আবরারের জন্য শোকগাথা

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ২১:২৬ | প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৩৫
নিহত আবরার ফাহাদ (ফাইল ছবি)

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় ক্যাম্পাসের পাশাপাশি ফুঁসে উঠেছে ভার্চুয়াল জগৎও। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, তারা আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাকরুদ্ধ, স্তব্ধ, শোকাহত। তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না বুয়েটের মতো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন বর্বর কাণ্ড ঘটতে পারে। আবেগঘন এসব স্ট্যাটাসে আবরার হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তারা।

আবরার হত্যার ঘটনায় শোকাহত অনেকে তার উদ্দেশে রচনা করেছেন কবিতা-শোকগাথা। দেশের, সমাজের ও নিজেদের অসহায়তার কথা তুলে ধরে তাকে রক্ষা করতে না পারার জন্য আবরারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা আর হাহাকার চিত্রিত হয়েছে এসব কবিতায়।

‘বুয়েটে এখন মেধাবী খুনিরাও পড়ে, বাস করে দানব/এদেশে একদল ভিসিও চরম বেয়াদব, অসভ্য দাস।’ এই শিরোনাম দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান।

তিনি লেখেন, ‘...আহারে, বুয়েটে এখন মেধাবী ছাত্রছাত্রীই নয়, খুনিরাও পড়াশোনা করে, বাস করে।.. বর্বররা একজন আবরারকে নৃশংসভাবে সাপের মতোন পিঠিয়ে গোটা শরীরে কালসিটে দাগ ফেলেই হত্যা করেনি, একটি স্বপ্নকেই খুন করেনি, মায়ের প্রতিটি আবেগ অনুভূতি ও স্বপ্নকে খুন করে বাবার বুকে বোবা কান্নার পাথর দিয়ে কাঁধে তুলে দিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি লাশ।’

আবরার হত্যার ঘটনায় সারারাত ঘুমাতে পারেননি উন্নয়নকর্মী ও কলামলেখক শরিফুল হাসান। তিনি লেখেন, ‘...আবরারের বাবা-মায়ের কান্নার ছবিগুলো যতবার দেখছি, যতেবার তাদের আর্তনাদের কথা পড়ছি, ততবার আমার বুকটা ভেঙে যাচ্ছে। সহ্য করতে পারছি না। সকাল থেকে এই মধ্যরাত পর্যন্ত সারাটা দিন আমার ভীষণ যন্ত্রণা লেগেছে। বারবার ভাবছি, কতটা অমানুষ হলে একদল ছাত্র মিলে একজনকে নির্মমভাবে পেটাতে পারে! কতটা নির্মম হলে হাসপাতালে না নিয়ে একটা মানুষকে সিঁড়িতে ফেলে রাখে? গত ১৫ বছর ধরে আমি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি।’

কলেজশিক্ষক ও লেখিকা ম্যারিনা নাসরিন লেখেন, ‘ঘৃণা ক্ষোভ হতাশা দুঃখ প্রকাশ করার জন্যও যে শব্দের অভাব পড়ে যায় সেটা আজ টের পাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি ফেসবুকের পোস্টগুলো পড়েন? পড়লে বুঝতে পারতেন আবরার তাঁর ইমেজের কতটা ক্ষতি আজ করে গেলো!... আমার বুকের মধ্যে যে ঝড় বইছে সেই ঝড় প্রতিটা মায়ের বুকে আজ। এমনকি ওই খুনিদের মায়ের বুকেও হয়তবা। এই ঝড়ের লক্ষণ কিন্তু ভালো নয়।’ এই খুনের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত প্রত্যেককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

‘ফাহাদ, ভালো থেকো পুত্র আমার’ শিরোনামে একটি কবিতা পোস্ট করেন কবি ও লেখক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। ‘...এ লাশ বহন আমি করবো না।/ পিতার হাতে এ লাশ এখন আসবে না।/এ লাশের তলে থাকবে নদী, ফুল পাতা জল/ এ লাশের তলে থাকবে শপথ মৃত্যুহীন, অনর্গল ।/মায়ায় মায়ায় আলিঙ্গনে এ লাশ হবে সূর্যভোর।/এ লাশের তলেই থাকবে আমার সব পাঁজর।/এ লাশ বহন আমি করবো না।’

বাংলা একাডেমির উপপরিচালক রাহিমা আক্তার কল্পনা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আকুতি জানান এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য। তিনি লেখেন, ‘আবরারের নির্যাতিত ছবি দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। হয়তো দম আটকে মারা যাব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার পায়ে ধরছি, এই নৃশংসতার বিচার করুন।’

‘আবরার’ শিরোনামে কবিতায় কবি রোমেন রায়হান লেখেন, ‘দুমড়ে মুচড়ে স্বপ্নের মালা/ আকাশ ছোঁয়ার সাধ/প্রিয় বাবা তুমি প্রস্তুত করো,/ তোমার চওড়া কাঁধ/আগে চড়েছিল ছোট্ট আমিটা/এবার আমার লাশ/

কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক ও লেখক জসিম মল্লিক লেখেন, ‘আবরার, ক্ষমা করো। জানি না পিটিয়ে মারার সময় তুমি কতটা কষ্ট পেয়েছিলে, বাবা! আমার ছেলের নামও যে আবরার! এই নিষ্ঠুরতায় আল্লার আরশ কেঁপে ওঠে না কেন! আমি যে কেন এত কষ্ট পাচ্ছি!!’

এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ প্রভাষ আমিন লেখেন, ‘কুকুরকেও কোনো মানুষ টানা সাত ঘণ্টা ধরে পেটাতে পারে না। এরা মানুষ তো নয়ই, পশুও নয়। কারণ পশু সমাজেও কিছু সিস্টেম আছে। কোনো পশু কখনো বিনা কারণে কাউকে আক্রমণ করে না। বুয়েট ছাত্রলীগের এই ছেলেগুলো মানুষ তো নয়ই, পশুও নয়; এরা দানব, এরা মনস্টার।’

‘আবরার’ শিরোনামে কবি মতিন রায়হান লেখেন, ‘আবরার!/ কখনো কখনো মনে হয় বেঁচে আছি তো!/ এমন মৃত্যু উপত্যকা কী করে আমার দেশ হয়!/ শত ধিক! নিজেকেও!/ তথাকথিত সভ্যতার কণ্ঠ চেপে ধরেছে আজ/ হায়েনা-সময়/ আবরার, এসো/ আমরা আবারও মৃত্যুকে জয় করি।’

(ঢাকাটাইমস/৮অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :