বাংলাদেশের কাছে আসার চেষ্টা পাকিস্তানের

নজরুল ইসলাম
ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:৫৭ | প্রকাশিত : ০২ অক্টোবর ২০১৯, ২৩:২৩

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের নাক গলানো, ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনারের মুক্তিযুদ্ধ ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ নানা কারণে ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরে টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ঢাকাকে পাশে চাইলেও তাতে সফল হয়নি ইসলামাবাদ।

এ ছাড়া নানা কারণে বিশে^র অনেক দেশ সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানকে এড়িয়ে চলছে। তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। টানাপোড়েনের বরফ গলিয়ে বাংলাদেশের কাছে আসার চেষ্টাও তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ইদানীং। আজ বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে কুশলবিনিময় করেন ইমরান। এর আগে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ চলাকালে শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাতের জন্য কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়েছিল ইসলামাবাদ।

কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে হাইকমিশনার নিয়োগ দিতে পারেনি দেশটি। গত বছর সাকলায়েন সাইয়েদাকে বাংলাদেশে হাইকমিশনার হিসেবে প্রস্তাব করেছিল ইসলামাবাদ। ঢাকা তাকে মেনে নেয়নি তার শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণের কারণে। নতুন করে তালিকা পাঠাতে বলেছিল ঢাকা। কিন্তু তালিকা পাঠানোর বদলে উল্টো ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে বহিষ্কারের হুমকি দেয় একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যা চালানো দেশটি।

সদ্য শেষ হওয়া জাতিংঘের ৭৪তম অধিবেশন থেকে দেশে ফিরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার দেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ফাইল অনুমোদন করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির দৈনিক ডন। গতকাল মঙ্গলবারের ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তালিকায় বাংলাদেশে পাকিস্তানের নতুন হাইকমিশনারের নামও রয়েছে।

ডন বলছে, কূটনীতিক ইমরান আহমেদ সিদ্দিকীকে ঢাকার হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিতে চায় ইসলামাবাদ। এই কূটনীতিক বর্তমানে কানাডার টরেন্টোতে পাকিস্তানের কনসাল জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ঢাকা-ইসলামাবাদ বিভিন্ন টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেলেও দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক এখনো ছিন্ন হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের কারণে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সদ্য শেষ হওয়া জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ নিয়ে ইসলামাবাদ জোর কূটনৈতিক তৎপরতাও চালিয়েছিল। কিন্তু ঢাকার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি।

ঢাকার সাড়া না দেয়ার বিষয়ে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ইস্যুতে ঢাকাকে পাশে চাইত ইসলামাবাদ। কিন্তু ঢাকার সঙ্গে গত কয়েক দশকে দিল্লির যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাতে পাকিস্তানকে সমর্থন দেওয়া ঢাকার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পাকিস্তান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর কারণে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি। তাছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক অনেক বিষয়ে একমত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ সহিংসতার মদদ পাওয়া যায় পাকিস্তানি রাজনীতিতে।’

তবে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে জানিয়ে মোহাম্মদ জমির বলেন, ‘তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসিতে আমাদের পক্ষে কথা বলেছে। কিন্তু পাকিস্তান কাশ্মীর ইস্যুতে যতই বাংলাদেশকে পাশে চাক, বাংলাদেশ সেটা কখনো করবে না। কারণ এটা ভারত-পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’

এদিকে বুধবার টেলিফোন করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন। এ সময় সম্প্রতি অস্ত্রোপচার হওয়া চোখের অবস্থা সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান পাক প্রধানমন্ত্রী।

রাষ্ট্রদূত জমির বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এক হয়ে কাজ করুক সেটা আমরা চাই। পাকিস্তান যদি অহেতুক ইস্যু তৈরি না করে তাহলে সামনে কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালোর দিকে যেতে পারে।’

ঢাকার সঙ্গে ইসলামাবাদের টানাপোড়েনের যত কারণ

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে গত ২০১৩ সালে পাকিস্তান নাক গলালে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। এর জের ধরে উভয় পক্ষই একাধিকবার দুই দেশের কূটনীতিকদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করে।

দ্বিতীয়ত, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে পাকিস্তানের সরকারি ওয়েবসাইটে মানহানিকর বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করা হয়। যে কারণে ঢাকায় পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার শাহ ফয়সালকে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। এ সময় কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। পাশাপাশি লিখিত একটি প্রতিবাদপত্রও দেয়া হয় সাবেক হাইকমিশনারকে। কিন্তু ইসলামাবাদ এ বিষয়ে ঢাকাকে কোনো জবাব দেয়নি।

তৃতীয়ত, পাকিস্তানের নিয়োগ দেওয়া নতুন হাইকমিশনার ঢাকায় বসে সরকার এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে পাকিস্তান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যার কারণে সেই কমিশনারকে ঢাকা গ্রহণ করেনি।

(ঢাকাটাইমস/২অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :