গোখরার চেয়েও বিষধর সাপের কামড়ে দম্পতির মৃত্যু

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:৪৮ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:০৯

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাপে কাটা এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে তারা মারা যান। এর আগে রাত দুইটার দিকে তাদের সাপে কাটে।

মারা যাওয়া দম্পতি হলেন, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার রামচরণপুর গ্রামের নূর ইসলাম এবং তার স্ত্রী মৌসুমি খাতুন। ২৯ দিন আগে নূর ইসলামের বাবা সিরাজুল ইসলামেরও মৃত্যু হয়েছে সাপে কেটে।

রামেক হাসপাতালে নূর ও মৌসুমিকে আনার পাশাপাশি তাদের বিছানা থেকে একটি সাপও ধরে আনেন স্বজনরা। রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বেলাল হোসেন দেখে জানান, সাপটির নাম ‘কমন ক্র্যাট’। এই সাপ ফনা তোলে না। কিন্তু গোখরার চেয়ে চারগুণ বেশি বিষধর। বালতিতে করে জালে জড়িয়ে আনা সাপটি দেখার পর তিনি এটিকে মেরে পুঁতে ফেলার নির্দেশ দেন।

নূরের চাচা আবদুর রহিম জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নূর ও মৌসুমি ঘরে খাটের ওপর ঘুমিয়ে ছিলেন। মশারির ভেতরে ঢুকে সাপটি তাদের দুজনকেই কামড় দেয়। এরপর তাদের ঘুম ভেঙে গেলে তারা দেখেন, বিছানার ওপর একটি সাপ। পরে মাছ ধরা জাল দিয়ে সাপটিকে ধরা হয়।

এরপর তাদের দুজনকেই মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে সাপে কাটার কোনো ওষুধ না থাকার কারণে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের রামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। শুক্রবার ভোর ছয়টায় তাদের এখানে ভর্তি করা হয়। নূর হাসপাতালের ৪২ ও মৌসুমিকে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে রেখে এন্টিভেনম প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু সকাল নয়টার দিকে একে একে দুজনই মারা যান।

আবদুর রহিম আরও জানান, ২৯ দিন আগে নূরের বাবা সিরাজুল ইসলামেরও মৃত্যু হয়েছে সাপে কেটে। বাড়িতে সাপে কাটার পর তাকে হাসপাতালে নেয়ারও সময় পাওয়া যায়নি। নূর ও মৌসুমিকে হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো গেল না। রহিম বলেন, মহাদেবপুরের হাসপাতালে সাপে কাটার ওষুধ নেই। সেখানে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিলে হয়তো নূর ও মৌসুমিকে বাঁচানো যেত।

রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক বেলাল হোসেনও একই কথা বলছেন। তিনি বলেন, মহাদেবপুর থেকে রামেক হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। কমপক্ষে দুই ঘণ্টার পথ। এই দুই ঘণ্টা আগে যদি নূর ও মৌসুমিকে এন্টিভেনম প্রয়োগ করা যেত তাহলে তাদের প্রাণরক্ষার সম্ভাবনা ছিলো।

জানতে চাইলে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আ. ম. আখতারুজ্জামান বলেন, উপজেলা পর্যায়ে সাপে কাটা রোগীদের জন্য এন্টিভেনমের সরবরাহ নেই। আর এন্টিভেনম ছাড়া সাপে কাটা রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসাও হয় না। তাই তাদের এখানে সাপে কাটা রোগী গেলে নওগাঁ অথবা রাজশাহী পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে অনেকেরই জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে।

জানা যায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই সাপের নিয়মিত দেখা মেলে। আর প্রতি বছর অনেক মানুষের মৃত্যু হয় বিষধর এই সাপের কামড়ে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এ সাপের প্রাদুর্ভাব বাড়ে।

সর্প বিশারদদের মতে, এর বিষের বা নিউরোটক্সিনের তীব্রতা এত বেশি যে কামড়ানোর সাথে সাথে শরীরের কামড় খাওয়া অংশ অবশ হয়ে যায়। ফোলা, জ্বালা বা যন্ত্রণা হয় না। এমনকি দাঁতের চিহ্নও থাকে না। মাটির দেওয়াল বেয়ে ডোমনা চিনি খুব সহজে ওঠানামা করতে পারে। মানুষের বিছানার গরমে থাকতে ভালোবাসে। ঠিক সেই কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে এদের শিকার হন মানুষজন। প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরে পেটে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, বমি শুরু হয়। ততক্ষণে বিষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে শরীরে।

ঢাকাটাইমস/১১অক্টোবর/আরআর/এমআর