আলফাডাঙ্গায় মধুমতির ভাঙনের কবলে শত শত পরিবার

শেখ মফিজুর রহমান শিপন, ফরিদপুর
 | প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:০৬

ফরিদপুরের মধুমতির ভাঙনে আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুরিয়া, গোপালপুর ও টগরবন্দ ইউনিয়নের তিনটি স্কুল, একটি মাদ্রাসা, মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, পাকা সড়ক, বসতবাড়িসহ নদীগর্ভে চলে গেছে একটি গুচ্ছ গ্রাম। গত ১৫ দিনে এই এলাকার তিন শতাধিক পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মধুমতির ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও অর্ধশতাধিক স্থাপনা।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনাম হাসান শিপন জানান, তার ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে দুই কিলোমিটারজুড়ে নদীর এই ভাঙন শুরু হয়েছে। তিনি জানান, শিখাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দারুল সালাম দাখিল মাদ্রাসা, একটি মসজিদ ও বড় গোরস্তান (কবরস্থান) নদীগর্ভে চলে গেছে। এছাড়াও এই ইউনিয়নের একটি গুচ্ছ গ্রাম ও আশ্রয়ন প্রকল্পের ৬৫টি বাড়ি নদীতে চলে গেছে। আংশিক ভাঙনের শিকার হয়েছে শিকারপুর সড়ক ও চরডাঙ্গা-চরআজমপুর সড়কটি।

এদিকে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১১৮টি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই চেয়ারম্যান।

উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হাসান জানান, মধুমতি নদী বাজড়া গ্রামে বেশি ভাঙছে। তিনি বলেন, বাজড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ নদীগর্ভে চলে গেছে। এ এলাকার অর্ধশত বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

চেয়ারম্যান বলেন, ভাঙনে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া এবং শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করার বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমার সরদার জানান, দক্ষিণ পাঁচুড়িয়া পুরো গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে, পশ্চিম চর-নারানদিয়া গ্রামের প্রাথমিক সরকারি স্কুল ভবন থেকে মাত্র ২০ হাত দূরে অবস্থান করছে নদী। যেকোনো সময় ভেঙে যাবে বিদ্যালয়টি। উত্তর চর-নারানদিয়া গ্রামের কয়েকশ বাড়িঘর, ফসলি জমি, বাঁশতলা বাজার থেকে বোয়ালমারী উপজেলার যাতায়াতের পাকা সড়কের তিন কিলোমিটার নদীগর্ভে চলে গেছে। দক্ষিণ চর-নারানদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

পঞ্চিম চর-নারানদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাব খাতুন বলেন, আমার বিদ্যালটি চরম ঝুঁকিতে রয়েছে, নদী থেকে ২০ হাত দূরে স্কুলের ভবন, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ঠিক মতো স্কুলে পাঠাচ্ছে না।

এদিকে ভাঙন কবলিত এলাকার একাধিক মানুষ অভিযোগ করেন, পাউবোর নিযুক্ত ঠিকাদার কোম্পানি নিলয় ট্রেডাস ঠিক-ঠাক মতো বালুর বস্তা ফেলছে না, মাঝে মাঝে কাজ করে আবার থেমে যায়। ঠিকাদারা সঠিক কাজ করলে হয়তো কিছু সম্পদ রক্ষা করা যেতো।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান ভাঙন কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ভাঙন রোধে পাউবোর মাধ্যমে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এরই মধ্যে ২২৬টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের মাঝে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আরও সহায়তা দেওয়ার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’

ভাঙন কবলিত বিশ গ্রামে মানুষের অসহায়ত্বের কথা উল্লেখ করে আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহিদ হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, দ্বিতীয় দফায় মধুমতির পানি বৃদ্ধির ফলে এই উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ভাঙন কবলিত মানুষগুলো অসহায়ের মতো বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। তিনি এই ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।

এই উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশতলা সড়কের অধিকাংশ এবং টগরবন্দ এলাকার দুটি পাকা সড়কের অংশিক নদীগর্ভে চলে গেছে।

ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, নদীতে প্রচুর ¯্রােত, এর মধ্যে জরুরি কাজ করা কঠিন। ¯্রােত না কমলে কাজ করা যাবে না।

তিনি বলেন, মধুমতির ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ করতে ব্যায় হবে প্রায় তিনশ কোটি টাকা। কিন্তু প্রয়োজন মতো অর্থ বরাদ্দ আমরা পাচ্ছি না। এটাই সমস্যা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, জেলার পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁ’য় ভাঙন শুরু হয়েছে। এই ভাঙন রোধে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। তবে আগামী শুকনো মৌসুমে স্থায়ীভাবে যাতে কাজ করা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা চলছে।’

(ঢাকাটাইমস/১২অক্টোবর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :