‘নব্য জেএমবির আমির বাংলাদেশেই আছে’

সম্প্রতি পুলিশের ওপর বেশ কয়েকটি বোমা হামলার ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিট। তারা নব্য জেএমবির সদস্য। হামলার ঘটনায় জড়িতরা মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের আইডোলজি অনুসরণ করলেও তাদের মাঝে সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। তারা পরিকল্পিত হামলার পর সে তথ্য তাদের বাংলাদেশি আমিরের কাছে পাঠান। সে আমির বাংলাদেশেই আছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টার সময় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সর্বশেষ গুলিস্তানে পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় জড়িতদের দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ফরিদ উদ্দিন রুমি ও মিশুক খান মিজান। গ্রেপ্তারকৃত ফরিদ উদ্দিন রুমি আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক এবং মিজান নারায়ণগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিটের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র।

সোমবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকার ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিট।

এ সময়ে তাদের কাছ থেকে দুইটি একে-৭৪ টাইপ খেলনা রাইফেল, একটি খেলনা পিস্তল, তিনটি রেডি আইইডিসহ বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

ডিএমপির সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, চলতি বছর ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে পুলিশকে টার্গেট করে আইইডি হামলা করে জঙ্গিরা। এ ঘটনায় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের মধ্যে একজন গুরুতর আহত। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লা থেকে মিজান ও রুমিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা নব্য জেএমবির সদস্য। সম্প্রতি ঢাকায় যে সমস্ত বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, সে ঘটনায় যে ধরনের বিস্ফোরকদ্রব্য, আইইডি ও আলামত পাওয়া গেছে, তার সাথে এখানে পাওয়া বিস্ফোরক দ্রব্য, আইইডি ও আলামতের মিল রয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, প্রত্যেকটি ঘটনার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন সম্প্রতি পুলিশের উপর যে পাঁচটি হামলার ঘটনা ঘটেছে তা প্রতি মাসের শেষে ২০ তারিখের দিকে এবং রাত ৮ টা থেকে ১০ টার মধ্যে সংগঠিত হয়েছে। প্রত্যেক হামলায় ব্যবহৃত আইইডিগুলো ছিল রিমোট কন্ট্রোল। এরা পুলিশকে টার্গেট করার মূল কারণ হল- নব্য জেএমবির সদস্যরা দেশের প্রচলিত সংবিধান ও আইন-কানুন মানে না। পুলিশ যেহেতু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাই পুলিশকে টার্গেট করে তারা এ হামলা চালায়। এতে পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করে তারা। এ হামলার মাধ্যমে তারা সাধারণ মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করে।

নব্য জেএমবির সদস্যরা পুলিশের ওপর হামলার ক্ষেত্রে মাসের শেষ এবং রাতকে কেন বেছে নেয় এ সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, নব্য জেএমবির সদস্যরা সারামাস পুলিশকে টার্গেট করে পুলিশ কোথায় থাকে তাদের কর্মপদ্ধতি কেমন। রাতে যেহেতু অন্ধকার থাকে তাই তারা মাসের শেষে এবং রাতে হামলা চালায়। তারা প্রত্যেকটি ঘটনা সংঘটনের পূর্বে রেকি করে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, পুলিশের উপর পাঁচটি হামলার ঘটনায় তাদের পাঁচজনের একটি সেল কাজ করেছে। তাদের কাজ হলো আইইডি তৈরি করা। তাদের বোমা তৈরির কোন বাস্তব প্রশিক্ষণ নেই। তারা যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে পড়াশুনা করে তাই তারা আইইডি ডিভাইস তৈরি করে। গতকাল সোমবারের উদ্ধারকৃত তিনটি আইইডি আগেরগুলোর চেয়ে শক্তিশালী। সেখান থেকে উদ্ধারকৃত খেলনা একে-৭৪ ও পিস্তল দিয়ে তারা মূলত শ্যুটিংয়ের কাজে ব্যবহার করতো।

মনিরুল ইসলাম বলেন, এই সেলের সদস্যদের একজন আমির রয়েছে। তিনি বাংলাদেশেই আছেন। ঘটনা ঘটিয়ে তারা আমিরের কাছে তথ্য দেয়। আইএস এর সাথে সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো আইএসের আইডোলজি অনুসন্ধান করে আইএসের অর্থ সংগ্রহের জন্য। আসলে এদের সাথে আইএসের কোন সম্পৃক্ততা আমরা পাইনি।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, বাকি চারটি মামলার তদন্ত চলছে। আমাদের শনাক্তকৃত পাঁচজনের মধ্যে ইতোমধ্যে দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় রুমির স্ত্রী জান্নাতুল ফোয়ারা অনুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। তবে তিনি ঘটনার সাথে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/এএ/ইএস