এই নোংরা রাজনীতির শেষ কোথায়?

প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:২৫ | আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:২৬

শরিফুল হাসান

আমি সারারাত ঘুমাতে পা‌রিনি। আবরারের বাবা-মায়ের কান্নার ছবিগু‌লো যতোবার দেখছি, যতোবার তাদের আর্তনাদের কথা পড়‌ছি, ত‌তোবার আমার বুকটা ভেঙে যাচ্ছে। সহ্য করতে পারছি না। সকাল থেকে এই মধ্যরাত পর্যন্ত সারাটা দিন আমার ভীষণ যন্ত্রণা লেগেছে। বারবার ভাবছি, কতোটা অমানুষ হলে একদল ছাত্র মিলে একজন‌কে নির্মমভাবে পেটা‌তে পা‌রে! কতোটা নির্মম হলে হাসপাতালে না নিয়ে একটা মানুষ‌কে সিঁড়িতে ফেলে রাখে? গত ১৫ বছর ধরে আমি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি।

হ্যাঁ, ১৫ বছর।‌ জহরুল হক হ‌লের ছাত্র খোকন ভাইকে এভা‌বে পি‌টি‌য়ে শাবল দি‌য়ে কু‌পি‌য়ে ফে‌লে রাখা হ‌য়ে‌ছিল। আমি আজও ভে‌বে পাই না কী ক‌রে মানুষ মানুষ‌কে শাবল দি‌দিয়ে কোপায়? আর কী করে একজন ছাত্র আরেকজন ছাত্রকে হত্যা করে সেই প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজছি গত বিশ বছর ধরে। কিছুতেই আমার হিসেব মেলে না। ‌মেলাতে পা‌রি না।

আপনারা যারা প‌ত্রিকা প‌ড়ে, টি‌ভি দে‌খে বা নানা ঘটনা শুনে কষ্ট পান আমার কষ্টটা তার চে‌য়ে অ‌নেক বে‌শি। কারণ আমাকে চোখের সামনে অনেক খুন দেখতে হয়েছে। অনেককে হাসপাতা‌লে নি‌তে হ‌য়ে‌ছে। সাংবাদিক হিসেবে কথা বলতে হয়েছে অ‌নেক স্বজনহারা পরিবারের সঙ্গে। অসংখ্য বেদনাদায়ক ঘটনার সাক্ষী আমি। অথচ আমি এমন যন্ত্রণাগুলো দেখ‌তে চাইনি।

হ্যাঁ, বাবা-মায়ের আদরে সাগর পাহাড়ের মাঝখানে চট্টগ্রামের এক সরকারি কলোনিতে দারুণ আনন্দে কেটেছে আমার শৈশব। এসএসসি পাস করার আগে আমাকে ছাত্র রাজনীতির নোংরামিগু‌লো দেখতে হয়নি। বাসা থে‌কে হেঁ‌টে স্কুলে গি‌য়েছি, এসে‌ছি। উচ্চ মাধ্যমিকে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হয়ে আমি প্রথম ছাত্র হত্যাকাণ্ড দেখি। দিন তারিখ আজ মনে নেই।

‌বিশ বছ‌র আগের ঘটনা। দিন তা‌রিখ ম‌নে নেই। সালটা সম্ভবত ১৯৯৯। চট্টগ্রাম কলেজে পড়ি তখন। কোন এক হরতালের দুপুরে চট্টগ্রাম কলেজের মাঠে গল্প করছি আমরা কয়েকজন বন্ধু। হঠাৎ গুলির শব্দের মতো হলো। আমি শব্দের দিকে ছুটে গেলাম। দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কলেজের মাস্টার্সের এক ছাত্র। নাম তার আনসার। যদি ভুলে না যাই তিনি সম্ভবত একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কিন্তু শিবিরের রাজনীত করতেন।

আমি তখন সদ্য এসএসসি পাস করে এসেছি। নোংরা রাজনীতির কিছুই বুঝি না। কিন্তু মা শিখিয়েছে বিপ‌দে মানুষের পা‌শে থাক‌তে হয়। চোখের সামনে কোন আহতকে দেখ‌লে হাসপাতালে নিতে হয়। আমি দ্রুত তাই আনসার ভাইকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলাম। কিন্তু তাঁর মাথায় গুলি করা হয়েছিল। খুব কষ্ট করে তা‌কে হাসপাতালে নিয়েছিলাম।

আমি আজও ভুলিনি সেদিনের কথা। আমরা তাঁর হাত পা ধরেছিলাম। জরুরি অপারেশন হলো। উন্নত চিকিৎসার জন্য আরেকটা হাসপাতালে নেয়া হলো। কিন্তু সেখানে মারা গেলেন তিনি। আমার হাতের মধ্যেই। আমার ভীষণ কষ্ট লাগলো। আমার কিশোর মনে ভীষণ দাগ কাটলো। আমি বহুদিন ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারিনি। আমি জেনে ভীষণ আহত হয়েছিলাম শিবিরের ছেলেরাই তাকে হত্যা করেছিল। যে তাকে খুন করেছিলো সে কলেজে অস্ত্র নিয়ে ঘুরতো। ভীষণ হাসিমুখে থাকতে। আমি আজও ভেবে পাই না হাসতে হাসতে কীভাবে মানুষ মানুষকে খুন করে!

উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ভর্তি পরীক্ষা দি‌চ্ছি নানা বিশ্ব‌বিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় আমি খুব ভালো অবস্থানে ছিলাম। প্রথমদিন আইন বিভাগে গেছি ভ‌র্তির সাক্ষাতকার দি‌তে। দেখি একটা ছেলের হাতে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। শুনলাম ছাত্রলীগ আর শিবিরের মধ্যে মারামারি। আমি আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পা বাড়াইনি। প‌রে যখুনি চট্টগ্রা‌মে কোন ছাত্র হত্যার কথা শুনে‌ছি আমার ভীষণ খারাপ লে‌গে‌ছে।

যাই হোক, এলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০১ সা‌লের অক্টোবরে ক্ষমতার পালাবদ‌লে বিএনপির রামরাজত্ব। টেন্ডার নিয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের মারামারিতে মারা গে‌ছে বুয়েট ছাত্রী সনি। ঘটনার ক‌য়েকমাস প‌রে আমরা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ে। সনির খুনিরা কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ২০০২ সালের মার্চ কী এপ্রিল মাস। এসএম হলে আমার এক বন্ধুর খোঁজে গেছি। তাঁর রুম নাম্বার ঠিক জানি না। একটা রুমে নক করেছি। দরজা কিছুটা খোলাই ছিলো। জিজ্ঞাসা করলাম রেজা আছে রুমে? প্রচণ্ড ধমক খেলাম।

‌লোকটা বল‌ছে, এইটা কী রেজার রুম? আমি থমকে গেলাম। বললাম সরি। তিনি বললেন আমাকে চেন? আমি বললাম না। তিনি নাম বললেন। সনি হত্যা মামলার এক আসামি তিনি। পুলিশ তাকে খুঁজে পায় না। আর সে হলে দিব্যি বসে আছে। আমি দ্রুত রুম ছেড়ে চলে আসলাম। আমি বুঝলাম দল ক্ষমতায় থাক‌লে খু‌নি‌কেও পুলিশ খুঁ‌জে পায় না।

আমার দেখার আরও অ‌নেক বা‌কি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই একটু একটু ক‌রে যুক্ত হলাম সাংবাদিকতায়। চোখের সামনে দেখলাম ছাত্র রাজনীতির নানা নোংরামি। দেখলাম রাজনীতির নামে ক্ষমতার দাপট। শুনলাম ছাত্র‌নেতারা পু‌লিশ হত্যা ক‌রে। দেখলাম আরও বর্বরতা। আরও রক্ত।

সালটা ২০০৪। আমার জীবনে এ বছর যুক্ত হ‌লো আরও দুটো ভয়ঙ্কর স্মৃতি যা আমাকে হয়তো আজীবন মনে রাখ‌তে হ‌বে। প্রথমটা ফেব্রুয়ারিতে। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪। হুমায়ুন আজাদ স্যারকে কুপিয়ে ফেলে গেছে জঙ্গিরা। স্যার রক্তাক্ত। কেউ ধরছে না। টিএস‌সি থে‌কে দৌ‌ড়ে গেলাম। রাস্তায় ভিখারির মতো দাঁড়িয়ে কতো গাড়িকে অনু‌রোধ করলাম। কেউ স্যারকে নি‌য়ে হাসপাতা‌লে যেতে রাজি না। এই আমি রক্তাক্ত অবস্থায় স্যারকে পুলিশের ট্রাকে করে নিয়ে গেলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আজও মনে আছে। স্যারের পুরো মুখটা কাটা। হা করা। আমি নিজ হাতে মুখ চেপে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করেছি। আমার সারা শরীর রক্তে ভিজে যা‌চ্ছে। লম্বা সে গল্প। সেদিন টিএসসিতে থাকা ফটো সাংবাদিক পাভেল ভাই রক্তাক্ত সে ছবিগু‌লো তুললেন। সেই ছবি পরদিন পত্রিকায় ছাপা হ‌লো। পোস্টার সারা ক্যাম্পা‌সে। আমার জীবন তিক্ত হ‌য়ে গেল। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হলো ছাত্রলীগ নেতা আব্বাস ভাই।

এরপর শুরু হলো পুলিশ, সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ। একদিন আমাকেও যেতে হলো সিইডিতে। আব্বাস ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিতে রাজি হইনি, যা দেখেছি তাই বললাম। বহু‌দিন মামলা চল‌লো। আজও ওই মামলার সাক্ষী আমি। স্যার প‌রে মারা গেলেন। ভীষণ যন্ত্রণা লাগ‌ল।

এই ঘটনার ছয়মাস পর দেখতে হলো খোকন ভাইয়ের হত্যাকাণ্ড। আবরারের চেয়েও নিষ্ঠুর সেই হত্যাকাণ্ড! ২০০৪ সা‌লের ১৫ সেপ্টেম্বরের সেই দিনটার কথা ভুলি কী করে! আমি তখন বাংলাবাজার পত্রিকার সাংবাদিক। যারা জহরুল হক হলে ছিলেন তারা সবাই খোকন ভাইকে চিন‌বেন। বলবেন অসাধারণ মানুষ। আবরারের মতোই তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া ছিল।

‌সে‌দিন ছাত্রদলের ছেলেরা তাকে রাতে রুম থেকে বের করে হলের বারান্দায় পিটিয়ে শাবল দিয়ে মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রাখে। তাকে যেন হাসপাতালে কেউ নিতে না পারে সে কারণে হলের গেটে মারা হয় তালা। সেদিন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে শাহবাগ থানা পুলিশ এনে গেট ভেঙে খোকন ভাইকে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাই। তাঁর পুরো মাথাটা থেতলে গিয়েছিল। রক্তমাখা সেই মুখ পুরো মাথায় ব্যান্ডেজ আজও আমি ভুলিনি।

খোকন ভাই মারা গেলেন। দেখলাম আবার সেই নোংরা রাজনীতি। মৃত্যু ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা। খোকন ভাইয়ের বড় ভাই স্কুল শিক্ষক রবিউল ভাই মামলা করলেন। আমি টানা নিউজ করলাম। খুনিরা তখনো হলে। তারা হুমকি দিলো। দুদিন পর খোকন ভাই মারা গেলেন। তারা হল ছাড়‌লো। মামলা হলো। সবই আজকের ম‌তো।

ওই ঘটনার ১৫ বছর পেরিয়েছে। আমি ও আরেক সাংব‌াদিক মিরাজ ভাই সাক্ষী। আজও সেই মামলার বিচার হয়নি। ছেলে হত্যার বিচার না পেয়ে খোক‌নের মা দুনিয়া ছেড়েছে। কিন্তু খোকন ভাইয়ের খুনিরা আজও রাজনীতি করছে। জহরুল হক হল থে‌কে নি‌খোঁ‌জ আরেক ছাত্রদল নেতা শাহ আলমের তো লাশটাও মে‌লে‌নি। কীভা‌বে তা‌কে হত্যা করা হয়েছিল?

একইভাবে ছাত্রলীগ নেতা বন্ধু হাদিকে গুলির ঘটনাও ভুলিনি। আমি আর বন্ধু শুভর ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউর সামনে অপেক্ষা ছেলেটা বাঁচবে তো? আচ্ছা হাদীকে কারা গুলি করেছিল? বিচার হ‌য়েছিল?

না, ঘটনা শেষ হয়নি। টানা ১৫ বছর সাংবাদিকতা করেছি। ক‌তো কতো ঘটনা! শামসুন নাহার হ‌লে নির্যাতন, হ্যাপীর মৃত্যু সব ম‌নে আছে। আর এফ রহমান হলে মেধাবি ছাত্র আবু বকরের মৃত্যু! সেটা তো কখ‌নো ভুল‌তে পা‌রি না। বকরের রক্তে ভেজা সেই খাতা আমার অফিসে বহুদিন ছিলো। সাধারণ পরিবারের লড়াকু ছে‌লে বকর‌কে নি‌য়ে প্রথম আলোয় সে‌দিন আমার নিউজের শিরোনাম ছিলো, ‘ঘামে ভেজা জীবন, রক্তে ভি‌জে শেষ’।

‌দশ বছর হ‌তে চল‌লো। গত দশ বছ‌র ধ‌রে বকরের বাবা মায়ের রোজ সকাল হয় ছেলে হারানোর বেদনা দিয়ে। আচ্ছা ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাদ হতাকা‌ণ্ডের কথা কী আমি ভুলতে পেরেছি? সালটা ২০১৪। সাদকে হ‌লে পিটিয়ে হত্যা করেছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আমি ঢাকা থে‌কে ছুটে গেলাম। আচ্ছা সাদ হত্যার বিচার কী হয়েছে? হয়‌নি।

২০০৯ থে‌কে ২০১৯। গত এক দশ‌কে কী হ‌চ্ছে সব‌ দেখেছেন আপনারা। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে নানা ক্যাম্পাসে ছাত্র হত্যাগুলোর বিচারের কী অবস্থা আমি খোঁজার চেষ্টা করেছি। অনেক নিউজও করেছি। ছাত্রলীগের এক পক্ষ আরেক পক্ষের কর্মীকে হত্যা করেছে এমন ঘটনা গত দশ বছরে অন্তত অর্ধশত। রাজশাহী বিশ্ব‌বিদ্যালয়ে আবার ছাত্রলী‌গের কর্মী‌কে হত্যা ক‌রে লাশ রাখা হ‌য়ে‌ছিল ম্যান‌হো‌লে। ছবিগু‌লো আজও ভু‌লি‌নি। আচ্ছা এতো ঘটনা! বিচার কী হয়েছে কোনটার? ছাত্রলী‌গের কোন নৃশংসতার বিচার হ‌য়ে‌ছে? বিশ্ব‌জিত? আচ্ছা জাহাঙ্গীরনগ‌রের জুবায়েরকে না হত্যা করা হ‌লো? আমি তো সে খবরও লি‌খে‌ছিলাম। প্র‌তিটা ঘটনায় হল বা বিশ্ব‌বিদ্যালয় প্রশাস‌নের নি‌র্লিপ্ততা ছাড়া আর কী কিছু ছিল? ছাত্রলী‌গের কার কী বিচার হ‌য়ে‌ছে?

খবরগু‌লো তাও ভোলা যায়। কিন্তু যেগু‌লোর সাক্ষী আমি সেগু‌লো কী ক‌রে ভ‌ু‌লি! হ্যাঁ, আমি খুব নরম মনের মানুষ। আমারও ভয় আছে। রক্ত কাটাকাটি দেখতেও আমার ভালো লাগে না। কিন্তু চোখের সামনে আহত অবস্থায় কাউকে ফেলে পালিয়ে যাইনি। কাপুরুষের মতো বাঁচিনি কোন‌দিন। ছাত্রদলের গালিগালাজ খেতে হয়েছে। চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মার খেয়েছি। ফেসবুকে লেখার জন্য শিবির, ছাত্রদল, ছাত্রলীগ কার না গালি খে‌য়েছি। কিন্তু প্রতি উত্তরে কাউকে কোনদিন গালি দেইনি। যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।

আমি শুধু ভা‌বি, কাউকে গালি দিতে আমার বুক কাঁপে আর ওরা কী করে দিব্যি আরেকজনকে পিটিয়ে মারে? মানুষ হয়ে কী করে আরেকজন মানুষকে মারে এই প্রশ্নের উত্তর আমি কখ‌নো পাইনি। কেন ছাত্র হত্যার বিচার হয় না, আমি জানি না। জানি না, শত শত ছাত্র হত্যার পরেও ‌কেন এই নোংরা রাজনীতির খেলা বন্ধ হয় না?

আচ্ছা কারও কী কোনো কষ্ট হয় না? ভাবুন দে‌খি, আবরারের মা-বাবা যতোদিন বাঁচবে তারা ঘুমাতে যাবে কষ্ট নিয়ে। রোজ তারা ঘুম থোকে উঠবে ছে‌লে হারা‌নোর কষ্ট নিয়ে। আমৃত্যু কষ্ট। যেই কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে বকররে মা, সাদের বাবা। যেই কষ্ট নিয়ে পৃথিবী ছেড়েছে খোকন ভাইয়ের মা।

আমি জানি না সন্তান হারা শত শত বাবা মাকে কী জবাব দেবে এই রাষ্ট্র? জানি না, এই নোংরা রাজনীতির শেষ কোথায়? আচ্ছা কবে থামবে স্বজনহারাদের এই আহাজারি? এই মধ্যরাতে আমার যে ভীষণ যন্ত্রণা লাগে। আচ্ছা আবরারকে যখন পেটা‌নো হ‌লো, শত শত ছে‌লে হ‌লে। আবরার কী চিৎকার ক‌রে‌ছিল? মা‌কে ডেকে‌ছিল?

আমার ভীষণ যন্ত্রণা লাগ‌ছে। রাষ্ট্র‌কে চিৎকার করে বল‌ছি, আমার একটা সুস্থ স্বাভাবিক দেশ চাই। চাই একটা মানুষের দেশ। একটা মানুষের পৃথিবী। আপনারা প্লিজ অমানুষগু‌লোর বিচার করুন। আর আমাকে একটা মানুষের পৃথিবী দিন।

লেখক: অধিকারকর্মী