এরশাদের আসনে নিরুত্তাপ ভোটে বিজয়ী ছেলে সাদ

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:৫৫ | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ২০:১৩

রফিকুল ইসলাম রফিক, রংপুর

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন তার ছেলে রাগিব আল মাহদি সাদ (সাদ এরশাদ)। তিনি ৫৮ হাজার ৮৭৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান। তিনি পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯৪৭ ভোট। আর এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৯৪৮ ভোট।

শনিবার রাতে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাব উদ্দিন বেসরকারিভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করেন।

নির্বাচনে কাজী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ পেয়েছেন এক হাজার ৬৬২, তৌহিদুর রহমান মন্ডল পেয়েছেন ৯২৪ এবং শফিউল আলম পেয়েছেন ৬১১ ভোট।

এর আগে সকাল ৯টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত নিরুত্তাপ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোট চলাকালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিএনপির প্রার্থী রিটা রহমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন।

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ গত ১৪ জুলাই মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। তফসিল ঘোষণার পর এই আসেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। তবে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টির অনুরোধে তাদের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর সাদ এরশাদ বলেন, ‘আমার বাবাকে রংপুরের মানুষ ভালোবাসে। সে কারণে তারা আমাকে ভোট দিয়েছেন। আমি রংপুরের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ।’

সাদ বলেন, ‘আমার কাছে সবাই সমান। কাউকে নিয়ে আমার অভিযোগ নেই। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হয়েছে।’

আগ্রহ ছিল না ভোটার ও পর্যবেক্ষকদের

সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল। প্রতিটি কেন্দ্রেই অলস সময় পার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তেমন কোনো কাজ ছিল না ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং প্রার্থীর এজেন্টদেরও। তারা অনেকটাই গল্প করে সময় পার করেছেন।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯ থেকে ৩৩নং ওয়ার্ড এবং সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসন। এখানে মোট ভোটার চার লাখ ৪১ হাজার ২২৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ দুই লাখ ২০ হাজার ৮২৩ এবং নারী ভোটার দুই লাখ ২০ হাজার ৪০১ জন। ব্যাপক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে ১৭৫টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচন চলাকালে বেশির ভাগ কেন্দ্রেই নির্বাচন পর্যবেক্ষককে দেখা যায়নি। নগরীর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক নয়। এখানে ভোটারও নেই, পর্যবেক্ষকও নেই।

নগরীর দেওডোবা ডাঙ্গিরপাড় এলাকার জাহেদা খাতুন গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরও একই কথা বলেন। তার কেন্দ্রে কোনো পর্যবেক্ষক যায়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিরতিহীন আট ঘণ্টার এই ভোটে ভরদুপুরেও কোনো কেন্দ্রে একসঙ্গে চার পাঁচজন ভোটারকে দেখা যায়নি। দুই একজন নারী ভোটার চোখে পড়লেও পুরুষ ভোটার যেন লাপাত্তা। তবে কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রার্থী না দেয়া এবং জাতীয় পার্টির রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির ভোটের মাঠে ছিলেন না। এবার রংপুরের মানুষ স্থানীয় প্রার্থীকেই খুঁজছিলেন। কিন্তু স্থানীয় প্রার্থী না থাকায় হয়তো ভোটাররা ভোট দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। এছাড়াও দুর্গাপূজা চলছে। হিন্দু ভোটারদের খুব একটা উপস্থিতি দেখা যায়নি। সে কারণে ভোটার কম ছিল বলে ধারণা অনেকের। তবে এত কম ভোটার উপস্থিত হবেন তা কেউ ধারণাও করেননি।

(ঢাকাটাইমস/০৫অক্টোবর/জেবি)