জাদুকাটা নদী

বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধে বেকার ৫০ হাজার শ্রমিক

প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৪৩

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

জাদুকাটা নদীতে বালু ও পাথর উত্তোলনে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এই নদীকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করা অন্তত ৫০ হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদী ঘিরে স্থানীয় কিছু সংঘবদ্ধ লোকের ভুল তথ্যে প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। এ কারণে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হওয়ার পাশাপাশি সরকারও বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে বলে দাবি তাদের।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের জাদুকাটা নদীর বুক থেকে বেলছা, টুকড়ি ও দেশীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন করে যুগযুগ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে সীমান্তবর্তী গ্রাম ও আশপাশের অর্ধশাতাধিক গ্রামের অন্তত ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক।

কিন্তু বালু ও পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আসায় দুই সপ্তাহ ধরে এ নদীতে শ্রমিকদের কোনও হুলুস্থুল নেই। একসময় ব্যস্থতার ছাপ এখন শুনসান নিরাবতায় নেমেছে। উপার্জনের প্রধান অবলম্বন জাদুকাটা নদীতে কাজ করতে না পারায় শ্রমিকরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নদীতে চারদিকে বারকি নৌকাসহ বিভিন্ন নৌকা ঘাটে লাগানো আছে।

শ্রমিকদের ভাষ্য, বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা যেমন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তেমনি সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। কারণ এখানকার বালু ও পাথরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। নদীর বুক থেকে বালু ও পাথর উত্তোলনের কাজ আবার চালু হবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

গড়কাটি গ্রামের বালু ও পাথর উত্তোলনের কাজে দিনমজুর শ্রমিক মুজিবুর রহমান জানান, গত এক মাস পূর্বে নদীর পাড়কাটা, চাঁদাবাজিসহ মিথ্যা ও নানান কল্পকাহিনী উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসন নদীতে কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর স্থানীয় এমপি, পুলিশ সুপারসহ সবাই এসে এর কোনও সত্যতা না পেলেও কাজ এখনো বন্ধ রয়েছে।

মুজিবুর বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে না খেয়ে আছি। এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাই আমরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি। না হলে না খেয়ে বৌ, ছেলেমেয়ে নিয়ে পথে বসতে হবে।’

আরেক নারী শ্রমিক হাছিনা বেগম জানান, তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্যনশীল ব্যক্তি। স্বামী থেকেও নেই। পরিবারের সব মুখ তার দিকেই তাকিয়ে থাকে খাবারের আশায়।

তিনি বলেন, ‘এক মাস ধরে নদীতে কাজ করতে না পারায় সঞ্চয়ে থাকা কিছু টাকা ও খাবার সব শেষ হয়েছে। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি।’

যাদুকাটা নদীতে আবরো কাজ চালু করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সুদৃষ্টি কামনা করেন এই নারী শ্রমিক।

জামবাগ (জয়পুর) গ্রামের মাকসুদা বেগম নারী শ্রমিক জানান, ‘নদীতে কাজ করে সারাদিন ৫-৬শ টাকা উপার্জন করতাম। তাই দিয়ে পরিবার চালাতাম। এখন কাজও নেই ভাতও নেই। সন্তানদের পড়ালেখাও বন্ধের উপক্রম হয়েছে।’ 

বালু ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সমিতির সভাপতি আব্দুস শাহিদ জানান, প্রাকৃতিকভাবে জেগে ওঠা এনদীর বুক থেকে যুগযুগ ধরে শ্রমিকরা বালি ও পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

তিনি বলেন, পাথর উত্তোলনের কাজে ড্রেজার বা বোমা মেশিন ব্যবহার হচ্ছে না, যাতে পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। শুধু ছোট সেইভ মেশিন (নদীর বুক থেকে মাটি সরিয়ে বালি ও পাথর উত্তোলন কাজে সহায়ক যন্ত্র) ব্যবহার হচ্ছে। তা বন্ধ করায় এখন বালু ও পাথর উত্তোলন করা যাচ্ছে না। ফলে কাজ বন্ধ রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরাও মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এলাকায় হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, নদীতে কোনও প্রকার চাঁদাবাজি ও নদীর পাড় কাটা হয় না। সব কিছুই পূর্বেও বন্ধ ছিল এখনও আছে। নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে যাদুকাটা নদীতে শ্রমিকদের সবাইকে কাজ করতে হবে। আর কোনও প্রকার অন্যায় আর অনিয়ম ছাড় দেওয়া হবে না। কঠোর হাতে দমন করা হবে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘হাজার শ্রমিক নদীতে কাজ করতে না পারার বিষয়টি জানি। সবাইকে নদীর পাড় কাটা ও ড্রেজার বন্ধে নজরদারী রাখতে হবে।’

তবে কবে নাগাদ আবার কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কোনও কিছু তিনি জানাতে পারেননি।

(ঢাকাটাইমস/০৬অক্টোবর/ডিএম)