ছেলে আমার নির্দোষ, দাবি সম্রাটের মায়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:০৭

যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে নির্দোষ দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সন্তানের মুক্তি চেয়েছেন মা সায়রা খাতুন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি একজন মা হিসেবে আপনার কাছে আকুতি করছি, ওকে মুক্ত করে দিন। তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়ে আমার সন্তানের জীবন রক্ষা করুন।’ ছেলের অফিসে মাদক ও অস্ত্র ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি।

রবিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সায়রা খাতুন। সংবাদ সম্মেলনে সম্রাটের মায়ের পক্ষে তার বোন ফারহানা চৌধুরী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, সম্রাট গ্রেপ্তারের ১০ দিন আগে থেকে অফিসে ছিলেন না। তার অফিস ছিল অরক্ষিত। শরীর খারাপ থাকায় তিনি অন্যত্র অবস্থান করছিল। তার অফিসে মদ, ইয়াবা ও পিস্তল কিছুই ছিল না। আমাদের আশঙ্কা, এটি পরিকল্পিত সাজানো নাটক ছাড়া কিছুই না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার ছেলে নির্দোষ। তাকে মুক্তি দিন। উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাকে বাঁচতে দিন।

সম্রাটের মা বলেন, গত ৬ অক্টোবর আমার সন্তানকে গ্রেপ্তার করা হয়। যেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, সেখানে কোনো ধরনের অস্ত্র কিংবা মাদক পাওয়া যায় নাই। কিন্তু আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখতে পেলাম— তাকে কাকরাইল অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় এবং প্রায় চার ঘণ্টা ১৭ মিনিট তার অফিসে তল্লাশি করা হয়। তল্লাশি চলাকালে কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সম্রাটকে নিয়ে অফিসের ভেতরে প্রবেশের সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় লাইভ সম্প্রচারে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু লোক কাঁধে ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করে এবং অফিস থেকে বের হওয়ার সময় ওই সব লক্ষ্য করা যায়নি।

৬ অক্টোবর সম্রাটকে তার সহযোগী আরমানসহ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর কাকরাইলে তার অফিস থেকে ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়া যাওয়ায় ছয় মাসের জেল হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে আরও দুটি মামলা হয়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়ার দুই দিন পর ৮ অক্টোবর সম্রাট বুকে ব্যথা অনুভব করেন। ওই দিন সকালে কারা কর্তৃপক্ষ সম্রাটকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে তাকে জাতীয় হৃদেরাগ ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। চার দিন পর শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

সম্রাট দলে অনুপ্রবেশকারী নয় দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উন্নত চিকিৎসার জন্য সন্তানের মুক্তি দাবি করেন মা সায়রা খাতুন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সম্রাট দলে অনুপ্রবেশকারী নয়। আমি একজন মা হিসেবে আপনার কাছে আকুতি করছি, সম্রাটের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে ওকে মুক্ত করে দিন। তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়ে আমার সন্তানের জীবন রক্ষা করুন।’

বিভিন্ন ক্লাবের ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্রাটের জড়িত থাকার প্রসঙ্গে তিনি সম্রাটের মা বলেন, ‘ঢাকা শহরের প্রতিটি ক্লাব পরিচালনা করার জন্য কমিটি রয়েছে। খেলাধুলা পরিচালনার জন্য ওইসব ক্লাব থেকে নিপুণ খেলা পরিচালনার জন্য ক্লাব কর্তৃক প্রকাশ্যে ডাক (লিজ) দেওয়া হয়। আমার সন্তান সম্রাট কোনো ক্লাবের পরিচালনা কমিটির সদস্য নয় এবং ডাক গ্রহণকারীও নয়। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এবং ব্যক্তিগত আক্রোশে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হচ্ছে।’

সায়রা খাতুন চৌধুরী আরও বলেন, ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের যে মামলায় তাকে ছয় মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে, সে মামলার আদেশ আমরা এখনও হাতে পাইনি। ক্যাঙ্গারু বাংলাদেশি বন্যপ্রাণী নয় এবং বাংলাদেশ এই প্রাণীটির বিচরণ দেখা যায় না। যেহেতু ক্যাঙ্গারু বাংলাদেশে শিকার হয়নি, এটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের মধ্যে পড়ে না। ক্যাঙ্গারুর উক্ত চামড়াটি এক প্রবাসী বাংলাদেশি তাকে উপহার হিসেবে প্রদান করে বিধায়, এটি আইনবিরোধী কাজ নয়। এজন্য সাজা দেওয়ার বিধান নাই।’

এর আগে সম্রাটের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে তার মা সায়রা খাতুন চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘১৯৯৯ সালে ডা.দেবী শেঠীর অধীনে সম্রাটের ওপেন হার্ট সার্জারির মাধ্যমে বাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়। তখন থেকে সম্রাট আজ অব্দি অসুস্থ শরীর নিয়ে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর সম্রাটের বাল্ব প্রতিস্থাপন করার কথা ছিল সিঙ্গাপুরে। কিন্তু ২৮ সেপ্টেম্বর ছিল প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন। এ উপলক্ষে ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের উদ্যোগে কোরাখানি, মিলাদ মাহফিল ও রক্তদান কর্মসূচি থাকায় তার সিঙ্গাপুরে যাওয়া হয়নি।’

(ঢাকাটাইমস/১৩অক্টোবর/এসএস/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :