মন্তু-শের আলমে জিম্মি সরাইল যুবলীগ

প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৫৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গঠনতন্ত্র অনুসারে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তিন বছর পর পর, যা ‘ত্রিবার্ষিক সম্মেলন’ নামে পরিচিত। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা যুবলীগ সম্মেলনের পর পাঁচ বছর পার করলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি মন্তু-শের আলম কমিটি।

২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া টাউন হলে জেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের উপস্থিতিতে সরাইল যুবলীগের সম্মেলনে আশরাফ উদ্দিন মন্তুকে সভাপতি ও শের আলম মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের উপজেলা কমিটি ঘোষণা করে জেলা নেতারা।

চলতি দায়িত্বের তিন বছর ও অতিরিক্ত দুই বছরসহ পাঁচ বছর পার হয়েছে এই কমিটির।  এখন পর্যন্ত  পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। আদৌ সম্মেলন হবে কি না তাও বলতে পারছেন না কেউ। সংগঠনকে কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে সভাপতি আশরাফ উদ্দিন মন্তু ও সাধারণ সম্পাদক শের আলম মিয়ার বিরুদ্ধে।  তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি তো করছেই না, উল্টো পাঁচজনের কমিটির সিনিয়ির সহ-সভাপতি আল ইমরান, যুগ্ম সাধারণ-সম্পাদক জিয়াউল হক জজ ও  সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সেলভীকেও মাইনাস করে রেখেছেন।

দীর্ঘদিন সম্মেলন না করা ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দেওয়ার বিষয়টি মন্তু-শের আলমের কারসাজি বলছেন উপজেলার নেতারা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে সরাইল উপজেলা যুবলীগের সাবেক নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরাইল আওয়ামী লীগের রাজনীতি ধ্বংস করে দিচ্ছে এই দুজন। নিজে আইনজীবী বলে হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে কিছু নেতাকর্মীকে নিজের পক্ষে কাজ করান মন্তু। গত কয় বছরে বনে গেছেন সরাইলের স্বঘোষিত ডন।’

নিজের পক্ষে কাজ না করায় মাদক দিয়ে কালিকচ্চ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুছা মৃধার ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রাসেল মৃধাকে ধরিয়ে দেন মস্ত এমন অভিযোগও উঠেছে। মন্তুর ফোন রেকর্ড ফাঁস হলে সাক্ষ্য-প্রমাণে কোর্ট থেকে মুক্তি পান রাসেল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে কয়েক দফা তারিখ ঘোষণার পরও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অসহযোগিতার কারণে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি।  এ ছাড়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের কোনোটিতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি তারা। যেখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে সেখানে তাদের মনঃপূত না হলে বিতর্কিত আরও একটি কমিটি ঘোষণা করেন মন্তু-শের আলম সিন্ডিকেট। তারা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সাংসদ ওবায়দুল মোক্তাদিরের অনুসারী বলে জানা যায়।

যুবলীগের এই দুই নেতার বিরুদ্ধে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ. যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করারও অভিযোগ উঠছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তাদের ওপর নাখোশ। বিভিন্ন ইউনিয়নে জেলা থেকে ঘোষিত  কমিটি ভেঙে দিয়ে তারা নিজেদের আজ্ঞাবহদের কমিটিতে বসিয়েছেন, যার  বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টাকার লেনদেন হয়েছে বলছেন অনেকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাইল যুবলীগ সভাপতির মাদকসংশ্লিষ্টতার কথা প্রচার পাচ্ছে। মারুফ রুবেল নামের সরাইল ছাত্রলীগের এক কর্মী নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, ‘সরাইলে মাদক ছড়িয়ে দিয়ে আশরাফ উদ্দিন মন্তু আজ সরাইলে মাদক সম্রাট নামে খ্যাত। সরাইলে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে অবৈধ কলেজ ও শিক্ষা নিয়ে জালিয়াতি বাণিজ্য শুরু করেছে রাজাকার নাতি মাদক সম্রাট মন্তু।’ অন্য একটি পোস্টে রুবেল সরাইল যুবলীগ থেকে মন্তু-শের আলমের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করেছেন্

মন্তু ও শের আলম শুধু যুবলীগ নয়, সরাইল আওয়ামী লীগের বিষফোঁড়া বলছেন জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। জেলা ও কেন্দ্রের সঙ্গে ‘কায়দা’ করে তারা সরাইলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন বলে জানান তিনি । নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হঠাৎ করে মন্তু ও শের আলমের এত পয়সা কোথা থেকে এল দুদক খোঁজ করলেই পারে।’ তারা দুজন থানা ও স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের গডফাদার বলে উল্লেখ করেন এই প্রবীণ আওয়ামী লীগার।

(ঢাকাটাইমস/১৩অক্টোবর/মোআ)