‘ভিসিদের অভিভাবক এখন ছাত্রলীগ’

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:১০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন সিনিয়র সাংবাদিক আফসান চৌধুরী। এটা শুধু এই সরকারের আমলে নয়, সব সরকারের আমলেই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো ভিসিদের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে।

বুয়েট ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখা প্রসঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে আফসান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এখনকার ভিসিদের অভিভাবক হচ্ছে ছাত্রলীগ। দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতায় দেখেছি দেশের রাজনৈতিক ও শিক্ষাকাঠামো অনুযায়ী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি সরকারের নির্দেশে চলে। বিভিন্ন সময়ে ভিসিরা সংকটকালে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বা যারা তাকে নিয়োগ দিয়েছে তাদের জিজ্ঞেস করেন। তো এই কাঠামো যেখানে স্থায়ী রয়েছে সেখানে ভিসির অবস্থা তো বুয়েটের ভিসির মতো হবেই।’

মঙ্গলবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসির একটি টক শোতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সংবাদ সম্প্রসারণ’ নামের এই অনুষ্ঠানটিতে তার সঙ্গে প্যানেল আলোচক ছিলেন সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন ফাহমিদা শম্পা।

ছাত্রলীগের নৃশংস পিটুনিতে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর ক্যাম্পাসে এসে চরম তোপের মুখে পড়েন বুয়েট ভিসি সাইফুল ইসলাম। শিক্ষার্থীরা তাকে প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। এ প্রসঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে গোলাম রহমান বলেন, ‘একজন ভিসি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক আর তিনিই তাকে দেখতেও আসেননি এমনকি জানাজায়ও যাননি এটি খুবই হতাশাজনক। শেষ পর্যন্ত এসেছেন। হয়তো তার গদি রক্ষার তাগিদে এসেছেন। তাহলে উনার নিজস্ব সত্তা বলতে কিছু নেই? শিক্ষার্থীরা তার কাছে তাহলে কতটা নিরাপত্তা অনুভব করবে? সেখানে বাধ্য হয়ে না এসে বরং শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়েই তিনি এই কাজটি করতে পারতেন। কারণ শিক্ষার্থীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি প্রশাসন চালাতে পারবেন না। শিক্ষার্থীদের নিয়েই তার সংসার। সেখানে তাকেই যদি না পাওয়া যায় তাহলে শিক্ষার্থীদের এমন পরিস্থিতি অবলম্বন নিতে হয়।’

আবরার হত্যায় জড়িতের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের ঘোষণা এবং ছাত্রলীগের কাছ থেকে তাদের বহিষ্কার এগুলোই কি যথেষ্ট? এমন প্রশ্নে আফসান চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টা হলো কাঠামোগত। পাকিস্তান আমলে নির্যাতনের যে কাঠামো ছিল এখনকার ছাত্র নির্যাতনও সেভাবেই করা হয়েছে। তবে এটা কোনোভাবেই বন্ধ সম্ভব নয়। কারণ তারা জানে এগুলো করলে দলের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যাবে। আর এ অন্যায়ের কারণে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়। তাদের দায় এড়িয়ে যায়। অবাঞ্ছিত বলা হয় তখন। কিন্তু জনগণ তো জবাব চায়। কিন্তু সরকার এখন এত সবল জনগণ কী বিশ্বাস করলো আর না করলো তার কিছু যায় আসে না। কারণ এই সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ নেতারাও দেখেছেন। তবে বহিষ্কার করা ছাড়া কোনো উদ্যোগ নেই। কারণ তারা জানেন তারা নিরাপদ থাকবেন। এই নিরাপত্তা দল থেকে তারা পাচ্ছে। তাই নির্যাতন করার এবং এটি দিনের পর দিন লালন করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন।’

আবরারের আগে বিশ্বজিৎ হত্যায়ও অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এখনো বিচার হয়নি। এই বিচারের আশার জায়গা কতটা? এই প্রশ্নে গোলাম রহমান বলেন, ‘যেকোনো বিচারের জন্যই বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তার মানে অপরাধীরা ভালোভাবেই জানে অপরাধ করলেও আইনের ফাঁক-ফোঁকর থেকে বের হওয়া যায়। তবুও এবারের বিষয়টি নিয়ে আশা করা যায় দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে নির্যাতন সেল রয়েছে। এটি কি আবরার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যাবে? এই প্রশ্নে আফসান চৌধুরী বলেন, ‘টর্চার সেল তো শুধু ছাত্রলীগই নয়, যুবলীগের অফিসেও পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে এটা নিশ্চিত যে, কারো না কারোর অনুমতি ছাড়া এতগুলো জায়গায় থাকা সম্ভব নয়। হল প্রশাসনও স্বাধীন নয়। কারণ এতক্ষণ ধরে ছাত্রটিকে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে বিষয়টি হল প্রশাসন অবশ্যই জেনে থাকবে। আর শিক্ষার্থীরাও জেনে থাকবে। কিন্তু ভয়ের সংস্কৃতি কিংবা বিচার না পাওয়াটা বেশি কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। মূল ব্যাপারটা হলো একবার যদি ভয়ের রাজনীতি তৈরি করা যায় তাহলে সবকিছুইতেই সুবিধা পাওয়া যাবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৯অক্টোবর/টিএটি/জেবি)