‘বেসিকের টাকার হদিস না পাওয়ায় অভিযোগপত্রে দেরি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:১২ | প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:০৫

নয় বছর ধরেও রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের লোপাট হওয়া অর্থের একটা বড় অংশ কোথায় গেছে অনুসন্ধান চালিয়েও বের করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফলে ব্যাংকটির সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেংকারির ঘটনায় দায়ের হওয়া ৫৬ মামলায় অভিযোগপত্রও দিতে পারছে না সংস্থাটি।

মঙ্গলবার দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের একথা বলেন। বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ার‌্যম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন দুদক সচিব।

দীর্ঘ সময় অনুসন্ধান ও তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় সোমবার দুদকের সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপস। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যর্থ হলে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের পদত্যাগ করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তাপসের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সচিব বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্যের কথায় দুদক চেয়ারম্যানের পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না।’

আবদুল হাই বাচ্চুকে কেন আসামি করা হচ্ছে না- প্রশ্নের জবাবে দিলোয়াত বখত বলেন, ‘বেসিক ব্যাংক থেকে আত্মসাৎকৃত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কোথায় ব্যবহার হয়েছে, কিংবা জমা হয়েছে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।’

২০১০ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ৫৬ মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয় দুদক। নিজেদের করা মামলার দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় নয় বছর শেষ হতে চলল। কিন্তু কমিশন এখন পর্যন্ত এই কেলেঙ্কারির কোনো অগ্রগতির খবর দিতে পারছে না।

দুদক সচিব বলেন, ‘অর্থের উৎস, অর্থ কোন জায়গায় ব্যবহার হয়েছে, কোথায় সম্পদ হিসেবে কনভার্ট হয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তি শেষে যাকে আইনের আওতায় আনার তথ্য উপাত্ত পাওয়া যাবে তাকেই চার্জশিটভুক্ত করা হবে।’

এ বিষয়ে ২০১০ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালে রাজধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে কমিশন। সেসব মামলার আসামির তালিকায় ২৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা থাকলেও বাচ্চু বা পরিচালনা পর্ষদের কাউকে সেখানে না রাখায় প্রশ্ন ওঠে সে সময়।

এরপর বিভিন্ন মহলের সমালোচনা এবং উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে পাঁচ দফা বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এরপর এই ইস্যুতে দুদকের কর্মকর্তারাও অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।

তাপসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দুদক সচিব বলেন, ‘আমরা কালকের সংবাদে দেখেছি যে কমিশন শপথ ভঙ্গ করেছে এমন বক্তব্য এসেছে। আমাদের কোনো কমিশনার বা চেয়ারম্যান শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব গ্রহণ করে নাই। এগুলো আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। এর দায়দায়িত্ব কমিশন বা চেয়ারম্যানের ওপর বর্তায় না। সুতরাং এক্ষেত্রে পদত্যাগের প্রশ্ন কেন আসছে বুঝতে পারছি না।’

বেসিক ব্যাংকের তদন্তে বিলম্ব প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘এ টাকাটা যখন চেকে নিয়েছে, উত্তোলন করার পরে টাকা যদি ব্যাংকে রাখা হতো তাহলে উৎস পাওয়া যেত। টাকা নিয়ে একেকজন একেক কাজে ব্যবহার করেছে। সেখানে মানিলন্ডারিং হয়েছে। কাজেই অর্থের উৎস খুঁজতে গিয়ে অনেক সময় বিলম্ব হয়ে থাকে। আপনারা যে মামলার কথা বলেছেন, সেগুলো জটিল প্রকৃতির মামলা।’

‘সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার মধ্যে বেশিরভাগ টাকাই নগদে উত্তোলন হয়েছে। এ টাকাগুলি কোথায় ব্যবহার কিংবা জমা হয়েছে আমাদের কর্মকর্তারা বের করতে পারেন নাই। তদন্ত কর্মকর্তারা টাকার লিঙ্ক খুজেঁ বের করার চেষ্টা করছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা কোথায় গিয়েছে, কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে বের করা সম্ভব না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।’

দুদক আইনে প্রতিটি মামলার তদন্ত সর্বোচ্চ ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। তবে তদন্তের ব্যাপকতা ও জটিলতা বিবেচনায় বাড়তি সময় দেওয়ারও রীতি রয়েছে। গত চার বছরে ৫৬টি মামলায় একাধিক বাদীও পরিবর্তন করা হয়েছে। তাতেও কোনো ফল মেলেনি। যে কারণে কমিশন বাচ্চুকে বাঁচানোর চেষ্টা কেেরছ কি না সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।

আইনে নির্ধারিত ১৮০ দিনের মধ্যে মামলাগুলোর তদন্ত শেষ না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে গত বছর ২৩ মে এই কেলেঙ্কারি মামলার সব তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেছেন উচ্চ আদালত। আর সেদিন আদালত ৩০ মে বেসিক ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারির ৫৬ মামলার সব তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয়। ধার্য তারিখে তদন্ত কর্মকর্তাদের মামলার নথিপত্র, সিডিসহ আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর আরেকটি মামলা করে দুদক। রাজধানীর বংশাল থানায় দায়ের করা ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সাত কোটি ৮৫ লাখ ৩২ হাজার ৯৮৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। ২০১০ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবরের মধ্যে এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটলেও সেখানেও বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/১৫অক্টোবর/এনআই/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :