স্বপ্ন দেখি দেশে জান মালের নিরাপত্তা আসবে

প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:১০

তৌহিদ এলাহী

বিদেশে পড়াশোনা করতে এসেছি অনেক বড় একটা ভার্সিটিতে। এখানের ছাত্রসংখ্যা ৭০ হাজার। বাংলাদেশের বিরাট একটা কমিউনিটিও আছে। স্বভাবসুলভ ভাবেই আমি নিজ থেকে হাই হ্যালো বলে অনেকের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলাপ জমাই।

বেশি ভালো লাগে আমার কমিউনিটি থেকে আসা স্টুডেন্টদের সাথে তাদের ফিউচার, ক্যারিয়ার, মাইগ্রেশন নিয়ে কথা বলতে। সবাইকে জিজ্ঞাস করি, কি মিয়া দ্যাশে যাবা না? আশ্চর্জনক হলেও সত্য, অল্প করে হলেও তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা আসে সবার, যদি সুযোগ পাওয়া যায়।

কেন যেতে চায় সেটা আমরা সবাই জানি। এরা সবাইকে দেশকে খুব মিস করে, আত্মীয়স্বজন শিকড় -বাকড় সবাইকে। কিছুক্ষত্রে মনে হয়, বিদেশে এসে তাদের দেশপ্রেম আরো গভীর হয়। যদি বলি কেন যেতে চাও না?

অল্পকয়েকজনই সুবিধা জনক চাকুরি বাকুরির কথা বলে। বলে, দেশে যদি জান মালের নিরাপত্তা ভালভাবে থাকত। আর চিকিতসা স্বাস্থ্যটা আরেকটু ভাল হত।

আমার এখানকার একজন শিক্ষকের সাথে একদিন একান্তে অল্পক্ষণ কথা হয়েছিল। ভদ্রমহিলার নাম ডেবরাহ খের। অসম্ভব স্মার্ট টিচার। উনাকে দেখলে আমার আই বি এ সগরা জাহান ম্যাডামের কথা মনে হয়। ভীষন রুচিশীল আর গুড সেন্স অফ হিউমার। আলাপে আমাকে হঠাৎ করে এক প্রশ্ন করে ভ্যাবাচেকা খাওয়ায়ে দিছে। তোমার দেশের কোন জিনিসটা এই মুহূর্তে পরিবর্তন বা উন্নত করা দরকার?

অপ্রস্তুত অবস্থায় প্রথমেই যেটা মনে এসেছে সেটাই বলেছি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। আমাদের মতো ভণ্ড শিক্ষাব্যবস্থা আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির কারণে কেউ বিপদে না পড়লে সহজে পড়াশোনা আর জ্ঞান চর্চার আশে পাশেও যায় না। আগে এ পড়াশোনা সেক্টর ঠিক করলেই অনেক সমস্যার গোড়া থেকেই সমাধান। জিজ্ঞেস করছিল, শিক্ষকরা কেন রাজনীতি করে? পিছলায়ে গেছি, উত্তর দেয় নাই।

আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা থাকলে টিচার স্টুডেন্ট এম্নেই দৌড়ের উপর থাকবে। এই খানে মাস্টারি হলো দুনিয়ার প্রেসারের কাজ। সারদিন খাতা দেখা এসাইনমেন্ট দেখা, ক্লাস নেয়া, রিসার্চ আর স্টুডেন্টস অ্যাডভাইস করেই কুল পায় না। ভালোমত রিসার্চ গ্রান্ট আনতে না পারলে বা স্টুডেন্টরা খারাপ এসেস্মেন্ট দিলে লাত্থি দেয় ভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট। নিজের কথাই বলি, এখানে এক বছরে যা পড়তে হয়েছে, দেশে ৫ বছরেও তা পড়ি নাই। এত এত অ্যাসাইনমেন্ট, হোমোয়ার্ক, এক্সাম দেই, এই গুলা টিচাররা কেম্নে খুঁটায় খুঁটায় পড়ে আর ফিডব্যাক দেয়। এরা এত সময় পায় কই? আবার রিসার্চ করে কেমনে? আর আমার সাইড হতে, পাস নিয়েই টানাটানি? বউ বাচ্চারেও সময় দিতে পারি নাই। খুব ঠ্যালায় থাকি।

খুব স্বপ্ন দেখি দেশে জান মালের নিরাপত্তা আসবে। চিকিৎসা একটু ভালো হবে। ভার্সিটিতে খালি পড়াশোনা হবে। এখানে পড়তে আসা অনেক ছেলে মেয়ে ফিরে যাবে। দেশে গিয়ে পড়াবে, রিসার্চ করবে। বুড়া বয়সে এটা দেখতে পেলেও অনেক শান্তি লাগবে। যদি বুড়া হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকি।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: শিক্ষার্থী, দ্যা বুশ স্কুল অব পাবলিক সার্ভিস অ্যান্ড গভর্নমেন্ট, টেক্সাস এএন্ড এম ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ।