ক্ষেত্র বাড়ুক শুদ্ধি অভিযানের

আরিফ জামান
| আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:০২ | প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:২৭

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রতিফলন একে একে দেখতে পাচ্ছে দেশবাসী। দল-পরিবার কিংবা যত বড় ক্ষমতাধারী হোক অপরাধ ও দুনীতির প্রমাণ মিললে রেখাই পাবে না কেউ। এমন ঘোষণাই বাস্তবায়ন হচ্ছে এখন। সর্বশেষ যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী স¤্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় তাকে বন্যপ্রাণী আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া অস্ত্র ও মাদক আইনে আরও দুটি মামলা হয়েছে তার নামে।

অবৈধকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা আরও দৃঢ় হচ্ছে। সুশাসনের যে কথা সরকার প্রধান বলে আসছিলেন, তারই প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে এটি স্বাভাবিক বিষয় হলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটি নজিরবিহীন। ফলে সব মহলেই সমানভাবে প্রশংসিত হচ্ছে অভিযান।

মূলত অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের নজির স্থাপিত হয়েছিল ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। তখনই আঁচ করা যাচ্ছিল তার কঠোর অবস্থানের বিষয়টি। যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক যে অভিযান পরিচালিত হলো, গ্রেপ্তার হলেন সংগঠনটির প্রভাবশালী নেতারা। কিন্তু ছাত্রলীগের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি। নানা অপরাধের অভিযোগে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেওয়ার পর এই সংগঠনের আরও যারা অপরাধে জড়িত, তেমন আরও কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ঘটে গেছে এক ন্যক্কারজনক ঘটনা। রবিবার দিবাগত গভীর রাতে বুয়েটে এক মেধাবী ছাত্রকে ফেসবুক স্ট্যাটাসের সূত্রে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা, যা নিঃসন্দেহে ক্ষমতাসীন দলের জন্য বিব্রতকর।

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা আগের চেয়ে বেড়েছে, এটা ভুলে গেলে চলবে না। কিন্তু সেই দলের বা সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ যখন চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে যায়, হত্যা-রাহাজানির অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে, তখন দুঃখের শেষ থাকে না। এতে দলের ভাবমূর্তিকে সংকটের মুখে ঠেলে দেয়। বিব্রত হন দলের শীর্ষ নেতারাও। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের জন্য এটি মানানসই নয়।

আওয়ামী লীগ বরাবরই ন্যায়ের পক্ষে লড়েছে। মানুষের অধিকার আদায়ে মাঠে থেকেছে। এখন যখন প্রধানমন্ত্রী দেশ গড়ার কাজে অক্লান্ত শ্রম দিচ্ছেন, তখন কিছু মানুষের জন্য দলের ভাবমূর্তি সংকটের দিকে গেলে তা কোনোমতেই মেনে নেওয়ার নয়।

আমরা মনে করি, দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এটি শুধু নির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। শুদ্ধি অভিযানের ক্ষেত্র প্রসারিত করা প্রয়োজন। শুধু রাজনীতি বা দলের মধ্যে নয়, প্রশাসনসহ দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে এই শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার সময় এসেছে। কেননা সরকারের সিদ্ধান্ত ও বিভিন্ন কার্যক্রম যারা সরাসরি বাস্তবায়ন করেন, এবং যারা দলীয় নেতাকর্মীদের বেআইনি ও অপরাধকর্ম করার সুযোগ দেন তাদের শুদ্ধতা অবহেলা করলে শুদ্ধি অভিযান সম্পূর্ণতা পাবে না বলে আমরা মনে করি।

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, এই শুদ্ধি অভিযান চলতে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, একে একে সবাইকে ধরবেন তিনি। কাউকে ছাড় দেবেন না। নিঃসন্দেহে অপকর্মকারীদের জন্য এটি একটি গুরুতর বার্তা। আর এর ম্যাধমে দলের ভাবমূর্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি সুশাসনও ত্বরান্বিত হবে। আওয়ামী লীগ যে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এটিও আবার প্রমাণিত হবে।

প্রকৃতপক্ষে অপরাধীরা যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন, আইন তার চেয়েও শক্তিশালী। সেটি আরও পোক্ত হবে, যদি অপরাধে সহায়তাকারীদের, তা সে প্রশাসনের হোক, কিংবা পুলিশের বা অন্য কারো, তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চলে। রাজনীতির পাশাপাশি অন্য ক্ষেত্রেও অভিযান চলুক।

লেখক: সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :