‘নীতি ও সমন্বয়ের অভাবে ধুঁকছে পর্যটনশিল্প’

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:২৫
মো. বদরুজ্জামান ভুঁইয়া

বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও বিদেশি পর্যটকদের টানতে না পারার পেছনে সমন্বিত উদ্যোগ না থাকাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অফুরান সম্ভাবনার খাতটিতে সঠিক পরিকল্পনা আর পর্যটনে যথার্থ ধারণা রাখেন না এমন লোকদের নীতিনির্ধারক বানানোয় বাংলাদেশে পর্যটনের বিকাশ হচ্ছে না।

সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯ প্রকাশ পেয়েছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যটন খাতে বৈশ্বিক গড় সূচকে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। তবে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা, অবকাঠামো ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে উন্নয়নের মধ্য দিয়ে পর্যটন সক্ষমতায় বেশ ভালো অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়াবহ হামলার পর থেকে বাংলাদেশে পর্যটনে কিছুটা ভাটা পড়ে। আর সেই হামলার সময় অনেক দেশ বাংলাদেশের ওপর ‘ভ্রমণ সতর্কতা’ জারি করে। সেই হামলার পর তিন বছর কেটে গেলেও সেটা এখনও প্রত্যাহার করেনি অনেক দেশ।

এ অবস্থায় দেশে সার্বিকভাবে বিদেশি পর্যটক কমছে বলে জানিয়েছেন এ খাতের বেসরকারি উদ্যোক্তারা। তবে জাতীয় পর্যটন সংস্থা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) কাছে বিদেশি পর্যটক আগমনের কোনো পরিসংখ্যানই নেই।

বৈশ্বিক গড় সূচকে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকা বা বিদেশি পর্যটকদের না টানতে পারার জন্য বেশ কয়েকটি বিষয়কে দায়ী করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান মো. বদরুজ্জামান ভুঁইয়া।

ঢাকা টাইমসের সঙ্গে একান্ত আলাপে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেন তিনি। বিদেশি পর্যটকদের না টানার পেছনে তিনি প্রধানত চারটি কারণ চিহ্নিত করেন। ‘প্রথমত, পর্যটন খাতে সমন্বিত উদ্যোগের অভাবকে দায়ী করেন। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে দক্ষ ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন তিনি। তৃতীয়ত, পর্যটনের সঠিক লোক সঠিক জায়গায় নেই অর্থাৎ দক্ষ গবেষকদের কাজে না লাগিয়ে অদক্ষ লোকদের সেখানে রাখা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি) থেকে যাদের এই খাতে রাখা হয়েছে তারা মোটেও যোগ্য লোক নয়। চতুর্থ কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের পর্যটন স্থানগুলোকে আধুনিক, টেকসই বা যুগপোযোগী করা হয়নি। যার কারণে বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও বিদেশি পর্যটকদের টানা যাচ্ছে না।’

গত দুই বছরে বৈশ্বিক সক্ষমতা পাঁচ ধাপ বেড়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২০তম। ২০১৭ সালে অবস্থান ছিল ১২৫তম। তালিকায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শুধু পাকিস্তানই বাংলাদেশের নিচে ১২১তম অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া ভারতের অবস্থান ৩৪তম, শ্রীলঙ্কা ৭৭তম ও নেপাল ১০২তম।

এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে পিছিয়ে থাকার দুটি কারণ তুলে ধরা হয়। প্রথমত, বাংলাদেশের ভিসার আবশ্যিক শর্ত বাড়ানো আর পর্যটক সেবা অবকাঠামোতে বাংলাদেশের অবস্থান খুব ভালো নয়।

দেশের পর্যটন খাত কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর সেইজন্য এই খাতে নীতিনির্ধারকও অনেকজন। যার জন্য কেউ চাইলেও অন্যদের কারণে আন্তরিক হয়ে এই খাতকে সামনে নিয়ে যেতে পারছে না বলে মনে করছেন ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘খাতটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় সামনে এগোতে পারছে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের ভাষ্য, তার বিভাগ ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিষয়ে পাঠ নিয়ে এখন পর্যন্ত ছয়টি ব্যাচ বের হয়েছে। কিন্তু পর্যটন খাতে ক্যারিয়ার প্ল্যান না হওয়ায় সেসব শিক্ষার্থীরা এই সেক্টরে ঢুকতে পারছে না। অথচ লাখ টাকা বেতন দিয়ে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া থেকে লোক এনে এখানে হোটেল চালানো হচ্ছে।

বদরুজ্জামান ভুঁইয়া মনে করেন, সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন না থাকায় দেশের ছেলেমেয়েরা এ খাতে কাজ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ ছেলেমেয়েরা সুযোগ পেলে পর্যটন খাতে বাংলাদেশের চিত্রই বদলে ফেলতে পারত।

পর্যটনের বিকাশ ঘটিয়েই দেশকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির পাশাপাশি অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারকে এখনই এ খাতে মাস্টারপ্ল্যান করে সত্যিকারের গবেষকদের কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি যারা পর্যটনকে ধারণ করেন তাদেরকেই এই খাতের দায়িত্ব দিতে হবে। তবেই বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/এনআই/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :