মাদকের পথ ছেড়ে সফল উদ্যোক্তা

পবিত্র তালুকদার, চাটমোহর (পাবনা), ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৪৭

কলেজজীবনে প্রবেশের পর হঠাৎ করেই মাদক সেবন, মারামারি, আড্ডাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। টেনেটুনে এইচএসসির গ-ি পার হওয়ার পর পড়েন অসুস্থ হয়ে। ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর ধরা পড়ে কিডনি সমস্যা। অবশেষে শরীর থেকে ফেলে দিতে হয় একটি কিডনি। এরপর নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাদকের পথ ছেড়ে ফিরে আসেন। একজন শ্রমিক নিয়ে শুরু করেন লেকার বোর্ড (অটবি) দিয়ে ফার্নিচার তৈরি।

এরপর ঘুরে যায় জীবনের মোড়। নিজের পরিশ্রম, মেধা আর সাহস দিয়ে এখন তিনি একটি শো-রুম ও ফার্নিচার কারখানার মালিক। তার কারখানায় এখন কাজ করে ২২ জন তরুণ শ্রমিক। এখন মাদকের পথ ছেড়ে এবং একটি কিডনি নিয়ে সংগ্রাম করে সফল উদ্যোক্তা তিনি।

বলছি পাবনার চাটমোহর পৌর শহরের নারিকেলপাড়া এলাকার নিয়াজ খানের ছেলে সাজ্জাদের কথা। তার প্রতিমাসে সব খরচ বাদ দিয়ে আয় এখন লাখ টাকারও অধিক।

সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে জানান, ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাস করে চাটমোহর ডিগ্রি কলেজে (বর্তমানে সরকারি) ভর্তি হন। প্রথমে সিগারেট খাওয়া শুরু। এরপর বন্ধু-বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে মাদকে আসক্তি। ২০০১ সালে দ্বিতীয় বিভাগ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। নেশায় আসক্তির বিষয়টি বুঝতে পেরে পরিবারের লোকজন ঢাকায় এক নিকটাত্মীয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। সেখানে একটি বেসরকারি সংস্থায় সেলস ম্যান হিসেবে চাকরি নেন তিনি।

এরমধ্যে কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে সাজ্জাদের। পরে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করে একটি কিডনি শরীর থেকে ফেলে দিতে হয় তার। এরপর বেকার হয়ে পড়ায় হতাশা ঘিরে ধরলে আবারও নেশায় জড়িয়ে পড়েন। এরমধ্যে থানা পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে মাদক মামলাও খেতে হয় তাকে। পরে জামিনে বেরিয়ে আসার পর পরিবার থেকে ৯০ হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে সাজ্জাদকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। শুরু হয় সাজ্জাদের নতুন জীবন। পৌর শহরেই একটি বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস শুরু করেন। অভাব-অনটন দেখা দেয় সংসারে।

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বিভোর সাজ্জাদ কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই একজন শ্রমিক ও নিজে শ্রম দিয়ে লেকার বোর্ড দিয়ে ফার্নিচার তৈরির কাজ শুরু করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাজ্জাদকে। ২০১৫ সালে ‘খান ফার্নিচার’ নামে একটি শো-রুম খুলে বসেন। বাড়তে থাকে ব্যবসার পরিধি। শো-রুমের পাশেই একটি কারখানা তৈরি করেন। এখন তিনি পাঁচ বছরের মধ্যে নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। মাত্র ৯০ হাজার টাকা থেকে এখন তার পুঁজি ৪৫ লাখ টাকারও অধিক। তার কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে ২২ তরুণ শ্রমিকের। মাঠে কিনেছেন ১৬ শতক জমি। সংসারে ফিরেছে শান্তি।

সাজ্জাদ খান বলেন, ‘মাদকে জড়িয়ে পড়ার কারণে জীবন থেকে সোনালি সময়গুলো হারিয়ে গেছে। অনেক কিছুই হারিয়েছি! একসময় সবাই আমাকে বাঁকা চোখে দেখতো। এখন সবাই ভালোবাসে। আমি চাইলেও সেই সময়গুলো আর ফিরে পাবো না! মাদক জীবন ভয়ংকর জীবন। আমি চাই মাদক থেকে সবাই আলোর পথে ফিরে আসুক।’

বাবা নিয়াজ খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে সাজ্জাদ। এক সময় ছেলেকে নিয়ে অনেক অশান্তি ভোগ করেছি। মাদক সেবনের কারণে তার একটি কিডনি নষ্ট হয়। ও (সাজ্জাদ) ভুল পথ থেকে ফিরে আসায় আমরা পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছি।’

সাজ্জাদের ব্যাপারে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নাজিম উদ্দিন মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সাজ্জাদ একসময় মাদক সেবন করতো। যাকে তাকে মারধর করতো। জীবনে অনেক কিছু হারিয়ে সে এখন অনেক বড় ব্যবসায়ী। আসলে ইচ্ছা থাকলে মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহারণ সাজ্জাদ।’

(ঢাকাটাইমস/১৫অক্টোবর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :