নিথর ছেলেকে ছুঁয়ে বাকরুদ্ধ আবরারের মা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৪০

যখনই বাড়িতে আসতেন তখনই বাড়িটি আনন্দে ভরে থাকতো। কিছুদিন আগে বাড়িতে এসেছিলেন আবরার। এরপর চলে যান প্রাণের ক্যাম্পাস বুয়েটে। কয়েকদিন পর বাড়িতে আসবেন বলে মাকে কথাও দিয়েছিলেন। তিনি বাড়িতে ফিরেছিন ঠিকই। তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে। ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর নৃশংসতায় জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। ভোরের আলো ফোটার পরই অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে কফিনবন্দী হয়ে বাড়িতে পৌঁছে নিথর আবরারের দেহ।

আবরারের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে অবতারণা হয় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। প্রিয় সন্তানের নিথর লাশ ছোঁয়ার পরই বাকরুদ্ধ হয়ে যান তার মা রোকেয়া খাতুন। বারবার মূর্ছা যান। সন্তান হারানো মায়ের চিৎকার আর কান্নার আওয়াজে কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। সবার চোখেই নেমে আসে পানি। কে কাকে সান্ত্বনা দেবে এমন মানুষও পাওয়া যায়নি।

সকালে কুমারখালীতে আবরারের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। আবরারের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি বাড়িতে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার দিয়ে উঠেন তার মা। বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। মাঝে মাঝে জ্ঞানও হারান তিনি। কয়েকজন ধরেও তাকে আটকাতে পারেনি। ছুটে যান প্রিয় সন্তানের নিথর দেহ যেই গাড়িতে রাখা আছে সেখানে। গাড়ির থেকে লাশ নামানোর পরই প্রাণের প্রিয় সন্তানের মুখ দেখে বিলাপ করতে থাকেন।

তার চিৎকার আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে ওই এলাকার পরিবেশ। তাকে অনেকে সরানোর চেষ্টা করলেও সন্তানকে ছেড়ে আসছিলেন না তিনি।

এর আগে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আবরার ফাহাদের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোড এলাকার নিজ বাড়িতে পৌঁছায়। তার লাশ বাড়িতে আনার খবর শুনে ভোররাত থেকেই সেখানে ভিড় জমাতে থাকেন আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীরা। সবাই ফাহাদকে শেষবারের মতো দেখতে ছুটে আসেন সেখানে।

শহরের পিটিআই রোড এলাকায় প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে পুরো এলাকার পরিবেশ। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে পিটিআই রোডে স্থানীয় একটি মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লাশ নেওয়া হয় কুমারখালীর উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে রায়ডাঙ্গা ঈদগাঁ ময়দানের পাশে তাকে দাফন করা হবে।

গত রবিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, ওই রাতেই হলটির ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আবরার বিশ্ববিদ্যালয়ের বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।

আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চক বাজার থানায় হত্যা একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা বরকতুল্লাহ। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

ঢাকাটাইমস/৮অক্টোবর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :