উন্নয়নের কবি শেখ হাসিনা

আব্দুল্লাহ আল হাদী
 | প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:৩০

‘when the effective leader is finished with his work, the people say it happened naturally’ [ Lao Tsu ( A Chinese Philosopher )]

প্রবাদটি পড়েই আমার আমাদের নিজের দেশের কথা মনে ভেসে এলো -গ্রামের আইল ধরে হেঁটে যাওয়া ছেলেটির হাতে ইন্টারনেট, সে কখনো মনেই করেনা এগুলো তার হাতে থাকা এতো সহজ ছিল না। উবার ড্রাইভার বললেন -ট্রাফিক সিস্টেমে আরো প্রযুক্তির ব্যবহার দরকার, আমি বললাম -তারমানে যতটুকু আছে ততটুকুতে আপনি খুশি না, সে বলল -না, মানে সবকিছুতে অটোমেশন হলে ভালো হত।

আমি বললাম এই যে আমি মোবাইলের মাধ্যমে আপনার কাছ থেকে সেবা পাচ্ছি, তারমানে এতটুকুই হয়েছে বলেই তো আপনার মনে এখন আরো ডিজিটাইজেশনের চাহিদা এসেছে, আর এতটুকুও না থাকলে তো আপনি পরবর্তীটুকুও ভাবতে পারতেন না। আরো বললাম অল্প সময়ে অনেক এগিয়েছি আমরা,এখন বিশ্বাস করেন, আর দেশের প্রতি কর্তব্য পরায়ণ হন, দেখবেন সময়ে সব চাহিদায় কম বেশি মিলে যাচ্ছে।

নাগরিকেরা যেন জেনেই বসে আছে -বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন প্রবাহ মানেই বাংলাদেশ। স্কুলে পড়া শিশুরা যেন জেনেই জন্ম নিচ্ছে স্কুলে গেলে উপবৃত্তি এবং পুষ্টিকর খাবার পাওয়া যায়।বাংলাদেশের মানুষজন যেন ভুলেই যাচ্ছে চরম দরিদ্রতা এক সময় আমাদের রাষ্ট্রীয় উপাদান ছিল। সুস্থ বেড়ে উঠার পর,মানুষ নিজের অজান্তেই এক সময় যখন সে জানে যে,-সে বড় হয়ে গেছে। তেমনি বাংলাদেশের জিডিপির বৃদ্ধি কখন যে বেড়ে বড় হয়ে গেছে সুস্থ নেতৃত্বের কারণে এদেশের মানুষ তা টের পেয়েই ওঠেনি।

চলতি বছরের ২৯ আগস্ট প্রকাশিত ‘স্পেকটেক্টর ইনডেক্স-২০১৯ অনুসারে গত ১০ বছরে ১৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। স্পেকটেক্টর ইনডেক্স-এর বরাতে জানা যায়, এই সময়কালে চীন ১৭৭ শতাংশ, ভারত ১১৭ শতাংশ, মালয়েশিয়া ৭৮ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া ৪১ শতাংশ, ব্রাজিল ১৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনার উন্নয়ন কাব্যের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি শুধু ভিশন-২০২১, ২০৩০, ২০৪১, ২১০০ সালের পরিবেশ বান্ধব ডেল্টা প্লান হিসেবে এই বছরগুলোকেই সামনে রাখেননি। তিনি ঐ পর‌্যন্ত পৌঁছানোর নকশাও এমনভাবে ডিজাইন করে দিয়েছেন যে লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ম্যাজিকটা হলো তাঁর উন্নয়ন চিন্তা সুবিন্যস্ত ও পর্যায়ক্রমিক।যেমন একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, তিনি ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন প্রথমেই এসেই তিনি কিন্তু ইন্টারনেট বিস্তারে হাত দেননি।তিনি প্রথম শুরু করেছিলেন বিদ্যুতের উৎপাদনে জোর দিয়ে। কেননা তিনি জানতেন আগে বিদ্যুৎ তারপরে ইন্টারনেট। এরকম নানা সুবিন্যস্ত পথরেখা বাংলাদেশকে দিয়েছে চারিত্রিক জাগরণ।

উন্নয়নের একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে -যে রাষ্ট্র রাতের অন্ধকারে বেশি আলোকিত থাকে ধরে নেওয়া হয় সে রাষ্ট্র তত বেশি উন্নত। অর্থাৎ প্লেন থেকে নিচে তাকালে যে রাষ্ট্রকে বেশি উজ্জ্বল দেখাবে সে রাষ্ট্র তত বেশি উন্নত। এখন রাতের অন্ধকারে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ানের মতো বাংলাদেশও জ্বল জ্বল করে জ্বলে।

ছোটবেলায় আমাদের স্মার্ট হওয়ার প্রচেষ্টা দেখে আমাদের এক বড় ভাই বলতেন -স্মার্টনেস হচ্ছে আধ্যাত্মিকতা। আধ্যাত্মিক মানুষগুলোই বেশি স্মার্ট। বিশ্ববিদ্যালয় পড়া শেষের দিকে আরেকটি উৎসাহ এসে কানে লেগেছিল একটি ভাষণ থেকে, সেটিও ছিল বেশ, -‘সাদামাটা জীবন যাপন'।

মনে জাগল- শেখ হাসিনাও তবে কি সাদামাঠা জীবনের মধ্যে অতি আধ্যাত্মিকতা অনুভব করেন! তিনি কি তবে আধ্যাত্মিকতা অর্জন করতে পেরেছেন বলেই বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়ানো মহিষের কাঁধে উন্নয়ন প্রসঙ্গ!শেখ হাসিনার আরেকটি ভাষণও কানে মুখস্ত হয়ে গেছে –‘মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখতে হবে।’

মানুষ বাঁচার জন্য জন্মাতে শিখতে জানলেও এই জনপদের জনগণ তার আগে কেবল জন্মানোর জন্যই জন্মাতে শিখেছিল -অন্তত ইতিহাস তাই সাক্ষ্য দেয়। এই জনপদের মানুষকে দাসত্বের বিস্তৃত পর্যায় থেকে মানুষের মর্যাদা নিয়ে স্বাধীনভাবে প্রথম বাঁচতে শিখিয়েছিলেন তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

গোলামির পিঞ্জর ভেঙ্গে নিজেদের স্বাধীন জাতি হিসেবে চিন্তা করাতে।তাঁর প্রজন্মকে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের অস্তিত্ব দিয়ে যেতে, ইতিহাস দীর্ঘ ব্যক্তি জীবনের সবটুকু সঁপে দিতে পেরেছেন পৃথিবীতে কতজন মানুষ।

পিতার রেখে যাওয়া দ্বিতীয় বিপ্লবের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কতজন কন্যা কিংবা মানুষ নিজের জীবন সঁপে দিতে পেরেছেন।এই ভালোবাসার তুলনা বংশানুক্রমিক এবং পৃথিবীর বিরল অথচ অবিরল তিনি শেখ হাসিনা কেবল ভালেবেসে গেলেন এদেশের মানুষদের। তাঁর পিতার ভালোবাসার যমজ অনুভূতিলোক আদর্শলোকে।

আদর্শের কথা তুলছি এই কারণে আমি বঙ্গবন্ধুর জীবন-প্রণালী আমার পড়াশোনা চর্চার পর্যায় থেকে মিলিয়ে দেখেছি এত সুগভীর আর সুন্দর জীবনাদর্শ জাতি হিসেবে ধারণ করার জন্য পৃথিবীর আর কোন জাতির এই গৌরব আছে বলে আমার চোখে পড়ে নাই। বিরল এক আদর্শবান মহীরুহ।

আদর্শ মানুষকে জীবন অনুভব করতে শেখায়, দৃঢ় হতে শেখায় কল্যাণের শেষ পর্যন্ত। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে শেখায় মাথা উঁচু করে, কবি হতে শেখায় প্রাণ ভরে।

শেখ হাসিনা আদর্শ বিশ্বাস করেন, তাই তিনি কবি। তাই তিনি হাতের মুঠোয় মৃত্যু নিয়ে বারবার ফিরে আসতে পেরেছেন। চোখ মুছে নিয়ে বারবার হাসতে হাসতে বিপদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে পেরেছে, এই বাংলাদেশকে ভালোবেসে এই এক জীবনে যতটুকু কবি হয়ে উঠা যায়।

এ কবিতার শক্তি সুনিয়ন্ত্রিত শৃংখল বিক্রিয়া শক্তি থেকেও প্রচণ্ড। এবং এখন যা এই বাংলাদেশের মানুষ অর্জন করতে পেরেছে তা কেবল শক্তির সূচনা শক্তি, কেননা আজকের বাংলাদেশর মানুষ যেভাবে মাথা উঁচু করে, আদর্শ নিয়ে,ছোট ছোট করে বাঁচতে শিখে যাচ্ছে। তা একদিন দৃঢ় হয়ে -পুরো বাংলাদেশকে দৃঢ় করে যাবে শেখ হাসিনার মতো ভালোবাসার কবিতা বিশ্বাস করে। যেখানে প্রশান্তি হয়ে যাবে কল্যাণ রাষ্ট্রের লাল-সবুজের পতাকা।

মানুষ নিজ অর্জনে সদগুণের একবার যা শিখে যায় তা একসময় পুরো মানবজাতিরই হয়ে যায়।

অনেকেই শেখ হাসিনার এই জীবন্ত কাব্যকে উন্নয়নের নানা স্তরে, নানা ভাবে দেখে থাকেন। কেউ ক্রেডিট রেটিং দিয়ে এই কাব্য বিশ্লেষণ করেন,কেউ অবকাঠামো দিয়ে কেউ স্বাস্থ্যসেবার বিস্তৃতি দেখে।কেউ ডিজিটাইজেশনের অবাক করা সুবিধাদি দেখে,কেউ জাতিকে ইনডেমনিটি অর্থাৎ বিচার বহির্ভূত কলঙ্ক থেকে মুক্ত হয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে দেখে। কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে দেখে, কেউ গ্রামীণ উন্নয়নের মজবুত জীবন ব্যবস্থা দেখে।কেউ শস্য ক্ষেতে উদ্বৃত্ত ফসল দেখে।কেউ মহাকাশের মালিকানা দেখে, কেউ বিদ্যুৎ ব্যবস্থার নিরবিচ্ছিন্নতা দেখে,অনেকেই আবার সমুদ্র বিজয় দেখে, অনেকে আবার পারমানবিক শক্তির অংশীদারিত্ব দেখে। অনেকেই আবার সংবাদ পত্রসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশের বিস্তৃতি দেখে।

খেলাধুলা, অর্থনীতি, জীববৈচিত্র, টেকসই উন্নয়ন,নারীর ক্ষমতায়ন সব খানেই তিনি মাইল মাইল এগিয়ে গেছেন যেন মাইলফলক ছুঁয়ে ছুঁয়ে।

এরোপ্লেন ইঞ্জিনের গতি দেখে চাপা পড়ে যাওয়া স্বপ্নকে আবার বাস্তবিক ভাবতে শুরু করেছে মানুষ। মানুষের বিধ্বস্ত মেজাজকে আবার মানুষের মেজাজ বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা।

এক্ষেত্রে অসুবিধায় আছেন সামাজিক ব্যবসার দোকানদারেরা, সার্টিফিকেট মোটা করা ভণ্ডরা, খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছেন প্রাগৈতিহাসিকের পাঁচী কিংবা ভিখুরা। যদি বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্র হয়ে যায়,জনগণ যদি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখে যায়, তাহলে কি উপায়ে তারা সংসার চালাবে? রাষ্ট্র ভাঁড়ার টাকা ছাড়া এভাবে গাঁটের খেয়ে কতদিন পত্রিকায় রঙিন কথা বলা যাবে। দু একটা সাহায্য-টায়াজ্য আগে যা আসত এখন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়াতে বিদেশে হাত-পাতা লোকদের গুটিয়ে নিতে হচ্ছে ধীরে ধীরে। খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছে যেমন দেশ বিরোধীরাও।

দানবের ষড়যন্ত্রের বিপরীতে ব্যথা থেকে সাহসে যুগপৎভাবে শেখ হাসিনা যেন আরো বলিষ্ঠ হয়ে উঠছেন মন থেকে মানবে। হাসপাতাল থেকে বিদ্যালয়ে, পাহাড় থেকে পথে প্রান্তরে, তাঁর আগস্ট অনুভব করা ব্যথা ভরা অন্তরে।

আমার ব্যক্তি জীবনে দীর্ঘদিন হাসপাতাল শয্যায় শুয়ে থাকার অভিজ্ঞতা আছে। সে সঞ্চয় থেকে এই সত্য উপলব্দি হয়েছে যে, যারা বরং আইসিইউর বাইরে থাকে অর্থাৎ আহতের সেবাযত্নের জন্য আহতের চেয়ে তাঁর আশেপাশের লোকজনের কষ্ট অনেক বেশিই থাকে।

হত্যাকাণ্ডে নিহত হওয়া মানুষগুলোর থেকে ঐ সময়ে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর মধ্যে কষ্টের পুরোটাই বুকের মধ্যের হা হয়ে থাকে। যেন যতদিন বেঁচে থাকবে তাঁদের প্রাণ।

৭৫ এর পর এই বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আগমন। তাঁর পিতার ভালোবাসার মানুষদের জন্য অনুধাবন -বর্তমান বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিন্তায়ন, আমার মনে হয় এ সবই পিতার প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা কবিতার বিশ্লেষণ।

ঝড় বিশ্লেষণ করে মানুষ শক্ত হতে শেখে,চোখের জল বিশ্লেষণ করে মানুষ দৃঢ় হতে শেখে,কবিতা বিশ্লেষণ করে মানুষ বেঁচে থাকতে শেখে।মনুষ্য চরিত্রের বিশ্লেষণ করে -সমাজ বড় হতে শেখে।

অনেকেই বড় হওয়ার সংজ্ঞা এক এক ভাবে দেখেন-অনেকে হয়ত উদাহরণ টেনে বলবেন বর্তমানে ৯৪ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। এই সংখ্যা ২০০৯ সালেও ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ। গত এক দশকে ৪৭ শতাংশ মানুষকে নতুন করে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসতে পারা গেছে। আমি এসকল অসংখ্য উদাহরণগুলো থেকেও ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করি আমরা শেখ হাসিনার কাছ থেকে মানবিকভাবে বড় হওয়ার শিক্ষা লাভ করেছি বেশি, নেতা হিসেবে পেয়েছি বিশ্ব অস্তিত্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সম্মান।

এই আলোচনা করতে গিয়ে অনেক ব্যক্তিগত বিষয় এসে গেল। আসবেই তো, কারণ শেখ হাসিনা তো একক কোন ব্যক্তি নন। তিনি কোটি কোটি মানুষের অনুভূতি, তিনি কোটি কোটি ব্যক্তি অনুভূতির সম্মেলন।

তিনি নিমতলী বস্তি পুড়ে যাওয়া কন্যাদের অবিভাবক, তিনি শরণার্থী মানুষের আন্তর্জাতিক সমাধানের পথে যতখানি নির্দ্বিধায় হওয়া যায় মানবিক।তিনি বিশ্ব নেতৃত্বের সদ্ভাব,তিনি শ্রম ঘন মানুষের মন,তিনি মানবিক শিক্ষায় আপন, তিনি মানুষের জন্য জীবন শিক্ষার বিদ্যালয়। তিনি আমাদের প্রতিটি ব্যক্তি জীবনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো শিখতে চাওয়া মানুষের অনুভূতির আবিস্কারক। ভুতাপেক্ষভাবে যাকে বিশ্বাস করা যায় প্রাণভরে।

শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে যেমন কবি হয়ে যাওয়া যায়, আরো মনে হলো-তাঁর মতো নিরেট ব্যথার কোন সম্বন্ধ থাকলে আমিও শেখ হাসিনার মতো বড় কবি হয়ে যেতে পারতাম।

লেখক: কবি ও সাহিত্যিক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :