ভারত বধের ছক আঁকছে বাংলাদেশ
রোগাসোগা চেহারা, উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট। মাঠের মধ্যে যতটা ক্ষিপ্র, মাঠের বাইরে চলাফেরা ততটাই ধীর।অতীতে কাজ করে এসেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামলেই সদা তৎপর থাকেন ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ এর গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম রানা।
রবিবার সকালে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সংলগ্ন মাঠে অনুশীলন শেষ করে ড্রেসিংরুমের দিকে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে হয় আশরাফুলকে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল বলেন, ‘ভারতের জন্য আমরা তৈরি রয়েছি। অতীত ভুলে যান। মঙ্গলবার একটা নতুন নব্বই মিনিটের ম্যাচ। সেখানে যাদের পরিকল্পনা কাজ করবে, তারাই জিতে ফিরবে।’
আর সুনীল ছেত্রী, উদান্ত সিংহদের আক্রমণাত্মক ফুটবল থামিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে হাসতে থাকেন বাংলাদেশ গোলকিপার। তাঁর মন্তব্য, ‘বক্সের আশেপাশে সুনীল ভয়ঙ্কর। ওর কোনাকুনি সব শট, ফ্রি-কিক, পুরনো মুভ গত দু’দিন ধরে হোটেলের ঘরে বসে মন দিয়ে দেখেছি। কোচ গত রাতে সেই সঙ্গেই কাতারের বিরুদ্ধে আমাদের খেলার ভুলভ্রান্তি নিয়ে ভিডিও ক্লাস করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘কী ভাবে সুনীলদের বোতলবন্দি করতে হবে সেই সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্যও কোচ দিয়েছেন চার ডিফেন্ডার-সহ আমাকে। আজ হবে ভারতের শক্তি নিয়ে ভিডিও বিশ্লেষণ। আমরা তৈরি সুনীল-উদান্তদের জন্য।’
তবে বিপক্ষ গোলকিপার ভারতের গুরপ্রীত সিংহ সাঁধুর প্রশংসাও করছেন আশরাফুল। বলছেন, ‘কাতারের বিরুদ্ধে গুরপ্রীতের ক্ষিপ্র পারফরম্যান্স দেখেছি। সে দিনটা ওর ছিল।’
এদিন বাংলাদেশ অনুশীলন দেখে বোঝা গিয়েছে, ভারতীয় ফরোয়ার্ডদের বল নিয়ে দৌড়নোর জন্য ফাঁকা জায়গা দিতে নারাজ জেমি ডে-র ছেলেরা। সুনীল-উদান্তদের আক্রমণ ভোঁতা করতে বাংলাদেশ রক্ষণে এই দায়িত্ব সামলানোর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন স্টপার ইয়াশিন খান। আর পিছন থেকে রক্ষণ সংগঠনের রিমোট কন্ট্রোল ছিল গোলকিপার রানার হাতে।
দেড় ঘণ্টার বাংলাদেশ অনুশীলনে জোর দেওয়া হল রক্ষণ জোরদার করায়। বিপক্ষের আক্রমণের সময় বাংলাদেশ মিডফিল্ডার ও ডিফেন্ডাররা কোথায় বিপক্ষকে ‘ব্লক’ করবেন, কে কাকে ‘কভার’ দেবেন, এ সবই ইয়াশিনদের হাতে ধরে দেখাচ্ছিলেন বাংলাদেশ কোচ। পাশাপাশি আক্রমণে ওঠার সময় রক্ষণ ও মাঝমাঠ কতটা ও কী ভাবে উঠবে, সেই মহড়াও হল মিনিট বিশেক। শেষ মুহূর্তে হল বিপক্ষের কর্নার, ফ্রি-কিকের সময়ে বল বিপন্মুক্ত করার প্রস্তুতি।
বাংলাদেশের সহকারী কোচ মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ কাইসারসাংবাদিকদের বলেন, ‘ছেলেদের বলে দেওয়া হয়েছে, ভারতকে তাদের নিজেদের ছন্দে খেলতে দেওয়া চলবে না। মঙ্গলবার প্রথম মিনিট থেকেই তাই আমাদের কাজ হবে ওদের ছন্দচ্যুত করা। ম্যাচের দখলটাও নিতে হবে আমাদের।’
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শেষবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত খেলেছিল ১৯৮৫ সালের ১২ এপ্রিল। সেটাও ছিল বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচ। সে ম্যাচে ২-১ জিতেছিল ভারত।
এদিন অনুশীলনের পরে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের গোলকিপার কোচ ববি মিমস বলেছেন, ‘সুনীল ছেত্রীদের ভারত আমাদের চেয়ে এগিয়ে। আর এটাই আমাদের বাড়তি প্রেরণা জোগাচ্ছে।’
১৯৯৫ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ী ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের সদস্য এই প্রাক্তন গোলকিপার আরও বলেছেন, ‘ঘরের মাঠে দর্শকঠাসা স্টেডিয়ামে খেলবে ভারত। সুনীলদের নিয়ে ভারতীয়দের প্রচুর প্রত্যাশার মুখে প্রচন্ড চাপে থাকবে তারা। তাদের আক্রমণ ঠেকাতে আমরা তৈরি রয়েছি।’
(ঢাকাটাইমস/১৪ অক্টোবর/এআইএ)