায় রাখে বলে তাদের সমঝে চলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, এ অসায়ত্বও প্রকাশ পায় কারও কারও মাঝে।

আমাদের মতো দেশে দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামো আর রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দাপটের কাছে নতি স্বীকার অস্বাভাবিক কিছু নয়। আবার সরকারি উচ্চমহলের সরাসরি নির্দেশনা থাকলে যে উচ্ছেদের পর তা বজায় রাখা যায়, তার প্রমাণ সাম্প্রতিক সময়ে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ। সেখানে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বড় বড় স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। তারা যে প্রভাবশালীদের তরফে বাধা পায়নি তা নয়, কিন্তু তারা বুক চিতিয়ে লড়ে গেছে। আর যাতে বেদখল না হয় সে জন্য নিয়েছে উন্নয়ন কার্যক্রম।

আমরা মনে করি, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি যেসব জায়গা বেদখল হয়ে আছে, তা উদ্ধারে নৌ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিআইডব্লিউটিএর পথ অনুসরণ করতে পারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

একই সঙ্গে আমরা মনে করি, বিশেষ করে রাজধানীর ফুটপাতসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর তা নজরদারির জন্য একটি সমন্বিত মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে। সেখানে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি পুলিশ, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা থাকবেন। বিপণি বিতানগুলোর মালিক কিংবা ব্যবসায়ী নেতারাও থাকতে পারেন তাতে।

আর সিটি করপোরেশনের তরফে একটা নির্দেশনা জারি হতে পারে, কোনো ভবন ও দোকানমালিক তার স্থাপনার সামনের ফুটপাতে হকার বসতে দেবে না। কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনের আশপাশে দোকান বসবে না। এর ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভবন কিংবা দোকান মালিক এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের কিছু ব্যক্তির হাত থাকে এসব জায়গায় অস্থায়ী দোকান বসার পেছনে।

সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ ছাড়া অবৈধ দখল উচ্ছেদ টেকসই হবে না, এটা বহু আগেই প্রমাণিত। সে কাজটি এত দিন করা হয়নি। জনগণের সম্পদ সরকারি দখলে আনতে দক্ষ ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হোক। তা হলে অবৈধ দখল উচ্ছেদের ফল টেকসই হবে বলে আমরা মনে করি।

সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা টাইমস, সাপ্তাহিক এই সময়, ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম।