ইস্কাটনে সিটি করপোরেশনের অ্যাকশন!

প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:২৬ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:৩৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রবিবার দুপুর দেড়টা। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় সড়কের দুই পাশে স্থানীয় লোকজন ও পথচারীদের বেশ ভিড়। পরিবাগের দিকে দেখা গেল বেশকিছু লোকজন ফুটপাতের উপরে থাকা কয়েকটি দোকান ভাঙছেন। অন্যদিকে হলুদ রঙের বুলডোজার দিয়ে ফাস্টফুডের দোকান গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর মধ্যে কেউ কেউ তাকিয়ে আছেন কৌতুহল নিয়ে। কেউ আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন তার আয়ের একমাত্র উৎস টং দোকানটি গুঁড়িয়ে দেয়ার দৃশ্য।

এমন অভিযান শুধু ইস্কাটন নয়, রাজধানীজুড়ে প্রায়ই হয়ে থাকে। তবে এই উচ্ছেদ বেশিদিন স্থায়ী হয় না। কারণ যে কোনোভাবে প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনীতিকদের ম্যানেজ করে আবারো ফুটপাতে বসে যান দোকানিরা। যদিও অন্য এলাকা থেকে ইস্কাটনের ফুটপাত ও সড়ক বেশ পরিচ্ছন্ন। কারণ এই এলাকায় সরকারি বেশ কয়েকটি অফিস ছাড়াও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারই বেশি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর অঞ্চল-১ এর এই উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন নির্বাহী হাকিম মিজানুর রহমান। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা রিয়াজুল হোসেন।

অভিযানে দেখা গেছে, পরিবাগের বিটিসিএলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে যেসব ফাস্টফুডের দোকান যা রাখা ছিল তাও গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে সবজিবাগানের দিকে যেতে বাম পাশের বেশ কয়েকটি ভাতের ও চা, বিস্কুট বিক্রির দোকানও ভেঙে ফেলা হয়। সেখানকার দোকানিদের শেষ সম্বল রক্ষা করতে চেষ্টা করতেও দেখা যায়।

সেখান থেকে আর একটু পূর্ব দিকে আসার পর ফুটপাতের রেলিংয়ের ভেতরে রাখা ছিল ‘বৈশাখী কাবাব’ নামে একটি লোহার ভ্যান। সেটার মালিক ভেবেছিলেন এখানে রাখায় হয়তো রক্ষা পাবে আয়ের অবলম্বনটি। কিন্তু চোখ এড়ায়নি উচ্ছেদে আসা কর্মকর্তাদের। নির্দেশ দেয়া হলো সেটাও ভেঙে ফেলার।

দেখা গেছে, কর্মকর্তার নির্দেশ পেয়ে রেলিংয়ের ভেতরে চলে আসলেন চারজন কর্মী। কিন্তু ভ্যানটির ওজন বেশি হওয়ায় তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন আরো তিনজন। পরে অনেক কষ্টে ধাক্কা দিয়ে রেলিং পার করে মূল সড়কে ফেলার পর ডাকা হলো বুলডোজার। অনেকটা ‘মশা মারতে কামান দাগানো’র মতো- বুলডোজার দিয়ে নিমিষেই গুঁড়িয়ে দেয়া হলো কাবাবের ভ্যানটি।

পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যানটির মালিকের কোনো এক স্বজন আফসোস করে বলছিলেন, ‘এখানে রাখার দরকার ছিল? আর একটু সামনে নিয়ে রানিংয়ে থাকলে ভ্যানটা বাঁচত।’

এরপর অভিযান চালানো হয় প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে। তবে আগেভাগে খবর পেয়ে ভবনের উল্টো দিকে ভাতের একাধিক হোটেলের লোকজন আগেই সব সরিয়ে ফেলে।

পরে ভবনটির দেয়ালের ভেতরে রাখা বেশকিছু বেঞ্চ ভেঙে ফেলা হয়।

এসময় একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কয়দিন পরপর উচ্ছেদ করে আবার পুলিশ- সিটি করপোরেশন টাকা খাইয়া বসতে দেয়। মাঝে ক্ষতি হয় গরিব মানুষের।

অন্য একজন বলেন, ‘গরিবের সঙ্গে সবাই পারে। গুলিস্তানের অবস্থা তো আগের মতোই। কই সেখানে তো কেউ যায় না।’

সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রিয়াজুল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটা আমাদের নিয়মিত অভিযানের অংশ। সামনেও চলবে। কিন্তু অনেক সময় কেউ খবর প্রচার করে দিলে অনেককে অভিযানের সময় পাওয়া যায় না।’

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া নির্বাহী হাকিম মিজানুর রহমান ঢাকাটাইমকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালাই। এটা নতুন কিছু নয়। সামনের দিনেও এটা চলবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৩অক্টোবর/বিইউ/এলএ)