চার দশকে ফারাক্কায় ব্যাপক ক্ষতি

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:৪৭ | প্রকাশিত : ০২ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:০৭
ফাইল ছবি

ভারতের গঙ্গা নদীতে বিতর্কিত ফারাক্কা ব্যারাজ চালুর পর গত চার দশকে ভারত-বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ১৮ কিলোমিটার উজানে এই বাঁধটি গঙ্গা অববাহিকায় পরিবর্তন ঘটিয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় বিপদটা পানি বণ্টনের। বাংলাদেশে শুষ্ক মৌসুমে যখন পানি দরকার তখন প্রাপ্য পানিও জোটে না।

আবার বর্ষা মৌসুমে ভারতের বিহারসহ কিছু অঞ্চলে বন্যা দেখা দিলে খুলে দেয়া হয় ফারাক্কা বাঁধের গেট। এর ফলে পদ্মায় পানি বেড়ে তলিয়ে যায় পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলা। ক্ষতি হয় কৃষির। বাস্তুভিটে হারাতে হয় অনেককে।

ফারাক্কা বাঁধ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদের গঙ্গা নদীর ওপর তৈরি হয়েছে। লম্বায় এটি দুই হাজার ২৪৫ মিটার। বাঁধে ১০৯টি লকগেট রয়েছে। ভারত ১৯৬১ সালে এই বাঁধ ও সেতু নির্মাণ শুরু করে। ১৯৭৫ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল এটির ওপর গাড়ি চলাচল শুরু হয়। আর নির্মাণের প্রায় ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ফারাক্কার পানি বণ্টন চুক্তি করে ভারত।

ফারাক্কা বাঁধের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ১২ হাজার ৭০০ যানবাহন চলাচল করে। ফারাক্কা বাঁধ ও সেতুর সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, অরুণাচল ও নাগাল্যান্ডের যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। সেই সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও এটি সংযুক্ত রয়েছে।

ফারাক্কার প্রভাবে ক্ষতি শুধু বাংলাদেশেরই নয়, ভারতের কয়েকটি রাজ্যও এর ভুক্তভোগী। এর মধ্যে বিহার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধ সরিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। প্রথম কোনো ভারতীয় রাজনীতিক হিসেবে তিনিই এর বিরুদ্ধে কথা বলে আসছেন। এখন বিহারে প্রতি বছর বন্যার জন্য ফারাক্কা বাঁধকেই দায়ী করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ফারাক্কার সমস্যা তুলে ধরে একটা স্থায়ী সমাধানও চাইছেন বিহারে তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার।

যদিও শুরু থেকেই ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে ছিলেন ভারতের নদী বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ফারাক্কার প্রভাবে নদীর স্বাভাবিকতা হারিয়ে গঙ্গার উজানে বিহার ও উত্তর প্রদেশ এবং ভাটিতে সুন্দরবন পর্যন্ত পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। বাঁধের কারণে গঙ্গার উজানে বিপুল পরিমাণ পলি জমে প্রতি বছর বন্যার শিকার হচ্ছে ভারতের বিহারসহ উত্তর প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। আর গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি আটকে রাখার ফলে নদীর স্বাভাবিক গতি হারিয়ে গেছে। ক্ষতির শিকার হয়েছে বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চল।

ফারাক্কা বাঁধের কারণে কৃষি ও মৎস্যসম্পদের ক্ষতি হয়েছে অপরিমেয়। বিশেষ করে ইলিশ মাছ এবং চিংড়ি মাছের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। তাদের প্রজণনে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, সংখ্যা কমে গেছে। এ ছাড়া অন্যান্য মাছেরও ক্ষতি হচ্ছে। আর উপকূল এলাকায় মানুষ একটা মিষ্টি পানির ওপর নির্ভরশীল যাদের জীবন, সেটা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সবশেষ গত সোমবার বিকালে ফারাক্কার প্রায় সবগুলো গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এর ফলে গত সোমবার থেকে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একাধিক জেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে।

রাজশাহীতে গিয়ে দেখা যায় উজান থেকে আসা পানির প্রচণ্ড স্রোত। শহরে টি বাঁধ হিসেবে পরিচিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক নম্বর গ্রোয়েনে ছোট ভাঙন ধরেছে।

বাংলাদেশের নদীগবেষণা ইনস্টিটিউট ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, ফারাক্কা বাধ দেয়ার আগে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ ছিল ৬০ থেকে ৮০ হাজার হাজার কিউসেক। আর গঙ্গা চুক্তিতে অন্তত ২৭ হাজার কিউসেক পানি বাংলাদেশের পাওয়ার কথা রয়েছে। তবে সে পরিমাণ পানি বাংলাদেশ পায় না বলেই অভিযোগ রযেছে।

(ঢাকাটাইমস/০২অক্টোবর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :