বিশ্বব্যাংক বলছে প্রবৃদ্ধি ৭.২ শতাংশ, সরকারের হিসাব ৮.২

প্রকাশ | ১০ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ প্রবৃদ্ধি হবে সেবা খাতের হাত ধরেই। তবে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৭ দশমিক ৩ শতাংশে। তবে সরকারের প্রক্ষেপণ হচ্ছে এ অর্থবছর ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। সে হিসেবে সরকারের সঙ্গে বিশ^ব্যাংকের ১ শতাংশের ফারাক রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। রাজধানীর আগারগাঁ-এ বিশ^ব্যাংক কার্যালয়ে এক প্রেস বিফিং মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির ঢাকা অফিসের সিনিয়র ইকনোমিস্ট বার্নার্ড হ্যাভেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে তার মধ্যে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে হয়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৯ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে হয়েছিল ১৩ শতাংশ। তবে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৭ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে ব্যক্তিখাতের ভোগ বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে দাঁড়াতে পারে ৬ দশমিক ২ শতাংশে, যা গত অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। সরকারি ভোগ ব্যয় ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৮ দশমিক ১ শতাংশ। তবে রপ্তানি কমবে এবং আমদানি বেড়ে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ^ ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেমবন বলেন, বাংলাদেশের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অনেক প্রশংসার। এক্ষেত্রে সংখ্যা কোনো বিষয় নয়। ইতিবাচক উন্নতি যে হচ্ছে এটিই অনেক বড় ব্যাপার। তাছাড়া দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। গ্রামীণ অর্থনীতি ভালো করছে। তবে টেকসই প্রবৃদ্ধিও জন্য চলমান সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, খেলাপি ঋণ কমিয়ে নিয়ে আসা, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় বিশেষ নজর দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে ডুয়িং বিজেনেস পরিবেশ উন্নত করতে হবে। কর্মসংস্থানমখী শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই জরুরি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই।

মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, বাংলাদেশ ইতিবাচক গতিতে এগুচ্ছো। ২০০৭ সালে এসেছিলাম তখন বাংলাদেশ এই অবস্থায় ছিল না। বাংলাদেশ অনেক বিনিয়োগ হচ্ছে ধীরে ধীরে সুফল পাওয়া যাবে। '

এক প্রশ্নের জবাবে মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, ‘জিডিপি গ্রথ কতো হলো এটা বিষয় না। বিষয় হলো এটা ইতিবাচ হচ্ছে কি না সে বিষয়টা। বাংলাদেশর গ্রথ ইতিবাচক।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। দক্ষতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে বাংলাদেশে দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে প্রফেশনালস এর ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে ৬৯ শতাংশ। এছাড়া টেকনিশিয়ান ও অ্যাসোসিয়েটস প্রফেশনালস এর ক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ, ম্যানেজার ৬১ শতাংশ, সার্ভিস ওয়ার্কার ৩৭ শতাংশ, ক্লারিক্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার ৩৫ শতাংশ এবং কৃষি খাতে মাত্র ১ শতাংশ দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ও সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে বিশ্ববাজারে দুর্বলতা বিরাজ করছে। বিক্রিমূল্য কমে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। যুক্তরাষ্ট্রে চায়নিজ শুল্ক বসানো হচ্ছে। ক্রেতারা এখন স্বস্তার বাজার খুলছে। মূল্য প্রতিযোগিতায় আমাদের স্বক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বাজার স্বস্তা হয়ে যাচ্ছে। ভিয়েতনাম ও ভারতের সঙ্গে পেরে দিচ্ছি না। এসব মোকাবেলা করা অন্যতম চ্যালঞ্জ।'

তিনি বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও চাকরির বাজার নিশ্চিতে বাংলাদেশকে কর্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিশ্বব্যাংকের যেগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব।

(ঢাকাটাইমস/১০অক্টোবর/জেআর/ইএস)