তিতাসের পরিত্যক্ত কূপের গ্যাসে কোটি টাকা বাণিজ্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:২৫ | প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:০৭
এগুলো ইন্টারনেট কিংবা ক্যাবল লাইন নয়। পরিত্যক্ত কূপের গ্যাস তুলে এই প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে।এগুলো ইন্টারনেট কিংবা ক্যাবল লাইন নয়। পরিত্যক্ত কূপের গ্যাস তুলে এই প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে।

দূর থেকে দেখলে মনে হয় ইন্টারনেট অথবা ক্যাবল লাইনের সংযোগ। কিন্তু বাস্তবে তা নয়, এগুলো হলো ‘হাওয়াই গ্যাস সংযোগ’। তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের একটি পরিত্যক্ত কূপ থেকে ছড়ানো গ্যাস অবৈধভাবে তুলে গাছের ডাল আর বাড়ির ওপর দিয়ে প্লাস্টিকের পাইপে করে তা নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন গ্রামে। সংযোগ দেওয়া হচ্ছে বাড়িতে-কারখানায়।

এই ভয়ানক চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বাকাইল, শ্যামপুরসহ প্রায় সাতটি গ্রামের। অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র (সিন্ডিকেট)।

এভাবে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে গ্যাস উত্তেলন ও সরবরাহ ভয়ানক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে পরিবেশের জন্য। অগ্নিদুর্ঘটনার আতঙ্ক তো আছেই। অন্যদিকে বিপুল টাকার গ্যাস-বাণিজ্যে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেই তিতাসের কিংবা প্রশাসনের। যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি তারা এর বিরুদ্ধে আগে একবার অভিযান চালিয়েছে। এবার বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হবে।

বছর দশেক আগে ২০০৮ সালে তিতাস গ্যাসফিল্ড তাদের ৩ নম্বর কূপটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বাকাইল, শ্যামপুর, আনন্দপুরসহ আশপাশ এলাকার মাটির নিচে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে মাটি, নদী, খালসহ বিভিন্ন স্থান থেকে গ্যাস উদগীরিত হতে থাকে। এসব গ্যাস অবৈধভাবে উত্তোলন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।

বাকাইলের একটি চক্র নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গ্যাস তুলে বাসাবাড়িসহ ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানাতে সংযোগ দিতে থাকে। গ্যাস সংকটের কারণে সরকার আবাসিক সংযোগ বন্ধ রাখলেও এ এলাকার পাঁচ-সাতটি গ্রামে অবৈধ গ্যাস সরবরাহ করছে চক্রটি। অনেকটাই খোলামেলাভাবে গ্যাস বিক্রি করে চক্রটি মাসে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাকাইল ও আশপাশের গ্রামের নলকূপের পাইপ বসিয়ে জমি থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এরপর সড়কের পাশ দিয়ে গাছের ডালে, বাসাবাড়ির ওপর দিয়ে প্লাস্টিকের পাইপ এঁকেবেঁকে হ্ওায়াই গ্যাস নিয়ে যাচ্ছে দূরদূরান্তে। গ্যাসের পাইপগুলো দূর থেকে দেখলে মনে হয় ইন্টারনেট অথবা ক্যাবল লাইনের সংযোগ।

সাধারণত মাটির নিচ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। পরিত্যক্ত গ্যাসের কূপ থেকে অবৈধভাবে তোলা গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয় ওপর দিয়ে তার টানার মতো। তাই একে অনেকে বলে ‘হ্ওায়াই গ্যাস’। বছরের পর বছর ধরে এ ঝুঁকিপূর্ণ পন্থায় অবৈধভাবে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করা হচ্ছে।

কয়েক হাজার বাড়িতে রান্নার কাজ আর বেশ কয়েকটি কারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে এই গ্যাস। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি, যারা এই গ্যাস ব্যবহার করেন, ঢাকা টাইমসকে জানান, এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন জমিতে নলকূপের পাইপ বসিয়ে গ্যাস তুলছে। এরপর তা প্রসেস করে বাসাবাড়ি ও কারখানায় সংযোগ দিচ্ছে। চুলাপ্রতি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা নিচ্ছে চক্রটি। পুরো এলাকায় কয়েক হাজার গ্যাস সংযোগ দিয়েছে তারা। মাঝারি কিছু শিল্পকারখানা, যেমন পাথর গলিয়ে চুন করার জন্য এ গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান ওই ব্যক্তিরা।

স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর অবৈধভাবে গ্যাস-বাণিজ্য চললেও প্রশাসন নির্বিকার। রাস্তাঘাটসহ বসতবাড়ির আশপাশে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে যেভাবে সংযোগ দেয়া হয়েছে, তাতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য সব সময় আতঙ্কিত থাকেন তারা।

সরেজমিনে জানা গেছে, অবৈধ গ্যাসকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু কারখানা। সিলেট থেকে পাথর এনে চুন তৈরি করা হচ্ছে এই গ্যাস ব্যবহার করে। এসব কারখানায় গ্যাস বিক্রি থেকে মাসে আদায় করা হচ্ছে লাখ-লাখ টাকা। এলাকার প্রভাবশালী মহলের কয়েকজন এই গ্যাস-বাণিজ্য করে বর্তমানে কোটিপতি।

এভাবে গ্যাস ব্যবহারে কখনো কোনো প্রশাসনিক বাধা পাননি বলে জানান একটি চুন ফ্যাক্টরির মালিক বাবু মিয়া। তিনি দাবি করেন, তারা মাটি থেকে গ্যাস সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে তা ব্যবহার করছেন। এভাবে গ্যাস ব্যবহারে এখন পর্যন্ত কোনো বাধা বা নির্দেশনার কথা শোনেননি তারা।

পরিত্যক্ত কূপের গ্যাস তুলে অবৈধভাবে বিক্রি প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তিতাস গ্যাস। তারা ওপরের নির্দেশের অপেক্ষায় আছে। বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাহিদুর রেজা বলেন, ‘ওপরের নির্দেশ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

তবে জেলা প্রশাসন আগে অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল দাবি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খাঁন বলেন, ‘যারা এ অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করেন তাদের বিরুদ্ধে এর আগে অভিযান করেছি। আগামীতে আরও বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :