আলফাডাঙ্গায় নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে ১০ গ্রাম
মধুমতির নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম। ঠেকানো যাচ্ছে না ভাঙন। অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। গত ১০ দিনের ভাঙনে পাঁচ শতাধিক বসত বাড়িসহ হাজারও একর জমি, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হতে বসেছে হাজারও বসতবাড়ি, সড়ক, সরকারের নির্মিত গুচ্ছগ্রাম ও আবাদি জমি, খেলার মাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাদ্রাসা, ঈদগাহসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
গ্রামবসাসী জানান, সম্প্রতি বন্যার পানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার পর থেকে উপজেলার টগরবন্দ, গোপালপুর, পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। অন্তত ১০টি গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি লাগামহীন ভাঙন এলাকাবাসীর ঘুম কেড়ে নিয়েছে। বিশেষ করে টগরবন্দ ও পাচুড়িয়া ইউনিয়নে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁচুড়িয়া পুরো গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। পঞ্চিম চর-নারানদিয়া গ্রামের প্রাইমারি সরকারি স্কুল ভবন থেকে মাত্র ২০ হাত দূরে অবস্থান করছে নদী। ভাঙন চললে যে কোনো সময় ভেঙে যাবে বিদ্যালয়টি।
উত্তর চর-নারানদিয়া গ্রামের কয়েকশ বাড়িঘর, ফসলি জমি, বাঁশতলা বাজার থেকে বোয়ালমারী উপজেলার যাতায়াতের পাকা সড়কের তিন কিলোমিটার নদীগর্ভে চলে গেছে। দক্ষিণ চর-নারানদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া, টগরবন্দ ইউনিয়নের সরকারের নির্মিত গুচ্ছগ্রামের শতাধিক বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। তারা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
নদীর পানি কমতে শুরু করেছে তাই এই অঞ্চালে শিকারপুর, কৃষ্ণপুর, চাপুলিয়া, চরডাংগা, চর আজমপুর টিটা পানাইল গ্রামে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন।
গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামের মসজিদ ও পাকা সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, সেখানে জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া সময়মত জিও ব্যাগ ফেলা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ভাঙনের নিকটবর্তী স্থান হতে বালি উত্তোলন করে নিম্নমানের জিও ব্যাগে তা ফেলা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পঞ্চিম চর-নারানদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাব খাতুন বলেন, আমার বিদ্যালয়টি চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। নদী থেকে ২০ হাত দূরে স্কুলের ভবন। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ঠিক মতো স্কুলে পাঠাচ্ছে না। আমরা সংকটময় মুহূর্তে রয়েছি।
নদী ভাঙন কবলিত উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, বিগত দশ বছরের মধ্যে এমন ভাঙন দেখা যায়নি। তারা এর একটি স্থায়ী সমাধান চান।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান বলেন, নদী ভাঙনের এলাকায় শুরু থেকে যদি জিও ব্যাগ ফেলা হত তাহলে কিছু বাড়ি রক্ষা হতো। এখানে ঠিকাদের অবহেলা ছিল। তাছাড়া ব্যাগের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আমরা এখানে নিয়মিত তদারকি করছি যাতে সঠিক সংখ্যায় ব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু ঠিকাদার অত্যন্ত ধীর গতিতে এ কাজ চালাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি ভাঙনরোধে স্থায়ী কিছু করার জন্য। এ ব্যাপারে আমাদের সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। বন্যার পানি সরে গেলে আমাদের কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছি।
জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিলয় ট্রেডার্স সারা জেলাব্যাপী এই জরুরি জিও ব্যাগের কাজ করে থাকে। গত বছর চরভদ্রাসনে তাদের গাফিলতির কারনে পদ্মায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। যার কারণে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তারপরেও ওই একই প্রতিষ্ঠান অফিস ম্যানেজ করে এই কাজ গুলো করে থাকে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার নিলয় এন্টার প্রাইজের পরিচালক বলেন, আমার পূর্বে যে ঠিকাদার কাজ পেয়েছিল সে কাজ করতে ব্যর্থ হলে আমাকে নতুন করে কাজ দেওয়া হয়েছে। আমার কাজের মধ্যে কোন গাফলতি নেই। আমি নিয়ম মেনে কাজ করছি।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সস্তোষ কর্মকার বলেন, সারাদেশেই নদী ভাঙন আছে, তাই দ্রুত কোনো প্রকল্প নেওয়া সম্ভব না। স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা পাউবোর রয়েছে। এ ব্যাপারে হিসাব-নিকাশ প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
তিনি আরো বলেন, নদী ভাঙন রোধ, সংস্কার, সংরক্ষণে আসলে বৃহৎ প্রকল্পের প্রয়োজন। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। নদীভাঙন কবলিত স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তিনটি ইউনিয়নে প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের মধ্যে আমরা সরকারি ত্রাণ দিয়েছি। আমরা জেলা প্রশাসক ও ইএনওর নির্দেশক্রমে নতুন করে তালিকা নিচ্ছি। আমরা সরকারি জমি নির্ধারন করে গুচ্ছগ্রামের কাজ শুরু করবো। নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ভাঙনের বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
ঢাকাটাইমস/১২অক্টোবর/ইএস