ঝরে পড়া রোধে রাতের পাঠশালা

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল
| আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ১১:২৩ | প্রকাশিত : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:২৭

রাত্রী, কণা, রুমানা, সাবিয়া ও শাহাদৎ। ওরা সমবয়সী। ওদের মতো আরও প্রায় ৭০ জন শিশু। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। ওদের অধিকাংশের অভিভাবক সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারে না। পারে না স্কুল থেকে দেয়া বাড়ির কাজগুলো করে দিতে। ফলে কোন কোন শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই ঝরে পড়তে হয়। ঝরে পড়া রোধে এসব শিশুর পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় যুব সমাজ।

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া শাহানশাহ্ আদম কাশ্মিরী মাজারের পাশেই একটি অবৈতনিক প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছে আটিয়ার যুব সম্প্রদায়- যেন এটি রাতের পাঠশালা। রাতে পড়ানোর ফলে শিশুদের স্কুলে যেতেও সমস্যা হচ্ছে না। স্বেচ্ছাসেবীর শিক্ষকদের ক্লাস নিতেও সমস্যা হচ্ছে না। উপকৃত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।

সন্ধ্যায় বাড়িতে শিশুদের পড়ার টেবিলে থাকার কথা। পরের ক্লাসের জন্য বাড়ির কাজগুলো শেষ করে দেয়া অভিভাবকদের দায়িত্ব। কর্মজীবী অভিভাবকদের সময় না পাওয়া এবং বর্তমান পাঠ্যবই সম্পর্কে ধারণা কম থাকায় অধিকাংশ অভিভাবক সন্তানদের পড়াতে পারেন না। ফলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় এসব শিশু আসে অবৈতনিক ওই স্কুলে। অভিভাবকদের যেমন করে সন্তানকে পড়ানোর কথা, ঠিক ওই দায়িত্বটি পালন করছেন যুবকরা। যেন ওরাই শিশুদের অভিভাবক। প্রতিদিনের ক্লাসের পড়া আগের দিন সন্ধ্যায় প্রস্তুত করে দিচ্ছেন কর্তব্যরত শিক্ষকরা। ছোটদের জন্য বড়দের এমন ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টায় শিশুদের উপকারের পাশাপাশি বিষয়টি স্থানীয়দের নজর কেড়েছে।

কার্যক্রম শুরুর কিছুদিন পরই টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক যুবকদের ব্যতিক্রমী এই উদ্যেগে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে প্রতিষ্ঠানের জন্য তাৎক্ষণিক দুই টন চাল বরাদ্দ দেন।

গত বছরের ২৪ আগস্ট যাত্রা শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির। অনুষ্ঠানে ছিলেন- বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি ডিরেক্টর মতিউর রহমান শরীফ, রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মীর আলমগীর হোসেন নাসিম, বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য শামসুজ্জামান পাশা।

বছরখানেক আগে একটি ঘরে শিশুদের পড়ানো শুরু করলেও এখন নাম দেয়া হয়েছে- ‘শহীদ মিজানুর রহমান অবৈতনিক নৈশ বিদ্যালয়’। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিশুরা এখানে পড়ছে। হতদরিদ্রদের বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে শিক্ষাসামগ্রী। এ সেবা শিগগিরই দশম শ্রেণি পর্যন্ত করার কথা ভাবছেন উদ্যোক্তারা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন চারজন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক। ওবায়দুল ইসলাম, সুজন, পিয়ার আলী ও আসিফ নিয়মিত শিক্ষাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

উদ্যোগটিতে সার্বিক সহযোগিতা করছেন- শামসুজ্জামান পাশা, আলী আকবর মিয়া, মীর আজিজুল ইসলাম, শেখ মোতাহার হোসেন, আতাহার হোসেন, শহিদুর রহমান, জয়নুল আবেদীন, মনিরুল ইসলাম ও রাখি আজাদ মিন্টুসহ এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা বলছেন, ‘শিশুদের এমন সেবা বিরল। এতে শিশুরা পড়ালেখায় সক্রিয় হচ্ছে। ঝরে পড়া রোধ হচ্ছে।’

অধ্যাপক এসএম শফিউল্লাহ ফোরকান বলেন, ‘অনেক অভিভাবক আছেন যারা সন্তানদের সময় দিতে পারেন না। পড়া বুঝিয়ে দিতে পারেন না। এমন শিশুদের পাশে দাঁড়ানোটা অবশ্যই প্রশংসনীয়।’

প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদের যুগ্ম-সম্পাদক জাহিদ হাসান মজলিস মুকুল বলেন, ‘শিক্ষার মান বাড়াতে ও ঝরে পড়া রোধ করতে তারা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি এবং তার সহকর্মীরা। তবে তিনি ভাড়া জায়গার সমস্যার কথা বলে একটি স্থায়ী জায়গার কথা ভাবছেন বলেও জানান।’

(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :