বইয়ে বঙ্গবন্ধুকে ‘অবমাননা’, কাজী এরতেজার লড়াইয়ের এক বছর

প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:১৬ | আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

তথ্য গোপন করে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থে ইতিহাস বিকৃতি বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমনানা করার অভিযোগ এনে ঠিক এক বছর আগের এই দিনে মহামান্য হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলেন ভোরের পাতা ও দ্য পিপলস টাইমস সম্পাদক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য ও ধর্ম  বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং এফবিসিসিআই পরিচালক  ড. কাজী এরতেজা হাসান।

পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা যারা এখনো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক এ লড়াই আমৃত্যু চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ড. কাজী এরতেজা হাসান। ঘটনা প্রবাহের এই সময়ে হাইকোর্ট বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভর্ৎসনা থেকে শুরু করে বইটি বাজারজাত করার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এমনকি রিটকারী ড. কাজী এরতেজা হাসানকে স্বশরীরে হাইকেোর্টে গিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখা করার জন্যও ডাকা হয়েছিল। সেখানে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বেোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চূড়ান্তভাবে আদালতের মাধ্যমেই জয়ী হবেন বলে বিশ্বাস রেখে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

দীর্ঘ এক বছরে শুধু হাইকোর্টে এই সংক্রান্ত রিট আবেদন করার কারণে নানা মহলের হুমকিও পেয়েছেন। তবুও একটি বারের জন্য সমঝোতা বা আপোস করার মানসিকতাও দেখাননি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসাবে। তিনি বারবারই উচ্চারণ করেছেন, যত বাধাই আসুক না কেন; আমি আমার এ লড়াই চালিয়ে যাবোই।

এ প্রসঙ্গে ড. কাজী এরতেজা হাসান বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংসতম ভোর এসেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি ও মার্কিন ষড়যন্ত্রে লালায়িত চেতনা আবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়েই নয়, কয়েক মাসের ব্যবধানে জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে হত্যা করেছিল একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসররা। এখনো একাত্তর ও পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মারা ঘুরে বেড়াচ্ছে এই স্বাধীন বাংলাদেশে। এই দেশের আলো বাতাসে বেড়ে উঠলেও তাদের মনে এখনো পাকিস্তান প্রীতি। তাই শহীদ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করতে প্রতিনিয়তই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এখনো বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাকের বংশধররা এ দেশকে বিতর্কিত করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তবে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক সন্তান হিসাবে শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারই দাবি করছি না, বিচার দাবি করছি সেই সব কুলাঙ্গার পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের যারা শহীদ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করতে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের বিশ্ব মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আমাদের সেই আস্থা আছে। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশকে পাকিস্তানের আদর্শে পরিচালিত করতে চেয়েছিল তাদের বংশধর বা দোসরদেরও বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে। কেননা এখনো ষড়যন্ত্রকারীরা যখনই সুযোগ পায়; তখনই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত হত্যাকারীদের পাশাপাশি যারা তার আদর্শকে নষ্ট করতে চায়, তাদেরও বিচার করা এখন সময়ের দাবি। চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে অনেক অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে আইন শৃঙ্খলাকারী বাহিনী। এ বিষয়টি আমাদের দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে সহায়ক হবে বলে মনে করি। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নিজ দলের ভেতর যে শুদ্ধি অভিযান চলছে, তার সঙ্গে সঙ্গে যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে বলে মনে করেন ড. কাজী এরতেজা হাসান।

আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা ড. কাজী এরতেজা হাসান আরো বলেন, গত সপ্তাহেই মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট সারাদেশের আদালতের এজলাস কক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি টাঙানোর নির্দেশ জারি করেছেন। সেটি খোদ প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে সব আদালতেই কার্যকর হচ্ছে। আমি মনে করি, মহামান্য আদালত যেখানে ন্যায়ের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালল করেন, সেখানে যারা তার আদর্শকে হত্যা করতে চায়, তাদের ঐতিহাসিক বিচার আদালতই হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২ অক্টোবর ড. কাজী এরতেজা হাসানের রিটের পর রুল জারি করে মহামান্য হাইকোর্ট এ ঘটনা তদন্তে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন। এ আদেশ অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন।...গ্রন্থটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি-এ যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। গ্রন্থটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে মর্মে কমিটি মনে করে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গ্রন্থটিতে তদানীন্তন পকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি সংযোজন না করা শ্রেয় ছিল এবং সেটি সবার ভুল মর্মে বইটির সম্পাদক স্বীকার করেন।

বইটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা নামে দুটি কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি দুটি পাণ্ডুলিপি চূড়ান্তের পর গ্রন্থটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটি প্রকাশনার পরপরই এতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিদৃষ্ট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর গ্রন্থটির বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন এবং গ্রন্থটি রিভিউয়ের জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে রিভিউ কমিটি গঠন করেন।

উল্লেখ্য, চলতি মাসের ৩১ অক্টোবর মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রিটের ঐতিহাসিক রায় দিবেন বলেও মনে করেন রিটকারী ড. কাজী এরতেজা হাসান।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের যেমন বিচার এদেশেই হয়েছে, তেমনি তার আদর্শকে যারা হত্যা করতে চায় তাদেরও বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে। কেননা পাকিস্তানপ্রেমীরা হয়তো জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে শহীদ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বেশি ভয় পায়।

ঢাকাটাইমস/০২অক্টোবর/ ইএস