সাক্ষাৎকারে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম

জাতীয়ভাবেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ চাইব

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:৪১ | আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২৩:৫৮

অনলাইন ডেস্ক

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের কার্যনির্বাহী সভায় ক্যাম্পাসে সকল ধরনের ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

যদিও ডাকসুর ভিপি এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে বলেছেন, যেসব ধর্মভিত্তিক দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নিয়ে রাজনীতি করছে তাদের ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণে ডাকসু বা ঢাবি কর্তৃপক্ষের কোনো এখতিয়ার নেই। আর ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সংগঠন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে আইনি লড়াই চালানোর ঘোষণা দিয়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে দৈনিক ঢাকা টাইমসের মুখোমুখি হয়েছেন ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসাইন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাবি প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম।


ঢাকা টাইমস: কেন ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে?
সাদ্দাম: জাতীয় রাজনীতিতে আমরা ধর্মের সঙ্গে কোনো ধরনের আপোষ দেখতে চাই না। ৭২ এর সংবিধানে আমরা প্রত্যাবর্তন করতে চাই। ৭২ এর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার যে ঐতিহ্যটি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান লাখো শহীদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে করেছিলেন সেটির সুস্পষ্ট সন্নিবেশ চাই। জাতীয় রাজনীতিতেও যেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় সেটি আমরা চাই। যুগে যুগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পথ দেখিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই মানুষের কাছে আলোর দিশারী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমরা মনে করি ডাকসুর দেখানো পথ ধরে আগামীতে জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে। সকল ধরনের সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী রাজনীতি সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত হবে সেটির জন্যই ডাকসু গোটা বাংলাদেশকে বার্তা দিচ্ছে।


ঢাকা টাইমস: ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বলছে এই সিদ্ধান্ত সংবিধান পরিপন্থী। সংবিধানের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার ডাকসুর নেই।

সাদ্দাম: এটিই সংবিধানসম্মত সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করি। আমাদের সংবিধান দাঁড়িয়ে রয়েছে চারটি স্তম্ভের ওপর।  তা হলো- ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ , গণতন্ত্র  ও সমাজতন্ত্র। রাষ্ট্রের আইন কানুন প্রণয়নে, রাষ্ট্রের আইনি কাঠামো এবং রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজসহ সকল কর্মকাণ্ডের আমাদের এই চার নীতির আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

আর এক্ষেত্রে ডাকসুর এখতিয়ার অবশ্যই রয়েছে। ডাকসু হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ ১৯৭৩ এর অধীনে একটি গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে আইনের অধীনে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয় সেটির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে ডাকসু। সেখানে ডাকসু সকল সদস্যের সর্বসম্মতির ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে সকল ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এটির একটি আইনি দিক রয়েছে যেটি ১৯৭৩ এর আইন দ্বারা প্রমাণিত। একইসঙ্গে এটির একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার রয়েছে যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের একটি রাজনৈতিক দিক রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমরা কোনো ধর্মীয় রাজনীতি দেখতে চাই না। আমরা মনে করি যে সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশে সার্বিকভাবে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।

ঢাকা টাইমস: ভিপি নুর বলছে ধর্মভিত্তিক না বরং উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। তার বক্তব্যের সঙ্গে আপনি একমত কি না?

সাদ্দাম: ভিপি নুরের বিবৃতিটি আমি দেখেছি তিনি সেখানে স্পষ্ট মিথ্যাচার করেছেন। তার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলার যে প্রবণতা সেটি তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন। ওই দিনের সভায় ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিল। এ নিয়ে যখন আলোচনা হয় তখন ভিপি ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতিকে এক ধরনের বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছিলেন শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক বা উগ্রবাদী রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করা যায় কি না। পরবর্তীতে অন্যদের যুক্তির সামনে তিনি শ্যাম রাখি না কুল রাখি এমন অবস্থার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল । পরে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উত্থাপন করা হয় তিনি এটার বিরোধিতা করেননি বরং সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। এরপরও ডাকসুর সভাপতি আখতারুজ্জামান স্যার যখন বলেছিলেন এ বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত আছে কি না তখনো ভিপি এর কোনো বিরোধিতা করেননি এবং সুস্পষ্ট হবে এটি পাস হয়।

ঢাকা টাইমস: বাংলাদেশে প্রায় অনেক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত। সেক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক কি না?

সাদ্দাম:  রাজনৈতিক দলগুলো আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) এর অধীনে পরিচালিত হয়। সে আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে একটি রাজনৈতিক দলকে যদি নিবন্ধিত হতে হয় সেক্ষেত্রে তার কোনো ছাত্র সংগঠন থাকার সুযোগ নেই। ছাত্রসংগঠনগুলো স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে। ছাত্রলীগ কিন্তু স্বাধীনভাবে তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। অতএব জাতীয়ভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল আছে কি নেই সেটার সঙ্গে ছাত্র রাজনীতির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

ঢাকা টাইমস: ধর্মের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো আলাদা। এখন এটাকে যৌক্তিক মনে করেন কি না?

সাদ্দাম:  এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের একটি প্রচলিত প্রথা হিসেবে প্রচলিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন দিক থেকে এটিকে দেখতে হবে। আগের প্রথা রীতি অনুযায়ী এটি পরিচালিত হচ্ছে। আর এটিরও একটি বিশেষত্ব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুনভাবে যে কর্মকা- পরিচালিত হবে সেটির ক্ষেত্রে এটি করার সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে ঐতিহ্যের প্রতিও আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে।

ঢাকা টাইমস: এখন  তো নতুন একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ধর্মের ভিত্তিতে আলাদা সিট বরাদ্দের বিরুদ্ধে ডাকসু পদক্ষেপ নেবে কি না ?

সাদ্দাম: ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে প্রগতিশীল আশা-আকাঙক্ষাকে আমরা যে ঊর্ধে তুলে ধরেছি সেটিকে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করার জন্যই এই প্রশ্নটি সামনে আনা হচ্ছে। আমরা মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি দৃশ্যমান কোনো সমস্যা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান যে বাস্তবতা রয়েছে সেটি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

ঢাকা টাইমস: ছাত্ররা বলছেন জগন্নাথ হলে ইসকন কি তাদের কার্যক্রম এখন পরিচালিত করতে পারবে?

সাদ্দাম: আমরা ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলেছি। যেকোনো সামাজিক সংগঠন তাদের কাজ পরিচালনা করতে পারবে আর শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগতভাবে ধর্ম পালন করবে। সেখানে বাধা দেওয়ার অধিকার আমাদের নেই। তার প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে।

ঢাকা টাইমস: আপনি বলেছিলেন ‘গানের বাংলাদেশ প্রেমের বাংলাদেশ চাই’। এটা বিনির্মাণে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাঁধা হলে সরকার কেন এটাকে নিষিদ্ধ করছে না বলে আপনার মনে হয়?

সাদ্দাম: আমরা সরকারের কাছে সে আহ্বান ইতিমধ্যে জানিয়েছি। সেটির আলোকে ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার একটি প্রচেষ্টা সরকারের রয়েছে এবং উগ্রবাদ যেসব ছাত্র সংগঠন সেগুলো নিষিদ্ধ করার একটি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমরা চাই এ প্রক্রিয়া আরও বেগবান হোক এবং প্রয়োজনীয় যেসব ধারা সংযোজন বিয়োজন করার প্রয়োজন সেসব করার জন্য আমরা ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাব।

ঢাকা টাইমস: সংবিধান সংশোধন করে জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন কি না?

সাদ্দাম: আমরা সরকারকে আহ্বান করব আপনারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিষয়ে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিষয়ে ৭২-এর সংবিধানে ধারাবাহিকভাবে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করুন। আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে এ বিষয়ে ঐক্যমত তৈরি করার আহবান জানাব এবং সংবিধানে যেন এই বিষয়টি সংযোজন করা হয় সে আহ্বানটুকুও রাখব।

ঢাকা টাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।
সাদ্দাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।