ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরত চান পিপলসের আমানতকারীরা
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আমানতের টাকা ফেরত চান অবসায়ন হওয়া ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীরা।
সোমবার পিপলস লিজিংয়ের পাঁচজন আমানতকারী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে এই দাবি করেন।
বৈঠকে গভর্নর ছাড়াও ব্যাংকিং রিফর্ম অ্যাডভাইজার এস. কে. সুর চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রহিম ও উপমহাব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ।
আমানতকারীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড আমানতকারী সমিতির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক রানা ঘোষ, সম্পাদক প্রশান্ত কুমার দাস, সদস্য কামাল আহ্মেদ এবং সামিয়া বিনতে মাহবুব।
আমানতকারীরা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিংকে লাইসেন্স দিয়েছে। তাদের অনিয়ম দুর্নীতির দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংককে নিতে হবে। আমরা আমানতকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সের ওপরে ভরসা করে সেখানে আমানত রেখেছি। আমরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি। সবকিছু বিবেচনা করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা আমাদের আমানতের টাকা ফেরত চাই।
বৈঠক শেষে আমানতকারী সমিতির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে টাকা ফেরত পাওয়ার দাবি জানালে খুব দ্রুত টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। তবে এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নির্ধারণ করতে পারেননি তারা। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে অডিট কার্যক্রম শেষ হলেই টাকা ফেরত পাব বলে আশা করছি।
তিনি আরও জানান, ‘আমাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, যদি ২০ কোটি টাকাও উদ্ধার করতে সক্ষম হই তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সে টাকা বিতরণ করে দিব।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারী সামিয়া বিনতে মাহবুব বলেন, ‘আমানতকারীদের টাকায় নিজেদের ব্যবসা গোছাচ্ছে পরিচালকরা। পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স ফাইন্যান্স লিমিটেড এর আমানতকারীদের টাকা মেরে নিজেদের ব্যবসা গোছাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালকরা। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।’
আমানতকারীরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন গভর্নর। একটি অডিট প্রতিষ্ঠানকে পিপলস লিজিংয়ের খুঁটিনাটি দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেঁধে দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে তাদের উপর। তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে আমানতের টাকা ফেরত চান আমানতকারীরা।
সামিয়া বিনতে মাহবুব জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে বলেই আমরা পিপলস লিজিংয়ে টাকা রেখেছি। এমনকি আমানতের বিপরীতে আমরা উপযুক্ত ট্যাক্স দিয়ে আসছি। সুতরাং আমাদের টাকার নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। সে দাবি আমরা প্রথম থেকে করে আসছি এবং টাকা পাওয়ার আগ পর্যন্ত করে যাব। কারণ আমরা এই প্রতিষ্ঠান টাকা রেখে এখন অসহায়।
এদিকে চলতি বছরের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওইদিনই মামলার শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে পিপলস লিজিংয়ের নামে থাকা সব হিসাব ও অনিয়মের দায়ে বহিষ্কৃত ৯ পরিচালকের নামে থাকা শেয়ার ও তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদও একজনকে অবসায়ক নিয়োগের আদেশ দেন আদালত।
জানা যায়, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ৫৭০ কোটি টাকা বের করে নেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা। এর বড় অংশই বের করা হয় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সামসুল আলামিন গ্রুপের নামে। গ্রুপের ২০ প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকজন পরিচালকের নামে অনিয়ম করে বের করা হয় ১৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া পরিচালক মতিউর রহমান, খবির উদ্দিন, ইউসুফ ইসমাইল, বিশ্বজিত কুমার রায়ও নামে-বেনামে টাকা বের করে নেন। পিপলসের সাবেক চেয়ারম্যান এম মোয়াজ্জেম হোসেন প্রতিষ্ঠানটির ১২৩ কোটি টাকার জমি নিজের নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে নিলেও পরে তা ছেড়ে দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এসব অনিয়ম বের হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি থেকে পরিচালক সামসুল আলামিন, নার্গিস আলামিন, হুমায়রা আলামিন ও খবির উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়। আর চেয়ারম্যান এম মোয়াজ্জেম হোসেন স্বেচ্ছায় পদ ছাড়েন।
ঢাকাটাইমস/১৪অক্টোবর/আরএ/এমআর