খুনিদের একবারও ওদের মায়ের কথা মনে পড়েনি?

প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৫০

মেহের আফরোজ শাওন
মেহের আফরোজ শাওন

বুয়েটের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগেরই ৬৯ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন আমার বাবা। সারাজীবন তার মুখে গর্বের সাথে উচ্চারিত হওয়া এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হবার স্বপ্ন ছিল আমারও। ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম তোলার সময় ঢাকার বাইরে থাকায় পরীক্ষাই দিতে পারিনি আমি। সেই দুঃখ ভোলার জন্য প্রায়ই ভেবেছি পুত্রদ্বয়ের যেকোনো একজন যেন এই মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অংশীদার হতে পারে।

এই প্রতিষ্ঠানের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগেরই ছাত্র ছিল আবরার। আবরারের কথা ভাবি আর আমার পুত্রদ্বয়ের মুখের দিকে তাকাই। আমার বুক কাঁপে। বাচ্চাদুটোর পিঠ হাত-পার উপর হাত বুলিয়ে দেই। ছোটবেলায় এরকম ছোট ছোট হাত পা-ই তো ছিল আবরারের! তার মা কতরাত পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে তাকে! একেকটা আঘাতে ছেলেটা কি মা গো বলে চিৎকার দিয়েছিল? মা গো ডাক শুনে খুনি ছেলেগুলোর কি একটুও নিজের মায়ের কথা মনে পড়েনি! ঠিক কতবার। কতক্ষণ ধরে কতটুকু আঘাত করলে ২০/২১ বছরের একটা তরুণ ছেলে মরেই যায়! আমি আর ভাবতে পারি না।

ফেসবুকে আবরারের পিঠটার ছবি দেখলাম। কী ভয়ংকর। কী নৃশংস, কী কষ্ট! এই ছবিটা যেন তার বাবা-মার চোখে না পড়ে। ভুল বলেছি। আবরারের বাবা, আবরারের মা তাদের বাবুটার ক্ষতবিক্ষত পিঠে হাত বুলিয়ে যেন অভিশাপ দেন মানুষের মতো দেখতে খুনি অমানুষগুলোকে। তাদের অভিশাপে যেন ধ্বংস হয়ে যায় এই অসুস্থ সমাজ।

নুসরাতকে ভুলে গিয়েছি, আবরারকেও ভুলে যাব। বিচার চাই বলে লাভ আছে কি না জানি না তবুও বিচার চাই।

লেখক: প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী ও অভিনেত্রী