আপনাকে পারতেই হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ০৪ অক্টোবর ২০১৯, ২২:২৩ | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:৩২

রেজাউল করিম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে দেশের সাত কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। পরাধীনতার গ্লানি মুছে আমাদেরকে দিয়েছিল একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে জাতি আজ সেই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এবারে সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হলে ২০ বছরের রাষ্ট্র পরিচালনাকারী প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি পাবেন। এটা হবে স্বাধীন বাংলাদেশে মুজিব কন্যার একটি অন্যরকম রেকর্ড। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ স্বজনদের নির্মম মৃত্যুর পরও থেমে যাননি তিনি। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হন। এরপর টানা প্রায় ৩৮ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বিজয়ী হলে ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বার শপথ গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। স্বজনহারা পৃথিবীতে নানা বাধা অতিক্রম করে আজ তিনি চারবারের সফল প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতার জন্য নির্যাতিত জাতির সাত লক্ষ মানুষ সাড়া দিয়েছিলেন। সেদিন জাতি পেয়েছিল স্বাধীনতা। সেই জাতির চরিত্রের শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন মহৎ উদ্যোগে দেশের ১৬ কোটি মানুষ প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকবে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর মতো দুই শীর্ষ নেতাকে সংগঠন থেকে বাদ দেয়ার মধ্য দিয়ে নিজ দলে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন তা জনমনে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সরকার ও শেখ হাসিনার কট্টরবিরোধী ছাড়া দেশের সব ধরনের মানুষ এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছেন। ছাত্রলীগের পর যুবলীগের শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযানে সাতজন দেহরক্ষী ও বিপুল টাকাসহ যুবলীগ নেতা খালেদসহ ক্যাসিনো থেকে ১৪২ জন আটক করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বেরিয়ে আসছে ক্যাসিনো বসিয়ে অবৈধ পথে কোটি কোটি টাকা উপার্জনকারীদের তালিকা। ক্ষমতাসীন সরকার নিজ দলের দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের শুদ্ধি অভিযান আমাদের দেশে বিরল। আমরা লক্ষ্য করেছি, কিছুদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি-অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। দুর্নীতিবাজ কেউ পাড় পাবে না এমন আওয়াজে সাধারণ মানুষের মাঝে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের এ শুদ্ধি অভিযান যদি প্রভাবমুক্ত অবস্থায় অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে বিগত দিনে জনমনে যে ক্ষোভ-হতাশা দেখা দিয়েছিল তার অনেকটার অবসান ঘটবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তিকে নিয়ে যাবে আরও উচ্চতায়।

প্রধানমন্ত্রীর এ অভিযান লাইনচ্যুত হবেন না এমনটা জাতির প্রত্যাশা। রাজধানীতে প্রশাসনের খুব কাছাকাছি এমন জায়গায় ক্যাসিনোসহ দুর্নীতি আর অপরাধের চিত্র জানান দিচ্ছে তৃণমূলে কি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এই শুদ্ধি অভিযান রাজনৈতিক নেতার পর ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি বিভাগে অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা জাতির। ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত এ অভিযান চলে আসবে এটা দেখতে স্বাধীন দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে। কোন প্রভাব খাটিয়ে নিচ্ছিদ্র অভিযান থেকে কেউ যেন বের হতে না পারে- সেটাও জাতির প্রত্যাশা।

শুধু আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠনে শুদ্ধি অভিযান করে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা যাবে না। প্রশাসনসহ বিভাগীয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতিমুক্ত করে এদের মাধ্যমে স্ব-স্ব বিভাগ দুর্নীতিমুক্ত করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। এমন সব কাণ্ড হলেও প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দার কাছে এ বিষয়ে কতোটা তথ্য থাকে সেটাও ভাববার বিষয়। কেন এসব ঘটনা সরকারের কাছে আগে জানানো হয় না? জানালে তার বিরুদ্ধে জোরাল পদক্ষেপ নেয়া হয় না কেন সেদিকেও খেয়াল রাখাটা জরুরি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন, তার জন্য প্রশংসিত হচ্ছেন সর্বমহলে। এটাকে বাস্তবায়ন করতে প্রত্যেকটি জনগণকে প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকতে হবে। নিজ দলের নেতাকর্মীকে এ যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর চেষ্টাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ সাফল্য তৃণমূলে পৌঁছে দিতে হবে।

জনগণের  প্রত্যাশা, দুর্নীতি-অপরাধের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি যে আশার আলো জ্বালিয়েছে, তা হঠাৎ করে যেন নিভে না যায়। সাধারণ মানুষের ধারণা, নিজের দলের নেতাকর্মীদের যেখানে ছাড় দিচ্ছে না সেখানে  প্রধানমন্ত্রী তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে সাফল্য নিশ্চিত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইর্য়কের হোটেল ম্যারিয়ট মারকুইসে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আপনি বলেছেন, ‘সরকার যেভাবে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে তার প্রতিটি টাকা সঠিক ব্যবহার হলে এতদিনে দেশ আরও অনেক বেশি উন্নত হতো। পাল্টে যেতো দেশের চিত্র।’ এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে দুর্নীতি দমনে আপনি এগিয়ে যান। দুর্নীতিবাজ আপনার দলের হলেও ছাড় পাবে না এমন হুঁশিয়ারিতে সাধারণ মানুষ আশ্বস্ত হয়েছে। আপনি পারবেন। আপনাকে পারতেই হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতি পেয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। আপনার শুদ্ধি অভিযানে জাতি পাবে একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ।

লেখক: সংবাদকর্মী