শরীয়তপুরে তীর রক্ষা বাঁধে ধস, এখনো ভাঙছে বসতভিটা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:৩৩

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের ভাঙন এখনো থামেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও এখনো রোধ করা যাচ্ছে না ভাঙন। ভাঙছে বসত ভিটাও। ভাঙন আতঙ্কে এলাকাবাসী বাড়িঘর ভেঙে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার কথা বলা হলেও ভূক্তভোগীরা অনেকই সরকারি সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম নিজে ভাঙন এলাকায় থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম মনিটর করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মানদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের দুই শ মিটার এলাকা হঠাৎ ধসে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি মসজিদ, দুটি পাকা ভবন ও ১০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়। ভাঙন রোধে কাজ শুরু করে পনি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু কোনোভাবেই থামছে না ভাঙন। থেমে থেমে এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। আতঙ্কে আশপাশের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তা ও খোলা মাঠে আশ্রয় নিয়েছে। জীবনের শেষে আশ্রয়টুকু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

সিরাজ দেওয়ানের স্ত্রী রানি বেগম জানান, ‘নদী ভাঙার পর অনেক কষ্ট করে জমিটুকু কিনে এখানে বসতি গড়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না। এখন কোথায় যাব। কিভাবে বাঁচব, বুঝে উঠতে পারছি না।’ এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

আরেক ভূক্তভোগী মানজুমা বেগম বলেন, ‘চার পাঁচ ভাঙার পর এখানে বাড়ি করেছিলাম। তাও এখন নদী নিয়ে যাচ্ছে। এখন শরীরে শক্তিও নেই। কাজও করতে পারি না। আমাদের আর বাঁচার আশা নাই। যদি কেউ সাহায্য করে তাহলে বাঁচতে পারব। রাস্তা ছাড়া কোথায় উঠব। ঘর ভেঙে রাখার জায়গাও নাই।’

এদিকে ভাঙন থেকে বাঁচার জন্য স্থানীয় মুলফৎগঞ্জ মাদ্রাসায় শনিবার বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বাইতুল মুকাররমের ভারপ্রাপ্ত খতিব মাওলানা মিজানুর রহমান। মোনাজাতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবার হোসেন অপু ও বাহাদুরপুরের পীর মাওলানা আব্দুল্লাহ হাসান অংশ নেন।

মোনাজাত শেষে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ভাঙন রোধের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি জাহাজের মাধ্যমে ব্লক ফেলা হচ্ছে। বিকালের মধ্যে আরও দুটি জাহাজ ব্লক ফেলার কাজে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। ভাঙন রোধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা অসহায় ভাঙন কবলিত মানুষে পাশে থাকব।

উল্লেখ্য, গত বছর নড়িয়ার আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছিল। ভাঙনে ওই এলাকার সাড়ে ছয় হাজার পরিবার গৃহহীন হয়। নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অসংখ্য স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙন ঠেকাতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এক হাজার ৯৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নৌবাহীনির প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডকে ওই কাজের কার্যদেশ প্রদান করেন। যার মধ্যে ৫৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে নড়িয়ার সুরেশ^র হতে জাজিরার কায়ুমখার বাজার পর্যন্ত আট দশমিক নয় কিলোমিটার অংশে নদীর তীর রক্ষার কাজ। বাকি টাকা দিয়ে নদীর চরখনন করা হবে। গত বছর ১২ ডিসেম্বর ওই প্রকল্পের নদীর তীর রক্ষার কাজ শুরু করা হয়।

ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :