বিদেশের মাটিতে দেশীয় ডিগ্রি

মোহাম্মদ হানিফ
 | প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:২৯

শুধু অজানাকে জানার আর অচেনাকে চেনা নয়, জীবিকা ও জীবনের প্রয়োজনে সোনালী স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশিরা ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে। দক্ষিণ কোরিয়া ব্যয়বহুল দেশ হিসেবে বিশ্বে সপ্তম স্থান দখল করে আছে। এ দেশটিতে ১৫ হাজারেরও বেশি বংলাদেশিদের বসবাস। অ্যামপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) যারা দেশে থেকে কোরিয়াতে আসছে তার সিংহভাগ হচ্ছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র/ছাত্রী। শিক্ষাজীবনের মাঝপথে দাঁড়িয়ে তাদের স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। যৌথে উদ্যোগে সেই শিক্ষার্থীদের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে কোরিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)। বিদেশের মাটিতে বসে দেশীয় ডিগ্রি অর্জন! যেন আরেকটি স্বপ্নের দ্বার খুললো কোরিয়াস্থ বাংলাদেশি প্রবাসীদের।

শিক্ষার ক্ষেত্রটি সবসময়েই প্রসারণশীল। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালুর এটিই ছিল প্রথম উদ্যোগ। উচ্চশিক্ষা অর্জন প্রয়াসের লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস, সিউল এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ সহযোগিতায় তিন বছর মেয়াদী অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাচেলর অব আর্টস (বিএ) চালু হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি, বিশেষ করে ইপিএস কর্মীরা ওই দেশে থেকেই বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মোট ছয় সেমিস্টারে (প্রতি সেমিস্টারের মেয়াদ ছয় মাস) ২০টি কোর্স অধ্যয়নের মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব আর্টসের (বিএ) সনদ অর্জনের সুযোগ পাবেন। এছাড়া উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হলে তা ভিসার শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় বৈধভাবে অবস্থানের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসে ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) পরিচালিত ব্যাচেলর অব আর্টস (বিএ) শিক্ষা প্রোগ্রাম অ্যামপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) কর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম, বাণিজ্যিক কাউন্সিলর মো. মাসুদ রানা চৌধুরী, প্রথম সচিব (শ্রম) মকিমা বেগম।

ইতিমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানকারী বাংলাদেশ ইপিএস কর্মীদের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করার লক্ষ্যে এবং বৈধ উপায়ে ভিসার শ্রেণি পরিবর্তন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস, সিউল ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে অনলাইনে এইচএসসি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। ব্যাপক সাড়া মিলল সেই এইচএসসি প্রোগ্রামটিতে। এই প্র্রোগ্রামের সফলাতা দেখে ব্যাচেলর অব আর্টস (বিএ) শিক্ষা প্রোগ্রাম চালু করার উদ্যোগ নেয় কোরিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।

এরই ধারাবাহিকতায়, বাংলাদেশ দূতাবাস, সিউল এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ সহযোগিতায় তিন বছর মেয়াদী অনলাইন এই শিক্ষা কার্যক্রমে বিএতে ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের আগামী ৩ নভেম্বরের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কোর্সটি ১ ডিসেম্বর শুরু করা হবে। কোরিয়াতে বসে দেশের সমমানের ডিগ্রি লাভের এ সুযোগ কোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা গ্রহণ করে দেশের উন্নয়নে আরও অধিকতর অবদান রাখবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

যুগে যুগে শিক্ষার ক্ষেত্র কখনোই নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং দেশ কাল জাতি সংস্কৃতি প্রভৃতির মাঝে বিস্তৃতিই শিক্ষার মৌলিক ক্ষেত্র ও সীমানা হিসাবে বিবেচিত হয়। যদি প্রসারিত দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচিত্র দক্ষতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হয় তবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

যারা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজের পাশাপাশি লেখাপড়া করেন তারা বিচিত্র অভিজ্ঞতার কারণে বুদ্ধিমাত্রা ও মননশীলতার দিক থেকে অধিকতর সম্মৃদ্ধ হয়ে ওঠেন। নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে শেখা এবং স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার ফলে তারা অধিক স্বাধীন এবং অধিক দক্ষভাবে চিন্তা ও কাজ করতে শেখেন। যেকোনো চ্যালেঞ্জিং কাজ বা পেশায় সফল হওয়ার জন্য জরুরি অনেক গুণ তাদের মধ্যে অধিক বিকশিত হয় যা অনেক ক্ষেত্রে দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে লক্ষ করা যায় না। তাই দেখা যায়, বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মূল্যবান, এমনকি কখনো কখনো তা ব্যক্তির সামগ্রিক জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। নতুন সংস্কৃতির সাথে পরিচয় এবং সেখান থেকে অর্জিত জ্ঞান একজন ব্যক্তিকে অধিকতর আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। ফলে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পরে তার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার যথাযথ মূল্যায়ন হবে।

বিদেশে অবস্থানের ফলে আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো সম্পর্কে জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। এটা নিশ্চিত যে, বিদেশে অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফিরে আসবে। একটি ভিন্ন সংস্কৃতির জনগণ, তাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা সংশ্লিষ্ট নানা সমস্যা মোকাবেলার রীতিনীতি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের ফলে বিশ্ব সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়টি স্পষ্টভাবে অনুভব করা যায়। বিদেশে বসবাস করতে গিয়ে একটি নতুন ভাষার সাথে পরিচিতি হতে হয়। ফলে যে কেউ নতুন ভাষা শিক্ষা এবং এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে।

উচ্চশিক্ষা শুধু শিক্ষা এবং ব্যক্তিত্বকেই সমৃদ্ধ করবে না, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। বিশেষত ব্যবসা, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি এবং চাকরির ক্ষেত্রে আপনার পেশাগত দক্ষতা খুবই মূল্যবান ভূমিকা রাখবে। চাকরির বাজারে আপনার চাহিদা বেড়ে যাবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। বিদেশ ফেরত গ্র্যাজুয়েটরা আন্তর্জাতিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ এবং মাতৃভাষা ছাড়াও এক বা একাধিক ভাষাতে দক্ষ এই দুটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগ, বিশ্লষণাত্বক দক্ষতা, ভিন্ন সংস্কৃতি ও সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞাত ও দক্ষ। এদের পক্ষে নতুন পরিস্থিতিতে বিকল্প উপায় ভাবা এবং ঝুঁকি নেয়া সম্ভব হয় বলে প্রতিষ্ঠানগুলো গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সর্বোচ্চ রকম সুযোগ-সুবিধা প্রস্তাব দিয়ে থাকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে রাখার জন্য।

লেখক: দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :