বুয়েটে এখন মেধাবি খুনিরাও পড়ে

প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:০৪

পীর হাবিবুর রহমান

বর্বরতার চরমে পৌঁছে গেছি আমরা। আমাদের সন্তানদের আমরা মানুষ হতে দিচ্ছি না। খুনি দানব তৈরি করছি। কি অপরাধ বুয়েটের আবরারের? দেশসেরা মেধাবি ছাত্রদের একজন সে। তার বাবা-মা তিল তিল স্বপ্ন দেখেছিলেন। ছেলেটি ভালো লেখাপড়া করে। ভালো রেজাল্ট করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাবিসহ আরও ১০ জায়গায় চান্স পেলেও বুয়েটে তুমুল প্রতিযোগিতার বাজারে ভর্তি হয়েছিল। বাবা-মার বুকভরা স্বপ্নের সঙ্গে তার নিজের স্বপ্ন ছিল। স্বপ্নপূরণ হওয়ার আগেই সব শেষ!

ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকা আবরারেরই সতীর্থরা নির্মমভাবে পিটিয়ে, নির্দয় উন্মত্ত খুনির চেহারায় তাকে হত্যা করেছে। ছাত্রলীগ খুনিদের বহিষ্কার করেছে। এদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি চাই!

ফেসবুক স্ট্যাটাস কেনো হবে আবরার হত্যার কারণ? ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দিলে তার জবাব, স্ট্যাটাসেই দিতে হবে। জীবন কেড়ে নেওয়া প্রতিবাদ নয়, বিশ্বাসঘাতকতা। সে রাষ্ট্রদ্রোহী কোনো অপরাধ করেনি। করলেও আইন আছে, কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারে না।

এখন আবরারের খুনিরা গ্রেপ্তার হবে। আইন তাদের শাস্তি দেবে। খুনিদের বাবা মা এবং তাদের স্বপ্নও শেষ। জীবনের করুণ পরিণতি ঘটবে। মাঝখানে জীবনহানি, খুনি, বাবা-মার ও দেশের স্বপ্নভঙ্গ!

যে ছেলেটি খুন হয়েছে সে হতে পারতো আপনার আমার ছেলে। যারা খুনি তারা হতে পারতো আমার আপনার সন্তান। তার মানে আমরা এমন এক সমাজ তৈরি করেছি, যেখানে আমাদের সন্তানরা খুন হচ্ছে, আমাদের সন্তানরাই খুনি হচ্ছে।

আহারে, বুয়েটে এখন মেধাবি ছাত্রছাত্রীই নয়, খুনিরাও পড়াশোনা করে, বাস করে।

গোটা সমাজ রাজনীতি, প্রশাসনকে কি এ প্রাণহানি ঘুম ভাঙাতে পারবে? আজ আমি খুনিদের বিচার চাই, আজ আমরা সুসন্তান তৈরির সমাজ পরিবেশ চাই। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনকেও জবাবদিহি করতে হবে আজ।ভিসি কেনো নেই জানা যায়?

বর্বররা একজন আবরারকে নৃশংসভাবে সাপের মতো পিটিয়ে গোটা শরীরে কালসিটে দাগ ফেলেই হত্যা করেনি, একটি স্বপ্নকেই খুন করেনি, মায়ের প্রতিটি আবেগ অনুভূতি ও সব স্বপ্নকে খুন করে বাবার বুকে বোবা কান্নার পাথর দিয়ে কাঁধে তুলে দিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি লাশ।

খুনিরা নিজেদের স্বপ্নকেই খুন করেনি, বাবা-মার স্বপ্নকে খুন করে বুয়েটে রচনা করেছে কলঙ্কের ইতিহাস। এ সমাজ আজ কোনো আদর্শ আইডল দিতে পারছে না। এ সমাজ পরিবার ভালো ছাত্র, ফলাফল ও বুয়েট মেডিকেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দলবাজি বুঝে, মূল্যবোধ নীতিবোধ এক কথায় আদর্শবান ভালো মানুষ হবার পথ দেখাতে জানে না।

এক অনিশ্চিত অন্ধকার পথ নব প্রজন্মের সামনে, যারা জানে না এ দেশে কত লাখো দেশ প্রেমিকের রক্তে, কত সংগ্রাম যুদ্ধে, আদর্শিক রাজনীতির মাহাকাব্যযুগের মহানায়কদের রক্তে লেখা গৌরবের ইতিহাস।

লেখক: সাংবাদিক, নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।