সড়কের বেহালদশা, দুর্ভোগে ১২ গ্রামের মানুষ

প্রকাশ | ১০ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:২৮

রানা আহমেদ, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের নলকা-দশসিকা সড়কটি সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটারের অধিকাংশ স্থানে কার্পেটিং, পিচ, খোয়া উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে কাঁদা-পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে এ সড়ক দিয়ে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রায় ১২ গ্রামের মানুষের। বিকল্প না থাকায় ভাঙা এ সড়কটি দিয়েই প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচারীসহ অটোভ্যান-রিকশা, সিএনজি টেম্পু, নছিমন, করিমন, মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের চলতে হচ্ছে তাদের।

গ্রামগুলো হলো- উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের ধুঞ্চি, চরধুঞ্চি, কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের গাড়াবাড়ি, চরগাড়াবাড়ি, ঝাঁটিবেলাই, মুখবেলাই, ছোটকুড়া, নান্দিনা, দিয়ারা, ধোপাকান্দি, দশসিকা ও চর দশসিকা।

এ বিষয়ে ভ্যানচালক আমির হোসেন, আব্দুল মজিদ, আব্দুর রশিদ জানান, এই ভাঙা সড়ক দিয়ে অটোভ্যান চালানো তাদের জন্য খুবই কষ্টকর। প্রায়ই ভ্যান উল্টে যাত্রীরা আহত হন। তাদের ভ্যান ভেঙেচুরে যায়। অল্প দিনেই টায়ার-টিউব নষ্ট হয়ে যায়। অপর দিকে ভাঙা সড়কে যাত্রীরা ভ্যানে উঠতে চান না। এ কারণে তাদের আয়-রোজগারও আগের চেয়ে অনেক কম। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঝাটিবেলাই গ্রামের রেজাউল করিম, শামছুর রহমান, গাড়াবাড়ি গ্রামের আব্দুল হামিদ, বড়কুড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ভদ্রঘাট ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিউলি রেজা জানান, নলকা-দশসিকা সড়কের এ বেহাল অবস্থার কারণে এ গ্রামের মেয়েদের কেউ বিয়ে করতে আসতে চায় না। এছাড়া গর্ভবতী নারীদের জরুরি অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া যায় না। ভ্যান-রিকশা উল্টে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। মানুষজন আহত হয়। মালামালের ক্ষতি হয়। এ সড়কের এমন দশার কারণে এ এলাকার চারটি প্রাইমারি স্কুল, একটি কলেজ, একটি মাদ্রাসা, দুটি হাইস্কুলের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া এ সড়কের সাথে যুক্ত প্রায় ১২টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে জেলা শহর ও উপজেলা সদর, থানা, কোট ও বিভিন্ন অফিসে নানা কাজে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তারা এ সমস্যার দ্রুত সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জোর দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে ভদ্রঘাট ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল কালাম এ সড়কের বেহালদশা তুলে ধরে বলেন, ‘সড়কটি এতোই খারাপ যে, এলাকাবাসীর যাতায়াতে খুবই কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। তাই বিষয়টি মাথায় নিয়ে এ সড়কটি দ্রুত মেরামতের জন্য আমি ভদ্রঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও কামারখন্দ ইউএনওকে বলেছি। আশা করি, তার এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’

এ বিষয়ে ভদ্রঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, সড়কটি আমার ইউনিয়ন পরিষদের নয়। এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তাই এখানে আমরা কিছু করতে পারছি না। তবে সড়কটি দ্রুত মেরামতের জন্য সিরাজগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগকে অনুরোধ করেছি। আশা করি, অচিরেই তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।’

এ বিষয়ে কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, সড়কটি মেরামতের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বলেছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি করবে। কাজটি হয়ে গেলে এলাকাবাসীর এ দুর্ভোগ আর থাকবে না।

সিরাজগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম জানান, সড়কটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ পেলেই সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১০অক্টোবর/এলএ)