বাম্পার ফলনেও হাসি নেই ভোলার আখচাষিদের মুখে

ইকরামুল আলম, ভোলা
 | প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:২৬

কোনো রোগ ও পোকার আক্রমণ না থাকায় এ বছর ভোলায় আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর জেলায় আখের ফলন অনেক বেশি হওয়ায় বিগত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন ছিল চাষিদের। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে আখের যথাযথ দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন চাষিরা। এতে ক্ষতির মধ্যেই থাকতে হচ্ছে তাদের।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য সূত্রে জানা যায়, এবছর ভোলা জেলায় ৮২৪ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৪ হেক্টর বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার ৭২০ মেট্রিক টন। এ হিসাব অনুসারে এবছর আখের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে।

উৎপাদন বেশি হলেও একটি সংবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্রের কারণে আখচাষিরা তাদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। খুচরা বাজারে এক পিস আখের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা হলেও পাইকারি বাজারে আখের সর্বনি¤œ দাম দুই টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২২ টাকা। আখচাষিদের অভিযোগ, মধ্যসত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের কারণে পাইকারি বাজারে আখের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। যার কারণে অনেকে কম মূল্যে আখ বিক্রি করছেন। আবার কেউ কেউ আখের দাম কম পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বাজারেই আখ ফেলে রেখেছেন।

ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া এলাকার আখচাষি আব্দুল জলিল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ বছর আমি দুই একর জমিতে আখের চাষ করেছি। এতে আমার প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষেতে কোনো পোকা-মাকরের আক্রমণ নেই বলে ব্যাপক ফলন হয়েছে। সঠিক দাম পেলে আমার অনেক টাকা লাভ হতো। কিন্তু সেই দাম আমরা পাচ্ছি না।’

ভোলা সদরের পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের আখচাষি মো. ফিরোজ মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা বাজারে আখের সঠিক দাম পাই না। কারণ ভোলা সদরে ৩-৪ জন পাইকার থাকলেও একটি মাত্র আড়ৎ রয়েছে। যার কারণে আড়ৎ থেকে যে দাম নির্ধারণ করে দেয় সেই দামে আামাদের বিক্রি করতে হয়।’

অন্যদিকে চাষিরা পাইকারি বাজারে আখের ন্যায্যমূল্য না পেলেও খুচরা বাজারে চড়া দামে আখ বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

ভোলা শহরের নতুন বাজার এলাকায় আখ কিনতে আসা মো. আরিফ হোসেন জানান, খুচরা বাজারে আখের চড়া দাম। প্রতিটি আখ ৬০-৮০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ পাশের আড়তে আখের দাম অনেক কম।

ওই এলাকার খুচরা আখ বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আড়ৎ থেকে প্রতি একশ আখ ৪-৫ হাজার টাকা দামে গড়ে কিনতে হয়। অথচ আড়ৎদাররা ক্ষেতের চাষিদের কাছ থেকে একই আখ ৫০০-১০০০ হাজার টাকায় কিনে। আর আমাদের কাছে তারা অধিক দামে বিক্রি করে। তাই আমরা লাভের জন্য বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’

ভোলা শহরের নতুন বাজার এলাকার আখের আড়ৎদার মো. ইয়ামিন মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ বছর ভোলা জেলায় আখের ব্যাপক ফলন হয়েছে। ভোলার বাজারে প্রচুর আখ উঠছে। চাহিদার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আখ বাজারে উঠায় বাজারমূল্য একটু কম। কারণ ক্রেতার সংখ্যা কম। তবে বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। বাজার দাম কম পাওয়ায় কৃষকরা সিন্ডিকেটের কথা বলে। এ ছাড়া ভোলায় কোনো চিনির কল থাকলে চাষিরা আরও বেশি দামে আখ বিক্রি করতে পারতো।’

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ দেবনাথ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কৃষি বিভাগের সঠিক তদারকি থাকায় এ বছর ভোলা জেলায় আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে কৃষকরা আখের সঠিক দাম পাচ্ছেন না। আমরা আখের সঠিক দাম পাওয়ার জন্য আড়ৎদারকে কাছে না গিয়ে কৃষকদের নিজ উদ্যোগে আখ বিক্রি পরামর্শ দিয়েছি।’

ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :